Search Suggest

আদালত পাড়ার কিছু অপ্রিয় সত্য কথা

রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হলো বিচার বিভাগ। অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত এবং ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত মানুষদের জন্য কোর্ট কাচারী হলো ন্যায় বিচার প্রাপ্তির শেষ আশ্রয় স্থল। এখানে মন্ত্রি, এমপি, সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ ধণী, গরীব, ক্ষমতাবান, ক্ষমতাহীন, সন্ত্রাসী, গুন্ডা, চোর, ডাকাত, সাধু, ইমাম, মোয়াজ্জিন, সৎ লোক, অসৎ লোক, নারী, পুরুষ সহ বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন ধরণের মানুষ আসেন বা তাদেরকে নিয়ে আসা হয় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য।সকলেরই উদ্দেশ্য হলো ন্যায় বিচার প্রাপ্তি।

এখানে অপরাধের বিচার হয়, অধিকারের প্রশ্ন নির্ধারণ করা হয়, ভাঙ্গা পরিবার জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। সম্মানিত বিচারকগণ অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করেন, অধিকার বঞ্চিতদের অধিকার ফিরিয়ে দেন, ঘর হারা নারীর ঘর ফিরিয়ে দেন, ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।আর বিচারকের এমন গুরু দায়িত্ব পালনে যাদের ভূমিকা সর্বাধিক এবং যাদের সাহায্য ছাড়া বিচারকাজ চালানো অসম্ভব তাদেরকে আমরা আইনজীবী, উকিল বা আ্যাডভোকেট হিসেবে জানি।আইনজীবীরা ঘটনাগত এবং আইনগত বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাদের স্ব স্ব মামলা প্রমাণের জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে থাকেন এবং বিচারক মহোদয়গণ উক্ত যুক্তিতর্ক শ্রবণ করে তাঁদের রায় দেন।বিচারকায়্যে যে পেশার এত গুরুত্ব সেই পেশা কে অবশ্যই মহৎ বলা যায় এক বাক্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অনেক স্বপ্ন, আশা, আকঙ্খা নিয়ে আইনের ছাত্ররা ছুটে আসেন কোর্ট পাড়ায় আইনজীবী হওয়ার জন্য। কিন্তু শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকালেই কি আইনজীবী হওয়া যায়? অবশ্যই না। আইনজীবী হতে হলে তিন স্তরের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তার পর নামের পাশে আইনজীবী লেখার অধিকার জন্মায়।আইনজীবী হওয়ার আগে বা পরে একজন আইনজীবীকে সর্বস্তরে হয়রাণী বা অসম্মানের শিকার হতে হয়।যদিও আমরা আইন পেশাকে রাজকীয় পেশা বা সম্মানজনক পেশা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করি।একজন আইনজীবীকে কোর্ট পাড়ায় কয়েক জায়গায় হয়রানী বা অসম্মানের শিকার হতে হয় যেটা অনাকাঙ্খিত এবং অনভিপ্রেত বটে।


যখন কেউ থানায় মামলা দাযের করেন তখন সেই মামলা দায়েরের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে থানা কর্তপক্ষ আদালতে পাঠিয়ে দেন। মামলা আদালতে আসলে আসামীপক্ষ ছুটে আসেন আইনজীবীর কাছে। শুরু হয়ে যায় আইনজীবীর আইনি লড়াই। আইনজীবী নিজে থেকেই কোন মামলা আসামীর হয়ে লড়তে পারেন না যতক্ষন না আসামী আইনজীবীকে লিখিত ক্ষমতা প্রত্র প্রদান করে। এই লিখিত ক্ষমতাপত্র আদালত পাড়ায় ওকালতনামা হিসেবে সমাধিক পরিচিত।

আইনজীবীর ক্ষমতাপত্রে সই করতে বিড়ম্বনা


আসামী কোন মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতের হাজতখানায় আসলে সেখান থেকে পুলিশের সহায়তায় ওকালতনামায় আসামীর সই নিতে হয়। এই সই নিতে ৫০ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ করতে হয়। আবার কারাগার থেকে সই নিতে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হয়। এই টাকা সরকার নির্ধারিত কোন ফি নয়। কোন আইনজীবী যদি মনে করেন তিনি টাকা না দিয়েই আসামীর সই নিবেন তাহলে সেটা সম্ভব হয় না। উল্টো তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

পুট আপ দিতে হয়রানি

সারাদেশের আদালতে প্রতিদিনই কারাবন্দি আসামীদের জামিনের আবেদন করা হয়। জামিনের শুনানীর জন্য আইন অনুযায়ী আদালতের অনুমতি নিতে হয়। এটাকে আদালতের ভাষায় পুট আপ বলে। পুট আপ জমা দিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মচারী, পিয়ন, উমেদারদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা বখশিশ দিতে হয়। যদি কোন আইনজীবী ঐ টাকা না দেন তাহলে পরবর্তীতে ঐ আদালতে অন্যকোন কাজে তাদের কাছে সহায়তা চাইলে হয়রানীর শিকার হতে হয়।

