দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা তার খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে বলে জানা সত্বেও বা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্বেও উচ্চারিত বা গঠিত হবার জন্য নির্দিষ্ট কথা দ্বারা বা চিহ্ন দ্বারা বা দৃশ্যমান বস্তু বা প্রতিক দ্বারা সে ব্যক্তি সম্পর্কিত কোন ঘটনা আরোপ করে বা প্রকাশ করে তা হলে এ ধারায় বর্ণিত ১০ টি ব্যতিক্রম ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে গণ্য হবে। এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির জীবন কালে তার সম্পর্কে কোন ঘটনার আরোপ করা হলে তার মানহানি ঘটত সে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে অনুরূপ কোন ঘটনার আরোপ করা এবং সে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনের বা অন্যান্য নিকটাত্মীয়ের মনকে পীড়িত করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ ঘটনার আরোপ করা মানহানি বলে গণ্য হবে।
এছাড়া কোন কোম্পানি বা সমিতি বা ব্যক্তি সমষ্টি সম্পর্কে সমষ্টিগত ভাবে কোন ঘটনার আরোপ করা মানহানি বলে গণ্য হতে পারে। কোন আরোপ বিকল্প ধরণের হলে বা বিদ্রূপভাবে ব্যক্ত হলে তা মানহানিতে পরিগণিত হতে পারে। একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটি বোঝা যাক। ছলিম সমস্ত এলাকায় কলিমের নামে এই মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে যে কলিম মসজিদ কমিটির সদস্য হয়ে মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করে নিজের বাড়িতে পাকা ঘর তুলছে। এক্ষেত্রে ছলিম কলিমের সুনাম নষ্ট করছে বিধায় কলিম ছলিমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারে। এছাড়া ধরা যাক রাশেদ নামের একজন লোক মারা গেছে যে সৎ লোক ছিল। খায়রুল উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে রাশেদের পরিবারের লোকদেরকে পীড়া দেবার জন্য এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে যে মৃত রাশেদ জীবিতকালে একজন চোর ছিল। এমতাবস্থায় রাশেদের পরিবারের লোকজন খায়রুলের বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করতে পারেন।
অভিযোগ অর্থাৎ বক্তব্যটি মানহানিকর হতে হবে।
বক্তব্যটি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটবে।
বক্তব্যটি বিদ্বেষমমূলক হবে।
কোন বক্তব্যে উপরোক্ত উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকলেই মানহানির মামলা করা যাবে।
১) জনগণের কল্যাণার্থে কারো প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, তাতে মানহানি হবে না। (২) জনগণের প্রতি সরকারি কর্মচারীর আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না। (৩) আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না। (৪) যে কোনো জনসমস্যা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎবিশ্বাসে অভিমত প্রকশ করা মানহানির শামিল নয়। (৫) আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না। (৬) গণঅনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাবলি সম্পর্কে কোনো মতামত প্রদান মানহানি নয়। (৭) কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎবিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন- পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ। (৮) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়। (৯) গণকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে, সেটিও মানহানি হবে না।
মানহানি মামলার উপাদান
উপরোক্ত আলোচনা হতে মানহানি মামলার কিছু উপাদান স্পষ্ট হয়। যেমন-অভিযোগ অর্থাৎ বক্তব্যটি মানহানিকর হতে হবে।
বক্তব্যটি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটবে।
বক্তব্যটি বিদ্বেষমমূলক হবে।
কোন বক্তব্যে উপরোক্ত উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকলেই মানহানির মামলা করা যাবে।
মানহানির মামলা কখন চলেনা
বক্তব্যটি যদি সত্য ও পক্ষপাতহীন হয় তাহলে মানহানি মামলা চলবে না। অর্থাৎ যে বক্তব্য দ্বারা মানহানি হয়েছে সেই বক্তব্য বা কথাটি সত্য ও পক্ষপাতহীন হলে মানহানি হবে না। ফলে মানহানির মামলাও করা যাবে না। এছাড়া বক্তব্যটি উচ্চারণ করার পূর্বে উচ্চারণকারী যদি বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ বক্তব্যটি উচ্চারণের জন্য কোন বৈধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত হয় তাহলে উক্ত বক্তব্যটি মানহানিকর হবে না।আইন মোতাবেক নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে মানহানি হবে না-১) জনগণের কল্যাণার্থে কারো প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, তাতে মানহানি হবে না। (২) জনগণের প্রতি সরকারি কর্মচারীর আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না। (৩) আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না। (৪) যে কোনো জনসমস্যা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎবিশ্বাসে অভিমত প্রকশ করা মানহানির শামিল নয়। (৫) আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না। (৬) গণঅনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাবলি সম্পর্কে কোনো মতামত প্রদান মানহানি নয়। (৭) কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎবিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন- পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ। (৮) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়। (৯) গণকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে, সেটিও মানহানি হবে না।
শাস্তি কি হবে
মানহানির মামলায় আসামীর দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। মানহানিকর জেনেও তা ছাপানো বা খোদাই করা হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন (৫০১ ধারা)। মানহানিকর জানা সত্বেও এমন ছাপানো বা খোদাই করা বিষয় বিক্রি করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে