Search Suggest

তালাকের সময়ই কি দেনমোহরের টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে? জেনে নিন সঠিক নিয়ম

অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে তালাকের সময় দেনমোহরের সম্পুর্ন টাকা পরিশোধ করতে হবে কিনা। যদি তালাকের সময় দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হয় তাহলে তার নিয়ম টা কি?  এই বিষয়টিই আজকে বোঝানোর চেষ্টা করবো। 

প্রথমেই একটা বিষয় ক্লিয়ার করি। সেটা হচ্ছে  তালাক দেয়ার সাথে দেনমোহরের কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই। আমি যে টা বোঝাতে চাচ্ছি সেটা হলো দেনমোহরের টাকা স্ত্রীর হক। এই হক বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন বা বিয়ের মজলিশে বা বিয়ের পরে যেকোনো সময় আদায় করা স্বামীর জন্য আবশ্যক। দেনমোহরের টাকা যদি বিয়ের পূর্বে বা বিয়ের মজলিশে পরিশোধ করা না হয় তাহলে দাম্পত্য জীবন চলাকালীন সময়ে স্ত্রী যখনই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করার দাবি জানাবেন তখনই স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে। সেই অর্থে আমরা বলতে পারি যে তালাকের সাথে দেনমোহরের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তালাকের অনেক আগেই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা। 

এখন আসি মুল কথায়। দেনমোহরের টাকা যদি বিয়ের পূর্বে বা বিয়ের মজলিশে বা বিয়ের পরে দাম্পত্য জীবন চলাকালীন সময়েও পরিশোধ করা না হয় তাহলে অবশ্যই তালাকের মজলিসে পরিশোধ করে দেয়া উচিৎ। এটা হচ্ছে খোলা তালাকের খেত্রে। আর একতরফা তালাকের ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ এর সাথে মানিগ্রাম করে স্ত্রীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ। স্ত্রী যদি গ্রহণ না করেন সেক্ষেত্রে টাকা আবার আপনার নিকট ফেরত প্রদান করা হবে। পরে যে কোন সময় দিয়ে দিতে পারবেন। 

তবে অনেকের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।  সেটা হলো তালাকের সময় দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করলে তালাক প্রদান করা যায় না। দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না বিধায় অনেকে তালাক প্রদানের ইচ্ছা থাকা সত্বও  তালাক দিতে পারেন না। বিষয়টি আসলে এরকম না। আপনার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে অবশ্যই তালাকের আগে বা তালাক প্রদানের সময় দেনমোহরের টাকা অবশ্যই পরিশোধ করে দিবেন।

কিন্তু যদি তালাকের মহুর্তে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করার মত সামর্থ্য আপনার না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রেও কোন সমস্যা নেই আপনি তালাক দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে যেহেতু আপনি দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেন নি সেহেতু আপনার স্ত্রী দেনমোহরের টাকা পরিশোধ এর জন্য আদালতে দেনমোহর আদায়ের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন। তখন আদালতে উপস্থিত হয়ে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে মোকদ্দমায় প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন। যদি আপনি আপনার স্ত্রীর দেনমোহরের দাবি মেনে নেন তাহলে সোলেনামা দাখিল করে এককালীন টাকা জমা দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অথবা স্ত্রীর দাবিদাওয়া না মেনে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আদালত রায় দিলে উ্ক্ত রায় মেনে নিয়ে রায় মোতাবেক এককালীন দেন মোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। অথবা উক্ত রায় কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করতে পারবেন। যদি আপীলও দায়ের না করেন বা টাকাও পরিশোধ না করেন তাহলে আপনার স্ত্রী উক্ত রায় বা ডিক্রি বাস্তবায়নের জন্য আদালতে পূণরায় ডিক্রি জারী মোকদ্দমা দায়ের করবেন। উক্ত ডিক্রি জারী মোকদ্দমায় হাজির হয়ে আপনি এককালীন বা কিস্তিতে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। আর যদি তখনও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী হতে পারে এবং এবং আপনাকে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা হতে পারে। মনে রাখবেন অবশ্যই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তালাক যেই প্রদান করুক না কেন স্বামী দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য।



  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন