খতিয়ান চিনুন পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ উপায়ে (পর্ব-০১)

খতিয়ান হলো একটি লিখিত দলিল যেটি ভূমি জরীপ সম্পন্ন করার পর প্রস্তুত করা হয়। একটি খতিয়ানে নির্দিষ্ট কোন জমির মালিক কে, তার ভূমির পরিমাণ কত অংশ ইত্যাদি বিষয়গুলি লিপিবদ্ধ থাকে।  সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণি, এদের জন্য দেয়া খাজনা ইত্যাদি বিবরণসহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়।যে সকল আইনজীবী দেওয়ানী মোকদ্দমা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক এবং ব্যাংকিং প্রাকটিস করতে আগ্রহী তাদের জন্য জমির খতিয়ান চেনা আবশ্যকীয় একটি বিষয়। শুধু আইনজীবীদের জন্যই খতিয়ান চেনা জরুরী নয় বরং সকল মানুষের জন্য খতিয়ান চেনাটা খুবই জরুরী। কারণ আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু ভূমি আছে। ভূমি নিয়ে বিরোধ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আমাদের সভ্য সমাজে। তাই নিজের ভূমি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য্য। খতিয়ানের গায়ে খতিয়ানের নাম লেখা থাকে না। যার কারণে খতিয়ান চেনাটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। খতিয়ান চেনার বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে যাতে করে একজন খুব সহজেই খতিয়ান চিনতে পারেন।


আমাদের দেশে সাধারণত ৪ ধরণের খতিয়ান আছে। এগুলি হলো- সি এস খতিয়ান, এস এ খতিয়ান, আর এস খতিয়ান, বি এস খতিয়ান এবং ঢাকা মহানগরীর মধ্যে আরেকটি খতিয়ান আছে যেটিকে বলা হয় ঢাকা মহাগর সিটি জরীপ। এবার একটু খতিয়ান ও পর্চার ভিতরে পার্থক্য এক কথায় বুঝে নেয়া যাক। কারণ অনেক সময় খতিয়ান ও পর্চা নিয়ে বেশ কন্ফিউশন দেখা দেয়। খতিয়ান হলো কোন ভুমি জরীপের চুড়ান্ত রেকর্ড অর্থ্যাৎ জরীপ কাজ চুড়ান্ত হওয়ার পর খতিয়ান লেখা হয়। আর জরীপ কাজ চুড়ান্ত হওয়ার আগে যেটি হাতে পাওয়া যায় সেটি হলো পর্চা।


প্রথমেই আমরা চিনবো সি এস খতিয়ান
সি এস খতিয়ান চেনার আগে এর ইতিহাস সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক। সি এস এর পূর্ণরূপ হলো ক্যাডাসটৃাল সার্ভে। ১৯৪০ সালে বৃটিশ সরকার জরীপ কাজ সম্পন্ন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন সেই খতিয়ানকে আমরা সি এস খতিয়ান বলি। আদালত পাড়ায় সি এস খতিয়ানের গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। কারণ সকল জরীপের মধ্যে সি এস জরীপ বেশি নির্ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়।


সি এস খতিয়ান চেনার উপায়:

সি এস খতিয়ান চিনতে হলে আপনাকে চিনতে হলে আপনাকে কোথাও থেকে সি এস খতিয়ানটি সংগ্রহ করে এই লেখার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। শুধ পড়ে খতিয়ান চেনা সম্ভব নয়। সাধারণত সি এস খতিয়ানের যে বৈশিষ্ট দেখা যায় তাহলো-

১. এই খতিয়ান উপরে এবং নীচে লম্বালম্বী হয়। সাধারণত আমাদের লিগ্যাল সাইজের কাগজ যেমন হয় তেমন।
২. এই খতিয়ান উভয় পৃষ্ট সম্বলিত।
৩. খতিয়ানের প্রথম পৃষ্টায় উপরে পরগণা কথা লেখা থাকে। কারণ বৃটিশ শাসনামলে পরগণা ছিল।
৪. এই খতিয়ানে দুইটি ভাগ আছে। এই দুইটি ভাগ থাকে প্রথম পৃষ্টায়। উপরি ভাগে জমিদারের নাম থাকে। নীচের ভাগে জমিদারের অধীনে প্রজার নাম ঠিকানা থাকে। আর কোন খতিয়ানে এমন দুইটি ভাগ থাকে না।
৫. খতিয়ানের অপর পৃষ্টায় দাগ এবং জমির পরিমাণ উল্লেখ থাকে। এবং উত্তর সীমানা কথাটি লেখা থাকে।

মোটামুটি এতটুকু জানলেই সি এস খতিয়ান চেনা সম্ভব হয়। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, খতিয়ানের নম্বরের তুলনায় খতিয়ানের দাগ নম্বর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজ এ পর্যন্তই। পরের পর্বে এস এ খতিয়ান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।

       আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

৫টি মন্তব্য

  1. আর এস খতিয়ানে যেই নামগুলা থাকে তারা কি জাইগার মালিক?
    1. আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হ্যা খতিয়ানে যে নামগুলো থাকে তারা জায়গার মালিক।
  2. স্যার আমার নামে জমির দলিল আছে কিন্ত আমার বাবার নামে রেকর্ড,এটা কিভাবে থিক করা জাবে বলবেন প্লি?
    1. আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবা। আপনি রেকর্ড সংশোধনের মোকদ্দমার মাধ্যমে আপনার নিজের নামে রেকর্ড করতে পারেন।
  3. আমার মনে হয় খতিয়ান হলো পর্চার বাপ। খতিয়ান থাকলে পর্চার দরকার নাই।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.