মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনে আইনি পদক্ষেপ

আমাদের দেশে পুরাতন মোটর গাড়ি বেচাকেনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পুরাতন গাড়ির মালিকানা একজনের নিকট হতে অন্য জনের নিকট হস্তান্তরিত হয়। তবে মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেতা বা বিক্রেতা আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে উদাসীন থাকেন।
মোটর গাড়ি কেনা বা বেচার আগে তাদের যেমন তৎপরতা দেখা যায়, আইনের বিধান পালেনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। ফলে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতে কিছু আইনগত জটিলতায় পড়ে যান। ক্রেতা যদি বিক্রিত গাড়ি দ্বারা যদি কোন অপরাধ ঘটান তাহলে ক্রেতা তো বটেই সাথে বিক্রেতাও ফেসে যান আইনগত ঝামেলায়। যেমন ধরুন আপনার গাড়িটি আপনি একজনের নিকট বিক্রি করে দিলেন। কিন্তু বিক্রির পর আইন অনুযায়ী আপনার যে দায়িত্ব আছে তা পালন করলেন না। ক্রেতা ঐ বিক্রিত গাড়ি দ্বারা কোন মেয়েকে অপহরণ করলেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ক্রেতা ঐ গাড়িটি ফেলে পালিয়ে গেলেন। পুলিশ গাড়িটি জব্দ করলো। এখন পুলিশ তদন্ত করে সহজেই বের করতে পারবে ঐ গাড়ির মালিক কে। এক্ষেত্রে ঐ গাড়ির কাগজ পত্র যেহেতু আপনার নামে  করা রয়েছে তাই পুলিশ আপনাকেই অপরাধী মনে করে মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে।
আবার আপনি যদি ক্রেতা হন তাহলেও রয়েছে হয়রানী হওয়ার সম্ভাবনা। যেমন ধরুন আপনি কোন একটি পুরাতন গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত আইনি বিধি বিধান মান্য করলেন না। এক্ষেত্রে পুরাতন মালিক যদি চালাকি করে আপনার বিরুদ্ধে চুরির মামলা বা ছিনতাইয়ের মামলা করে দিলেন। অথবা রাস্তায় বের হয়েছেন পুলিশ গাড়ি ক্রয়ের সমর্থনে আপনার নিকট রক্ষিত বিক্রয়ের চুক্তিপত্র বা হলফনামা বিশ্বাস না করে আপনার বিরুদ্ধে হয়রানীমুলক মামলা করে দিল। এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই পুরাতন মোটর গাড়ি বেচাকেনার পর এর মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিধি বিধান ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে অবশ্যই মান্য করতে হবে।
১৯৮৩ সনের মোটরযান অধ্যাদেশের ৪০ ধারায় মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিধানাবলী আলোচিত হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী পুরাতন মোটর গাড়ির ক্রেতা এবং বিক্রেতার উপর কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে।
বিক্রেতার দায়িত্ব
কোন নিবন্ধিত মোটর গাড়ির মালিকানার পরিবর্তন হলে হস্তান্তর দাতাকে উক্ত হস্তান্তরের ১৪ দিনের মধ্যে হস্তান্তর সম্পর্কে একটি রিপোর্ট যে এলাকায় উক্ত হস্তান্তর কার্যকর হয়েছে ঐ এলাকার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং পাশাপাশি হস্তান্তর গ্রহীতাকেও উক্ত রিপোর্ট এর একটি কপি সরবরাহ করতে হবে।
ক্রেতার দায়িত্ব
ক্রেতা যে এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে উক্ত হস্তান্তরের ৩০ দিনের মধ্যে ক্রেতা উক্ত হস্তান্তর সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রদান করবেন এবং সেই সাথে নির্দিষ্ট ফি সহ নিবন্ধন সার্টিফিকেট এবং বিক্রেতার নিকট থেকে যে রিপোর্ট এর কপি পেয়েছে তাও উক্ত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবেন যাতে করে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন সার্টিফিকেট এ মালিকানার পরিবর্তন বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে পারেন।
ক্রেতা কর্তৃক রিপোর্ট প্রদানের পর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গাড়িটি উপযুক্ত কোন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করার জন্য ক্রেতাকে নির্দেশ দিবেন। এক্ষেত্রে দরখাস্তের বর্ণনার সাথে গাড়ির মিল পেলে  এবং হস্তান্তরের  বিষয়টি তার নিকট সঠিক বা জেনুইন মনে হলে তিনি নিবন্ধন সার্টিফিকেট এ মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি ৩০ দিনের মধ্যে লিপিবদ্ধ করবেন। উক্ত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ মুল নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ না হলে তিনি মালিকানার পরিবর্তনের বিষয়টি মুল নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
পুরাতন গাড়ি কেনা বেচার পর অবশ্যই উপরোক্ত বিধানানুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে নানা রকম আইনি ঝামেলা থেকে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.