Search Suggest

নারী নির্যাতন হলেই কি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা যায়?

নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ নামে একটি আইন প্রনয়ন করেন। যদিও এই আইনটি পাশ হওয়ার পর এর ব্যবহারের তুলনায় অপব্যবহার হয়েছে বেশি তথাপিও এমন একটি কঠোর আইনের কারণে আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার কিছুটা হলেও কমেছে বটে। আইনটির শিরোনাম দেখে সহজেই যে কেউ বলে দিতে পারেন যে, নারী ও শিশু নির্যাতন হলেই এই আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু আসলেই কি বিষয়টি এরকম? চলুন তো দেখে আসা যাক আইনটি এ সম্পর্কে কি বলে!

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ নারী বলতে যেকোন বয়সের নারী, শিশু বলতে ষোল বছরের নিচের যেকোন ব্যক্তি এবং নবজাতক শিশু বলতে অনূর্ধ্ব চল্লিশ দিন বয়সের কোন শিশুকে বোঝানো হয়েছে। নারী ও শিশুদেরকে নির্যাতন করা হলে  এই আইনের অধীনে ভুক্তভোগী প্রতিকার পেতে পারেন। কিন্তু এই আইনে নির্যাতন বলতে আসলে কি বোঝানো হয়েছে তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে এই আইনের ভিতরে গেলে কোন কোন বিষয়গুলি নারী ও শিশু নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়।এই আইনের অধীন নির্যাতন বলতে বোঝায়-


দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা মৃত্যু ঘটানো বা আহত করা

এই আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে যদি কোন ব্যক্তি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন বা আহত করেন তাহলে তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হবে এবং অর্থদন্ডও আরোপ করা হবে। এই ধার হতে এটা স্পষ্ট যে, কোন নারী ও  শিশুকে দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা মৃত্যু ঘটানো বা আহত করা নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে।


নারী ও শিশু অপহরণ করা

এই আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে যে যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৫-এ উল্লিখিত কোন অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে অপহরণ করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অন্যুন চৌদ্দ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন। এই ধারা হতে এটা স্পষ্ট যে, নারী ও শিশু অপহরণ করা নারী ও শিশু নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে।

মুক্তিপণ আদায়

এই আইনের 8 ধারায় বলা হয়েছে যে যদি কোন ব্যক্তি মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে আটক করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন। এই ধারা হতে এটা স্পষ্ট যে, নারী ও শিশুকে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় নারূ ও শিশু নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে।

এছাড়া ৯, ৯ক,  ১০, ১১ ও ১২ ধারাগুলি হতে এটা স্পষ্ট হয় যে, ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা, সম্ভ্রমহানীর কারণে নারী ও শিশুর আত্মহত্যা, যৌন পীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো বা নির্যাতন করা এবং ভিক্ষাবৃত্তি বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রির উদ্দেশ্যে কোন শিশুর অঙ্গ বিনষ্ট বা বিকলাঙ্গ করা বা বিকৃত করা ইত্যাদি নারী ও শিশু নির্যাতনের আওতায় পড়ে।


এখন প্রশ্ন হলো যে, যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত কারণগুলো ব্যতীত অন্য কোন কারণে কোন নারী বা শিশুকে হত্যা করেন, নির্যাতন করেন বা হত্যা বা নির্যাতনের চেষ্টা করেন তাহলে কি  ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাবেন? উত্তর হলো অবশ্যই পাবেন না। কারণ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী কেবলমাত্র উপরোক্ত অপরাধ গুলো সাধিত হলেই এই আইনের আওতায় প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। অন্য কোন কারণে নির্যাতন করা হলে সেক্ষেত্রে দন্ডবিধি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য আইনের আওতায় প্রতিকারের জন্য ভুক্তভোগীকে পদক্ষেপ নিতে হয়।
কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য বেধড়ক মারধর করেন এবং গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন তাহলেও ঐ স্ত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী কোন প্রতিকার পাবেন না যদিও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। এক্ষেত্রে ঐ ভুক্তভোগী নারী প্রতিকার হলো দন্ডবিধি আইনে।
আমাদের আইনের শিরোনামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এর কথা বলা হয়েছে। সেই অর্থে নির্যাতন হওয়া মাত্রই নারী ও শিশু এই আইনের অধীন প্রতিকার পেতে পারতেন। যদি নির্যাতনের শীকার  হয়েও ভুক্তভোগী নারী ও শিশুকে অন্য আইনে প্রতিকার পাওয়ার জন্য ছুটতে হয় তাহলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর এই শিরোনাম হাস্যকর নয় কি?
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যে ঘরে।

৩টি মন্তব্য

  1. যদি কোন মেয়ে ডিভোর্স লেটার হাতে পেয়ে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে পাল্টা তার স্বামীর নামে মিথ্যা যৌতুক মামলা দেয় তাহলে কি তদন্ত হওয়ার আগেই উক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়? আর যদি হয়ে থাকে তাহলে কি সহজে জামিন পাওয়া যায়?
    1. Borno Chora আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন। আপনার যদি আইন সম্পর্কিত আরো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের 'প্রশ্ন করুন' বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার প্রশ্ন রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।
  2. যৌতুকের মামলা দায়ের এর পর তিন রকম আদেশ হতে পারে। ১। যদি সমনের আদেশ দেওয়া হয়, তাহলে আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। ২। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারীর আদেশ। ৩। তদন্তের আদেশ। তদন্তের আদেশ হলে তদন্ত শেষে পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করে। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট দরকার মনে করলে সমনও দিতে পারেন গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশও দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সহজেই জামিন হওয়ার কথা।