Search Suggest

১৩৮ ধারার মামলা ও অর্খঋণ মামলা পাশাপাশি চলতে পারে কিনা

বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক টাকা উদ্ধারের নিমিত্তে ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর অধীন মামলা এবং একই ঋণের টাকার জন্য হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারা মোতাবেক ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আসামীপক্ষ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে কোয়াশমেন্ট এর আবেদন করে শুনানীর সময় অথবা চার্জ শুনানীর সময় অব্যাহতির জন্য আবেদন করে আসামীর অব্যাহতির স্বপক্ষে কিছু যুক্তি বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে থাকেন।

যেমন আসামীর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন এবং ২০০৩ সনের অর্থঋণ আদালত আইন উভয়টিই বিশেষ আইন। কিন্তু ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ও ১৪০ ধারায় কোন নন অবস্টান্টে ক্লজ না থাকায় এবং ২০০৩ সনের অর্থঋণ আদালত আইনে এমন ক্লজ থাকায় ১৩৮ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা চলবে না এবং আসামী অব্যাহতি পাবে। কারণ ২০০৩ সনের অর্থঋণ আদালত আইনে উল্লেখ আছে যে, অন্য কোন আইনে যায় থাকুক না কেন অর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ আদায়ের মামলা এই আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত অর্থঋণ আদালতে দায়ের করতে হবে। একই ব্যক্তি একই অপরাধের জন্য দু’বার বিচারের সম্মুখীন হতে পারে না। এ  ছাড়া আসামী পক্ষ থেকে আরও বলা হয়ে  থাকে যে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সময় ঋণ গ্রহীতা জামানত হিসেবে কিছু পোস্ট ডেটেড চেক জমা রাখেন  এবং ঐ চেক দিয়েই পরবর্তীতে ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে ১৩৮ ধারায় মামলা করা হয় যেটি অন্যায় এবং আদালতের কার্যধারার অপব্যবহারের শামিল।

এ প্রসঙ্গে আমাদের দেশের সবোচ্চ আদালত  ‘খন্দকার মাহতাব উদ্দিন এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র [৪৯ ডিএল আর (এ ডি) ১২৩] মামলায় অভিমত দেন যে,
 ‘ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয় অপরাধের জন্য এবং দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করা হয় টাকা আাদায়ের জন্য।এজন্য উভয় মামলায় একসাথে চলতে পারে।’
আসামীপক্ষের এমন যুক্তি নাকচ করে দিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ  ‘এহতেশামুল হক বনাম রাষ্ট্র এবং অন্যান্য (আনরিপোর্টেড ফৌজদারী বিবিধ মামলা নং- ২০৯৪/২০১২, ২০৯৫/২০১২, ২০৯৭/২০১২, ২০৯৮/২০১২, ২০৯৯/২০১২, ২১০০.২০১২, ২১০১/২০১২) মামলায় গত ১১/১১/২০১২ ইং তারিখে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অভিমত দেন যে,
 ‘ অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, অন্য আইনে যাই কিছু থাক না কেন এই আইনের বিধানাবলী অগ্রাধীকার পাবে। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ আদায়ের মামলা এই আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত অর্থঋণ আদালতে দায়ের করতে হবে। ৫ (১১) ধারায় বলা হয়েছে যে, অর্থঋণ আদালত আইন একটি দেওয়ানী আদালত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং দেওয়ানী আদালতের সকল ক্ষমতা এই আইনের বিধানাবলীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া স্বাপেক্ষে প্রয়োগ করতে পারবে। যদি আসামীর কর্মকান্ড স্বতন্ত্র কোন দন্ড আইনের আওতায় আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্য্যধারা গ্রহণ করা যাবে না এমন কোন নিষেধাজ্ঞার কথা অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর কোন ধারায় বলা হয়নি। অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩  এবং ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, আইনের দুটি ভিন্ন শাখা। অর্থঋণ মামলা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃৃক টাকা আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান মতে দায়ের করা হয়। অপরদিকে ডিজঅনার অব চেক অপরাধের সাথে সম্পর্কিত যে আপরাধ ঋণ গ্রহিতা ঋণ দাতার বিরুদ্ধে করে থাকে। ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারায় ডিজঅনার অব চেক কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এজন্য দেওয়ানী মামলা ও ফৌজদারী মামলা পাশাপাশি চলতে পারে।’
অপরাধের জন্য প্রত্যেক অপরাধীকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে এটাই ফোজদারী আইনের মূলনীতি। ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয় ঋণ গ্রহীতার অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য। টাকা আদায় এই ধারার উদ্দেশ্য নয়। যদিও বাস্তবে বাদী তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্যই মামলা করে থাকেন। আর দেওয়ানী মামলা দায়ের করা হয় পাওনা টাকা আদায়ের জন্য। কাজেই টাকা আদায়ের জন্য দেওয়ানী মামলা এবং ১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার মামলা এক সাথে চলতে কোন বাধা নেই।

আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

৪টি মন্তব্য

  1. জরুরি একটা কথা আছে,,বিপদে আছি,, একটু যোগাযোগ করুন
    ০১৭৪৫৩৬৮৩৩৫
    1. দয়া করে আপনার সমস্যার কথা আমাদের প্রশ্ন করুন বিভাগে জানান। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনার সমস্যার সমাধান দেওয়ার।
  2. আমি একটি পোল্ট্রি ফিড কোম্পানি এর সাথে ব্যবসা শুরু করি ২০১৬ সালে। তাদের কোম্পানি এর নিয়ম অনুযায়ী ডিলার হিসাবে তাদের খাদ্য বিক্রি করতে হলে, সিকিউরিটি স্বরুপ ডিলার প্রতিষ্ঠানের একটি ব্যাংক চেক জমা রাখতে হয়। চেকে শুধুমাত্র স্বাক্ষর দেওয়া থাকবে। এবং চুক্তি পত্রে ঐ চেক এর নাম্বার ও কি কারনে তাকে এই চেক দেওয়া তাও উল্লেখ ছিল।
    আমার ডিলার প্রতিষ্ঠান এর নাম " ---- খামার"। কিন্তু ঐ সময় আমার সাথে প্রতিষ্ঠান এর কোন চেক না থাকায়, আমার ক্রেডিট কার্ডের চেক ছিল, যার লিমিট ছিল ৭৫০০০/(পচাত্তর হাজার) টাকা।আমি উক্ত ক্রেডিট কার্ডের চেকটি সিকিউরিটি হিসেবে জমা রাখি। তাদের সাথে প্রথম দিকে নগদে লেনদেন চলে এবং ৪ /৫ মাস পর থেকে ২০০০০০/ ( দুই লক্ষ টাকা বাকী সুবিধা দেয়) । কিন্তু বাকীতে লেনদেন শুরু হলে, কোম্পানি সময় মত খাদ্য না পৌছিয়ে উল্টো নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য সরবরাহ করতে থাকে। যার ফলে আমি সহ আমার কিছু খামারী ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে আমি ব্যবসা বন্ধকরতে বাধ্য হই। সেই সাথে নস্ট খাদ্যগুলো ফেরত নিতে বলি কোম্পানিকে। কোম্পানীর দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিনিধি ভিজিট করে, এবং খাদ্যগুলো বাতিল বলে …
  3. আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রথম কাজ হবে জামিন নেওয়া। দ্বিতীয় কাজ হবে মামলায় ভাল একজন আইনজীবী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা।