চৌকি আদালতের ইতিহাস জানেন?

সারাদেশে নিয়মিত আদালত ছাড়াও আরও একধরণের আদালত রয়েছে যাকে চৌকি আদালত বলা হয়। এই চৌকি আদালত গুলো উপজেলা বা থানা শহরে অবস্থিত।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে যেসব উপজেলা থেকে জেলা শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই কষ্টসাধ্য, সেসব উপজেলায় চৌকি আদালত দেখা যায়। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক জনগণ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, দুর্বল নারী ও শিশু এবং অশিক্ষিত ব্যক্তিরা এসব চৌকি আদালত থেকে বিনা খরচে বিচার পান। যারা জেলা সদরে যেতে পারেন না, সে সব গরিব ও অসামর্থ্য মানুষের জন্য উপজেলা বা থানা পর্যায়ে চৌকি আদালত রয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই এসব আদালতের কার্যক্রম চলছে। এ আদালত প্রান্তিক জনগণের জন্য বড় ধরনের কাজ করছে।

শুরুটা যেভাবে চৌকি আদালতের

বৃটিশ শাসনামলে ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময়কার কথা। ঐ সময় অর্থাৎ ১৭৯৩ সালে এই বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হওয়ার পর জমিদাররা খাজনার জন্য গরীব প্রজা দের উপর নির্মম নির্যাতন চালাত। কখনো কখনো খরা,বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারনে ফসল উৎপাদন কম হলে প্রজাদের পক্ষে খাজনা দেওয়া সম্ভব হত না। ফলে জমিদাররা নির্মমভাবে অত্যাচার করে প্রজাদেরকে শাস্তি দিত। জমিদারদের এমন অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে কিংবা ভয়ে প্রজারা এক জমিদারের এলাকা ছেড়ে অন্য জমিদারের এলাকায় পালিয়ে যেত। জমিদাররা যেহেতু খাজনা আদায় করতে পারত না তাই তারা বৃটিশ সরকারকেও খাজনা দিতে পারত না। আর এসময় প্রজাদেরকে জমির স্থায়ী মালিকানা দেওয়া হত না। এমতাবস্থায় ১৮৮০ সালের দিকে ভূমি আইন সংশোধন করে প্রজাদেরকে জমির স্থায়ী মালিকানা দেওয়া হয়। এই সময়ে বৃটিশ সরকার খাজনা আদায়ের নিয়ম চালু করে। তবে কোন প্রজা যদি খাজনা দিতে না পারত তবে তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হত না। বরং খাজনা আদায়ের জন্য মামলা করার বিধান চালু করা হয়। আর খাজনা সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এক ধরণের আদালত স্থাপন করা হয়  যেটি চৌকি আদালত নামে পরিচিত। বৃটিশ আমলে মোট ১৪ টি চৌকি আদালত ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে আইনি সেবা জনগণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে সকল উপজেলায় আদালত স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৯৯১ সালে আবার উপজেলা থেকে আদালত সরিয়ে জেলা শহরে স্থানান্তর করা হয়। তবে যে সকল এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক সে সকল এলাকায় চৌকি আদালত গুলো রেখে দেওয়া হয়।দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে ৪৩টি চৌকি আদালত। আইন সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুযায়ী গঠিত লিগ্যাল এইড কমিটি চৌকি আদালতের দ্বারস্থ হওয়া গরীব অসহায় নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

১টি মন্তব্য

  1. নতুন একটি বিষয় জানতে পারলাম।।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.