Search Suggest

জমি জমা নিয়ে বিরোধে করণীয়

আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে আমাদের জমি জমা থাকলেও ঝামেলা পোহাতে হয় আবার না থাকলেও ঝামেলার শিকার হতে হয়। তবে আপনার যদি জমি জমা থেকে থাকে তাহলে কখনো কখনো বিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। এই বিরোধ অনেক সময় মানুষ খুন অবধি পৌছে যায়। ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা, বাপ ছেলে শত্রুতা, ভাই বোনে শত্রুতা, প্রতিবেশির সঙ্গে শত্রুতা সহ নানা ধরণের শত্রুতার পিছনে এই জমি জমার ভূমিকা ব্যাপক।


অনেক সময় দেখা যায়, নিজের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল তৈরি করে জমির দখল নিতে চায়। আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকেদেয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সে জন্য জানা থাকতে হবে জমি নিয়ে বিরোধ দেখাদিলে কীভাবে প্রতিকার পাবেন।

মামলা মোকদ্দমা দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার


ফৌজদারি আইনে আপনার প্রতিকার
জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতেপারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়েগেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন।তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করারজন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্যসুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিতপদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন।

তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ব বামালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না।৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করেদেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়। 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন—এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদারকোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো—বাদীঅর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবেতাঁকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।

দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার
জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে।মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তাঁর জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।

       আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

تعليقان (2)

  1. বাদীর এক দাগে ৮ শতক জমি আছে। আমি তার কাছ থেকে ৫শতক জমি কিনি বাকি জমি অন্য জনকে বিক্রি করে। আমার জমি সঠিক ভাবে বুঝিয়ে চাইলে। উল্টো আমার নামে কোটে ১৪৫ ধারায় মামলা। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ক্ষেত্রে আমার করনীয় কি। এবং আমি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সহঃ শিক্ষক ।
  2. আমার পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে যেখানে /যে দাগে আমি পূর্ব থেকেই ভোগ দখলে আছি সেখানে / সে দাগে অন্য এক জন খতিয়ান খুলেছেন, আমার শরিকের জমি ক্রয় করে । ঐ খতিয়ানের পুর্ন অংশ আবার অন্য জনের কাছে বিক্রি করে গেছেন । এই নতুন ক্রেতা আমার জমিতে দখলে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমার সম্পত্তি কি উপায়ে পুর্বের অবস্থানে থাকতে পরে।