Search Suggest

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কি কেন ও কিভাবে করবেন?

খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা হলো কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করা অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে কোন কাজ সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমতা প্রদান করাই হলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। অনেকেরই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে পাওয়ার অব অ্যাাটর্নি দলিল সম্পাদন করতে হয়। বিশেষ করে যারা বিদেশে থাকেন বা বিদেশে যাবেন। অথচ দেশে তার সম্পত্তি রয়েছে। সে সকল সম্পত্তি দেখাশোনা করা বা বেচাবিক্রি করার মত লোক দেশে নাই। ধরুন আপনি একজন প্রবাসী। আপনার দেশে কিছু সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু আপনি এই জমি দেখাশোনা কিংবা বিক্রির জন্য নিজে বাংলাদেশ যেতে পারছেন না। সেই ক্ষেত্রে আপনি ইচ্ছা করলে যে কাউকে জায়গাজমি দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারেন। শুধু জমিজমা-সংক্রান্ত নয়, যেকোনো কাজ আপনার অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন।


যে আইন মোতাবেক পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদিত হয়
বাংলাদেশে ১৮৮২ সালের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অ্যাক্ট রহিত করে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২’ নামে নতুন আইন প্রবর্তন হয়েছে। এই আইন এসআরও নং ১৯৭-আইন/২০১৩, ২৬ জুন, ২০১৩ দ্বারা ১ জুলাই, ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর হয়। এই আইনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন কোনো দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্ণিত কার্য-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন।’ প্রায় অধিকাংশ বিষয়ের ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পণ করা গেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি করা যায় না। যেমন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫-এর বিধি ৪ অনুযায়ী উইল সম্পাদন বা দাতা কর্তৃক সম্পাদিত উইল নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে দাখিলকরণ, দত্তক গ্রহণের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন, দান ও হেবা সম্পর্কিত ঘোষণা সম্পাদন, ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন এবং সরকার কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ঘোষিত অন্য প্রকার দলিল সম্পাদন। 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনের ক্ষেত্রে যা জানা জরুরী
কোনো দায়িত্ব বা ক্ষমতা অর্পণের জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা করতে হলে, তা হতে হবে লিখিত। এটি একটি আইনগত দলিল। এই দলিলের মাধ্যমে যাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো, তিনি মূল মালিকের পক্ষে কোনো সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, খাজনা আদায় ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। এতে মোক্তারনামা দলিলে এসব বিষয়ে শর্ত স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যে, তাঁকে কী কী ক্ষমতা দেওয়া হলো; অর্থাৎ তিনি কী কী করতে পারবেন কিংবা পারবেন না। সাধারণত মোক্তারনামা দুই প্রকার। একটি হচ্ছে সাধারণ মোক্তারনামা, যাকে আমমোক্তারনামা বলা হয়। আরেকটি হচ্ছে খাস মোক্তারনামা, যা বিশেষ ধরনের। সাধারণত মোক্তারনামা মোক্তারদাতার পক্ষে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু বিশেষ মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য। সাধারণত যেসব আমমোক্তারনামা জমিজমা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নিতে হয়। কিন্তু জমিজমা-সংক্রান্ত মোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করাতে হবে। না হলে এর আইনগত ভিত্তি থাকে না। এই রেজিস্ট্রেশন মোক্তারনামা দলিলটি সম্পাদনের তিন মাসের মধ্যে করতে হবে। কোনো মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার ক্ষেত্রেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে। দলিলের ধরন বুঝে নির্দিষ্ট টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তা সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন দলিল কত টাকার স্ট্যাম্পে করতে হবে, তা জেনে নিতে হবে। বর্তমানে যেকোনো দলিল হস্তান্তর, ক্রয়-বিক্রয়, উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।


প্রবাসীরা যেভাবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করবেন


বিদেশে বসবাস বা অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’-সংক্রান্ত বাংলাদেশের আইন-কানুন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে আইনটি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানেন এমন কাউকে দিয়ে সঠিকভাবে লিখে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। এর পর পাওয়ার অব অ্যাটর্নিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সহকারী সচিব কর্তৃক সত্যায়ন বা প্রমাণীকরণ করাতে হবে। এর পর তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে। এই পর্যায়ে ওই দলিলের একটি ক্রমিক নম্বর ও তারিখ নির্দিষ্ট হবে। এই নম্বরটিই ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের নম্বর।পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে ব্যক্তিকে মোক্তার করা হচ্ছে, তিনি কতটা বিশ্বস্ত, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। অনেক সময় দেখা যায়, মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গাজমি হস্তান্তর বা বিক্রি করে দেন। তখন মূল মালিক বিপদে পড়েন। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও কম হয় না। তাই দলিলের শর্তগুলো স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে। যাকে ক্ষমতা দেওয়া হলো, তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখাও মালিকের দায়িত্ব। 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিল করা যায় কিনা
হ্যা। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল বাতিল করা যায়। যেকোনো সময় সাধারণ মোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিল বা প্রত্যাহার করা যায়। বাতিল করতে চাইলে যে অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল, সেই জেলার রেজিস্ট্রার বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া নোটারির মাধ্যমে করা মোক্তারনামা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমেই বাতিল করতে হবে। সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবসানের ক্ষেত্রে দাতা ক্ষমতা গ্রহীতাকে রেজিস্টার্ড ডাকের মাধ্যমে ৩০ দিনের নোটিশ দিয়ে প্রদত্ত ক্ষমতার অবসান ঘটাতে পারবে। তা ছাড়া ক্ষমতা গ্রহীতাও একইভাবে মালিককে ৩০ দিনের নোটিশ সাপেক্ষে অ্যাটর্নির দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারে। এ ছাড়া মোক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। একইভাবে নির্দিষ্ট কাজের জন্য করা মোক্তারনামা ওই কাজের সমাপ্তিতে বাতিল বলে গণ্য হবে। যৌথ ক্ষমতার মোক্তারনামার পক্ষদের একজনের মৃত্যুতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। মোক্তারনামা দাতা কোনো মোক্তারনামা বাতিল করতে ইচ্ছুক হলে যে রেজিস্ট্রি অফিসে মোক্তারনামাটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল, সে স্থানের জেলা রেজিস্ট্রারের বরাবরে মোক্তারনামা রদের জন্য আবেদন করতে হবে। মোক্তারনামার ওপর তিনি ‘রদ করা’ কথাটি লিখে দেবেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই রেজিস্ট্রার তা সংশোধন করবেন। রেজিস্ট্রি অফিসার মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন পাওয়ার পর, তার জেলার সব রেজিস্ট্রার অফিসে বা অন্য কোনো জেলার সদর অফিসকে বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। নোটিশ জারির ডাক টিকিটের খরচ আবেদনকারীকেই বহন করতে হবে। 

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন মোতাবেক বিরোধ নিষ্পত্তি
রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি থেকে উদ্ভূত যেকোনো বিরোধের ক্ষেত্রে পক্ষগণ প্রথমে নিজেদের মধ্যে আপসে মীমাংসার চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলে একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে তৎপরতা চালাবেন। এখানেও ব্যর্থ হলে পক্ষদ্বয় আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। কোনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবসান বা বাতিলের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধি ১২ ও ১৩ অনুযায়ী পাওয়ারদাতা বা গ্রহীতা বা তাদের বৈধ প্রতিনিধি বা অন্য কোনো স্বার্থযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক বিধিমালায় উল্লিখিত তফসিল ‘খ’-তে নির্ধারিত ফরম মোতাবেক একটি নোটিশ, সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ১ নম্বর বইয়ে নথিভূক্ত করার জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের উদ্দেশ্যে দাখিল করবেন।


সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!

আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

৬টি মন্তব্য

  1. Smart writing. It will be much helpful if you attach a sample of power of atttorney. Thanks
    1. আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আমাদের ড্রাফটিং বিভাগে অনেক ড্রাফট পাবেন।
  2. সাধারণ Power of attorney holder কি জমির মালিকের হয়ে ( land owner) জমি অন্য কোন ব্যাক্তিকে Registry করতে পারেন?
    1. আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। যদি জমির মালিক অর্থাৎ পাওয়ারদাতা পাওয়ার গ্রহিতাকে জমি রেজিষ্ট্রি করার পাওয়ার দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পারবেন। এক্ষেত্রেু কিকি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে সেটাই মুখ্য বিষয়। ধন্যবাদ।
  3. কোন প্রশ্নের উত্তর দেবেন কি ?
  4. খুব ভাল লেখেছেন