এন আই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার নালিশী দরখাস্ত সংশোধন করা যায় কিনা

আদালতে সাধারণত দুই ধরণের মামলা দায়ের করা হয়। একটি  দেওয়ানী মোকদ্দমা অন্যটি ফৌজদারী মামলা। দেওয়ানী মোকদ্দমা আরজি দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয় এবং বিবাদী সমন পেয়ে হাজির হয়ে উক্ত আরজির জবাব প্রদান করে থাকেন। দেওয়ানী মোকদ্দমার আরজি ও জবাবকে একত্রে প্লিডিংস বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে ফৌজদারী মামলা  আদালতে (থানার মামলা ব্যতিত) নালিশী দরখাস্ত দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয়।


দেওয়ানী মোকদ্দমার প্লিডিংস সংশোধনের বিধান থাকলেও ফৌজদারী মামলার নালিশী দরখাস্ত সংশোধনের জন্য আইনে কোন সুযোগ রাখা হয়নি অর্থ্যাৎ দেওয়ানী মামলার প্লিডিংসে ভুল ধরা পড়লে সংশোধন করে উক্ত ভুল ঠিক করার উপায় আছে। এমন সুযোগ ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে নেই। তাই ফৌজদারী মামলা অনেক ভেবে চিন্তে দায়ের করা হয়। তবে চেক ডিজঅনারের মামলা যদিও ফৌজদারী মামলা, এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।  চেক ডিজঅনার হলে চেকদাতার বিরুদ্ধে হস্তান্তরযোগ্য দলিল  আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে। এই মামলা সি. আর. মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়। এই মামলার প্রকৃতি অনেকটাই দেওয়ানী প্রকৃতির। এখানে রাষ্ট্র কোন পক্ষ থাকে না। একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। 

আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত ১৩৮ ধারার মামলাকে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হিসেবে অভিমত প্রদান করেছেন। এজন্য ১৩৮ ধারার নালিশী দরখাস্তকে সীমিত পরিসরে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ভীম সিং বনাম কার সিং [২০০৪ (১) এস সি সি ৬০৮] মামলায় ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট মন্তব্য করেন যে,  ‘নালিশী দরখাস্তে যদি বানান সংক্রান্ত, করণিক বা অসাবধানতাবশত কোন ভুল ধরা পড়ে তাহলে নালিশী দরখাস্ত সংশোধনের মাধ্যমে উহা সংশোদন করা যেতে পারে।তবে ফৌজদারী আদালত এটা দেখবেন যাতে আসামী কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে যায়’

ফৌজদারী বিবিধ মামলা নং ৭৫১৭/২০০৩ এ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দৈত বেঞ্চ একটি কোয়াশমেন্ট প্রসেডিং নিষ্পত্তি করতে গিয়ে পক্ষগণ কে ১৩৮ ধারার নালিশী দরখাস্ত সংশোধন করে কোম্পানীকে পক্ষ করার জন্য নির্দেশ দেন। উক্ত মামলায় কোম্পানীকে পক্ষভুক্ত করা হয়েছিল না।যার কারণে আদালত এরুপ আদেশ দেন। অপর একটি আনরিপোর্টেড ফৌজদারী বিবিধ  ১১৭৬৯/২০০৯ (মোঃ শফি বনাম মেজর একেএম আখতারুজ্জামান (অবঃ)] নং মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট  বিভাগ মন্তব্য করেন যে,  ‘যদি অভিযোগকারী মনে করেন যে, তর্কিত চেকটি কোম্পানীর পক্ষ থেকে ইস্যু করা হয়েছিল তাহলে অভিযোগকারীর স্বাধীনতা রয়েছে নালিশী দরখাস্ত সংশোধন করে কোম্পানীকে আসামী হিসেবে পক্ষভুক্ত করার। ’

অপর একটি আনরিপোর্টেড ফৌজদারী বিবিধ  ৫৯২৭/২০০৪ নং মামলায় ( মোঃ রোহেল শিকদার বনাম মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং অন্যান্য) বিগত ২৪/১১/২০০৯ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট  বিভাগেরে একটি দৈত বেঞ্চ এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে,  ‘১৩৮ ধারার মামলায় কোম্পানীকে পক্ষভুক্ত না করাটা একটি অনিয়ম মাত্র। এটি অবৈধ নয়। এই অনিয়ম মামলার যেকোন পর্যায়ে নালিশী দরখাস্ত সংশোধপূর্বক  কোম্পানীকে পক্ষভুক্ত করার মাধ্যমে দুর করা যেতে পারে।’

পরিশেষে উপরোক্ত মামলাসমুহের সিদ্দান্তের আলোকে এটা বলা যায় যে, ১৩৮ ধারার মামলায় যদি কোন আবশ্যকীয় পক্ষ বাদ পড়ে যায় তাহলে নালিশী দরখাস্ত সংশোধনের জন্য আবেদন করে উক্ত আবশ্যকীয় পক্ষকে পক্ষভুক্ত করা যাবে। 

আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

১টি মন্তব্য

  1. Well Written
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.