জামিননামা জমা দিতে হয়রানী

আসামীর জামিন হওয়ার পর শুরু হয় আরেক খেলা। জামিন হওয়ার পর কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করে আসামীর জামিননামা কারাগারে পাঠাতে হয়। এ ক্ষেত্রে যদিও প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করতে আইনত কোন টাকা পয়সা লাগে না কিন্তু জামিননামা দাখিল করতে গিয়ে একজন আইনজীবীকে আদালতের জি আর শাখায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে আদালতের পেশকার পিয়ন কে মামলা ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ করতে হয়। উক্ত টাকা যদি কোন আইনজীবী না দেন তাহলে জি আর শাখার কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ক্ষেত্র বিশেষে আদালতের কর্মচারীরা ঐ আইনজীবীর উপর চড়াও হয়ে তাকে নানা ভাবে হয়রানী করে থাকেন।

মামলা দায়ের করতে হয়রানী

ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে আদালতের পেশকার পিয়নকে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে মামলা ভেদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া লাগে। এবং দেওয়ানী মামলা দায়ের করতে গেলে কয়েক স্তরে সেরেস্তাদার, পিয়ন সহ অন্যান্য কর্মচারীদেরকে নূন্যতম হাজার টাকা গুনতে হয়। এসব টাকা না দিলে সেরেস্তাদার, পিয়ন সহ জড়িত কর্মচারীরা আইনজীবীর সাথে নানা দূর্ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া পরবর্তীতে তাদের কাছে কোন কাজের জন্য অনুরোধ করলে তারা হয়রানী করেন। টাকা দিলে যে কাজটি পাচ মিনিটে সম্পন্ন করে দেন সেই একই কাজ টাকা নিলে কয়েক ঘন্টা বা ক্ষেত্র বিশেষে কয়েকদিন পরে সম্পন্ন করেন আদালতের কর্মচারীরা।

সব মোয়াক্কেল ধনী হয় না

আদালত পাড়ায় আইনজীবীদের নিকট হতদরিদ্র থেকে শুরু করে কোটিপতিরাও আসেন। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গরীব মোয়াক্কেলের কাজ করতে গিয়ে। গরীব মোয়াক্কেলগণ আইনজীবীকে যথাযত ফি দিতে পারেন না। তবুও তাদের মামলা নিতে হয়। যেহেতু ফি কম পাওয়া যায় তাই সে ভাবে আদালতের কর্মচারীদেরকে বখশিষ দিয়ে সন্তুষ্ট করা সব সময় সম্ভব হয়না। কিন্তু এই বিষয়টিই আদালতের এসব কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ বুঝতে চান না। তারা মনে করেন মোয়াক্কেল মাত্রই আইনজীবীরা অনেক ফি নিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র তার ঠিক উল্টো।

দায়ী কে

এখন একটা প্রশ্ন সামনে আসতে পারে যে, এসবের পিছনে দোষ বা অপরাধ কার? উপরের লেখা পড়ে যে কেউ হয়তো এক বাক্যে বলে দিতে পারেন যে, আদালতের ঐ সব অসাধু কর্মকর্তা বা কর্মচারীরাই দায়ী। কারণ তারা বেতন পান। কাজ করেন। তারপরও উপরি কিছু পাওয়া বা জোর করে জিম্মি করে টাকা আদায় করা রীতিমত অন্যায়। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আদালতের সংশ্লিষ্ট ঐ সাব কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের দোষ দেওয়া যায় না। এর পিছনে অনেক অসচেতন আইনজীবীরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। যারা টাকা পয়সা দিয়ে বখশিষের এই প্রথাটাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। সকল আইনজীবীরা যদি সচেতন হতেন এবং আইন অনুযায়ী এবং নিয়ম মেনে মামলা পারিচালনা করতেন তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। একথা সত্য যে, আদালত পাড়ায় অনেক ধরণের মোয়াক্কেল আসেন এবং তাদের একেকজনের চাহিদাও একেক রকম। তাই তাদের সকল চাহিদা মেটাতে গিয়ে বে আইনী পথ বা আইন বহির্ভূত কোন পথ বেচে নেওয়া উচিত নয়। আইন অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করলে সকল আইনজীবীর সম্মান অক্ষুন্ন থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।

        আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

৪টি মন্তব্য

  1. আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যই আমাদের চলার পথের পাথেয়। ধন্যবাদ। মন্তব্যের জন্য।
  2. ধন্যবাদ গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
  3. আশা করছি ভবিষ্যতে আরো ভাল লেখা উপহার দিতে পারবো
  4. আদালত পাড়ার কিছু অপ্রিয় সত্য কথা।