বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী-জেনে নিন বিস্তারিত (পর্ব -০১)

এলসি কি কেন ও কিভাবে খুলবেন

বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করা লাগে। তার মধ্যে একটি হলো ব্যাংকে এলসি খোলা। প্রথম পর্বে আমরা জানবো এলসি কি, কেন ও কিভাবে খোলা হয়।

ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাজার থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানী করে থাকেন। দেশীয় বাজারে পন্য কেনাবেচায় দেশীয় ‍মুদ্রা বা চেক ব্যবহৃত হয় এবং ক্রেতা বিক্রেতা পরস্পর সাক্ষাতের সুযোগ পায়। ক্রেতা পণ্য দেখে শুনে বিক্রেতার নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে বিক্রেতাকে সরাসরি বা চেকের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু বৈদেশিক পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে দেশীয় মূদ্রায় লেনদেন সম্ভব হয় না এবং ক্রেতা বিক্রেতার পরস্পর সাক্ষাতেরও সুযোগ থাকে না।

যেহেতু ক্রেতা বিক্রেতাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না বা বিক্রেতা ক্রেতাকে চেনেন না সেক্ষেত্রে আমদানীকৃত পণ্য দেশে আসার পর ক্রেতা পণ্য বুঝে নিলেও মূল্য পরিশোধ নাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্রেতা চালাকি করে বিক্রেতাকে ঠকাতে পারেন আবার বিক্রেতা মানে রপ্তানীকারকও সঠিক পণ্য না দিয়ে খারাপ পণ্য বা নিম্ন মানের পণ্য দিয়ে ক্রেতা বা আমদানীকারককে ঠকাতে পারেন। আমদানীকারক বা রপ্তানীকারকের এমন অসৎ উদ্দেশ্য প্রতিহত করার জন্যই এলসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলসি এর পূর্ণরূপ লেটার অব ক্রেডিট বা বংলায় ঋণ মঞ্জুরীপত্র। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম ঋণপত্র বা (লেটার অব ক্রেডিট) এলসির নীতিমালার একটি হচ্ছে, ‘ব্যাংকস ডিল উইথ ডকুমেন্টস অ্যান্ড নট উইথ গুডস, সার্ভিসেস অর পারফরম্যান্স টু হুইচ দ্য ডকুমেন্টস মে রিলেট’ (ব্যাংক কেবল ডকুমেন্ট নিয়ে কারবার করবে, সেই ডকুমেন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য, সেবা কিংবা ক্রিয়াকর্ম নিয়ে নয়)।

আমদানীকারক যখন কোন বৈদেশিক পণ্য আমদানী করতে চায় তখন আমদানীকারকের পক্ষে তার ব্যাংক রপ্তানীকারকের পণ্যমূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তাস্বরূপ লেটার অব ক্রেডিট ইস্যু করে। ব্যাংক আমদানীকারকের পক্ষে রপ্তানীকারকের অনুকূলে এল সি খোলার প্রাক্কালে উক্ত এল সি মূল্যের সম্পূর্ণ বা একটি অংশ নগদ অর্থে আমদানীকারকের নিকট হতে মার্জিন হিসাবে সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে পণ্য খালাসের সময় আমদানীকারক অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করে অথবা ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে। ব্যাংক এরূপ এল সি খোলার জন্য আমদানীকারকের নিকট হতে নগদে কমিশন বা সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে থাকে। 

কয়েকটি স্তর পার করে এলসি খুলতে হয়। নিচে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো-

প্রথম ধাপঃ এলসি খোলার প্রথম ধাপ হলো কোম্পানীর ট্রেড লাইসেন্স, টিন রেজিষ্ট্রেশন, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন ইত্যাদি যথাযথভাবে করে নেওয়া। আইআর সি (ইমপোর্ট রেজি: সির্টিফিকেট) করা।

দ্বিতীয় ধাপঃ উপরের প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ  করার পর কোন ব্যাংক এ কোম্পানীর নামে একাউন্ট করতে হবে।

