পুরাতন মোবাইল কিনে ফেঁসে যেতে পারেন মামলায়

সোহেল (ছদ্মনাম) ঢাকায় এসেছে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সাথে করে ২০ হাজার টাকা এনেছে সনি এরিকসনের একটি ভাল মোবাইল কিনবে বলে। একদিন আত্মীয়ের বাসার নিচে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে শুনতে পায় এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে সনি এরিকসনের দামি একটা মোবাইল দেখিয়ে ঐ মোবাইল টি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বলছে। সোহেল ঐ লোকটির সাথে যোগাযোগ করে অল্পদামে মোবাইলটি ক্রয় করে। মোবাইলটি এত সস্তায় পেয়ে সোহেল খুবই খুশি হয়। দুই দিন পরে বাসায় পুলিশ এসে হাজির। সোহেলকে খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। জানা যায় ঐ মোবাইলের মুল মালিককে খুন করা হয়েছিল। পুলিশ ভিকটিমের মোবাইল নিয়মিত ট্রাকিং এ রাখে এবং সোহেল ঐ মোবাইলটি চালু করার সাথে সাথে পুলিশ ঐ মোবাইলের লোকেশন বের করে সোহেলকে গ্রেফতার করে। সোহেল দোষী কি দোষী নয় সেটি প্রমাণিত হবে আদালতে বিচারের মাধ্যমে। কিন্তু বেকসুর খালাস পাওয়ার আগে বা অব্যাহতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সোহেল ঐ মামলার আসামী হিসেবে বিবেচিত হবে।

এমনিভাবে প্রতিদিন অনেক মোবাইল অপরাধীরা চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতি করে নিয়ে চোরাই মার্কেটে বিক্রি করে দেয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চোরাই মোবাইল বেচা কেনা হয় ঢাকার গুলিস্থানে। অনেকে জেনে না জেনে এসব মোবাইল প্রতিনিয়ত ক্রয় করে থাকে।


তাছাড়া বিক্রয় ডট কমের মত জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও অপরাধীরা এসব চোরাই মোবাইল বিক্রি করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে মুল অপরাধীরা খুব কম সময়ই ধরা পড়ে। অসচেতনাতার দরুন ফেসে যায় সাধারণ এবং নিদোর্ষ মানুষ। আমরা জানি প্রত্যেক মোবাইলের আই এম ই আই বলে একটি নম্বর থাকে। এই আই এম ই আই নম্বর প্রত্যক মোবাইলের আলাদা আলাদা হয়। এই নম্বর ধরেই পুলিশ চোরাই বা ছিনতাই হওয়া মোবইলের লোকেশন বের করে থাকে। এক্ষেত্রে চোরাইকৃত মোবাইলের সকল তথ্য মুছে দেওয়া সম্ভব হলেও আই এম ই আই নম্বর মুছে দেওয়া সম্ভব হয় না। যার ফলে সাধারণ মানুষ এসব পুরাতন মোবাইল কিনে ফেসে যায়।

চুরি বা ছিনতাই বা অন্য অপরাধ কে করলো সেটি পরের বিষয়। কিন্তু চোরাইমাল যার কাছ থেকে উদ্ধার হলো সেই প্রথমে চরম ভোগান্তিতে পড়ে যায়। যদি সে বিচারে প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে সে চুরি করে নাই তাহলে খালাস পেতে পারে কিন্তু প্রমাণ করতে সক্ষম না হলে বিনা অপরাধে তার সাজা হতে পারে।

শুধুমাত্র চোরাই মোবাইলই নয় যেকোন চোরাই মাল জেনে শুনে ক্রয় করা অপরাধ। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪১০ ধারা মোতাবেক কোন মাল প্রকৃত মালিকের নিকট হতে অবৈধ পন্থায় তার অনুমতি ব্যতিরেকে সরিয়া ফেললে উক্ত মাল সর্বদা চোরাইমাল হিসেবে গণ্য হবে যতক্ষণ না তা প্রকৃত মালিকের নিকট ফেরত আসে। চোরাই মাল বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে চুরি করে পাওয়া, বলপূর্বক গৃহিত, দস্যুতামুলে হস্তান্তরিত, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি দ্বারা লব্ধ, অপরাধমূলক আত্মসাৎকৃত, বিশ্বাসভঙ্গের দ্বারা অর্জিত সম্পত্তি। ৪১১ ধারা মতে যে ব্যক্তি কোন মাল চোরাই বলে জানে বা উক্ত মাল চোরাইমাল হিসেবে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্বেও উক্ত চোরাইমাল নিজ দখলে বা জিম্মাদার হিসেবে রাখলে বা ক্রয় করলে উক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

সাধারণত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি প্রভৃতি পন্থায় অর্জিত বা লব্ধ সম্পত্তি অপরাধীগণ বিক্রয় করে থাকে। অপরাধ সংঘটিত করার পর এসব মাল তারা কোন নিরাপদ আশ্রয়ে জমা রাখে এবং সুবিধাজনক সময়ে এবং স্থানে ঐসব মাল বিক্রয় করে দেয়। তাই কোন পুরাতন মোবাইল বা এজাতীয় জিনিসপত্র কেনার আগে যথেষ্ট সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত।

     আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.