তৃতীয় ধাপঃ তারপর যে পন্য আমদানী করা হবে তার ইনভয়েস সংগ্রহ করতে হবে। ইনভয়েস মানে পণ্যের বিবরণ ও মূল্য তালিকা। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়,  আপনি কিছু গাড়ি আমদানী করবেন জাপান থেকে। এখন যে কোম্পানী থেকে গাড়ি আমদানী করবেন সে কোম্পানীর বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছে গিয়ে দাম দর ঠিক করে একটা ডকুমেন্ট নেবেন। এটাই ইনভয়েস। আর সে কোম্পানীর যদি বাংলাদেশ প্রতিনিধি না থাকে তাহলে সে কোম্পানীতে সরাসরি মেইল করে দাম ঠিক করে ডকুমেন্ট আনাতে হবে। তখন এটাকে বলা হয় পি আই বা প্রফরমা ইনভয়েস। এতে পণ্যের বিস্তারিত, দাম, পোর্ট অব শিপমেন্ট এসব তত্রাদি থাকে।

চতুর্থ ধাপঃ চতুর্থ ধাপে ব্যাংক থেকে এলসিএ (লেটার অব ক্রেডিট এপ্লিকেশন) ফর্ম সংগ্রহ করে ইনভয়েস/পিআই অনুযায়ী তা পূরন করে ব্যাংক এ জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

পঞ্চম ধাপঃ পঞ্চম এবং সর্বশেষ ধাপ হলো এলসি মার্জিন জমা দেয়া । প্রথম দিকে ব্যাংক এ পুরো টাকাটাই জমা দিতে হবে। ধরা যাক এলসি ভ্যালূ ১০,০০০ ডলার। ব্যাংক এ আপনাকে ৮ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। তবে আস্তে আস্তে ব্যাংকের সাথে ব্যবসা বাড়লে তখন ১০-২০% মার্জিন দিয়ে এলসি খোলা যাবে। টাকার সাথে অন্যান্য কিছু ডকুমেন্টও দিতে হবে। যেমন : - আপনার কোম্পানীর সব কাগজ (ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ভ্রাট, আইআরসি) - ইনডেন্ট/পিআই এর ৩/৪ টি কপি। - রপ্তানীকারক কোম্পানীর ব্যাংক ক্রেডিট রিপোর্ট - ইন্সুরেন্স কভার নোট (যে কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ইনভয়েস দেখিয়ে ফি দিয়ে এটা নিত হবে)।

উপরে বর্ণিত ধাপগুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যাংক নিম্নলিখিত বিষয়গুলি যাচাই বাচাই করবে-

নৌ বীমাপত্রের আমদানী পণ্যের বর্ণনা, পণ্য বোঝাইকরণের বন্দরের নাম, পণ্য খালাসের বন্দরে নাম এবং জাহাজীকরণের বন্দরের নাম, পণ্য খালাসের বন্দরের নাম এবং জাহাজীকরণের বর্ণিত পদ্ধতি যথাযথ বা সঠিক কিনা;

ক. বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে অনুমোদনযোগ্য নয় এরুপ কোন ধারা বা শর্ত এলসিতে রয়েছে কিনা;

খ. ক্রয় চুক্তি এবং ঋণপত্রে প্রস্তাবিত আমদানী পণ্যের মূল্য অভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে কিনা;

গ. আবেদনে আবেদনকারী স্বাক্ষর সঠিক কিনা;

ঘ. বর্ণিত পণ্য আমদানী নীতি অনুসারে আমদানী করা যায় কীনা;

ঙ. এলসিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কতর্ৃক ইসু্যকৃত ইন্ডেন্টরের রেজিষ্ট্রেশন নং, ক্রয় চুক্তিপত্র বা প্রোফরমা ইনভয়েস নং বর্ণিত হয়েছে কিনা;

চ. জাহাজীকরণের সর্বশেষ তারিখ, যা লাইসেন্সীং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত তা এলসিতে বর্ণিত আছে কিনা।
বিক্রয় চুক্তি অনুসারে প্রয়োজনীয় বীমা কভারেজ আছে কিনা;

এলসি ওপেন হওয়ার পর ব্যাংক থেকে এলসির একটি কপি আপনাকে দেওয়া হবে এবং মুল কপিটা রপ্তানীকারক কোম্পানীর নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে

১টি মন্তব্য

  1. ধন্যবাদ
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.