জমি ক্রয়ের পূর্বে যে সাবধানতা অবলম্বন জরুরী

জমি কেনাবেচা একটি শক্ত কাজ। জমি কিনেছেন অথচ ঝামেলার সম্মুখীন হননি এমন মানুষ আজকের সমাজে খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। জমি ক্রয়ের পূর্বে কিছু অসতর্কতার কারণে জমির ক্রেতা বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন। জমি ক্রয়ের পূর্বে কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  বিশেষ করে ঢাকা শহরের জমি  ক্রয় করতে হলে  অবশ্যই অবশ্যই  সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে  নিচের কাজগুলি করতে হবে।

১।  জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে    হবে।

২।  জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান জানতে হবে।

৩। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সি,এস, এস, এ ও আর, এস পর্চা দেখতে হবে।

৪।  বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয়ের দলিল বা বায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।


৫। বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ানে বিক্রেতা বা তিনি যার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছেন তার নামের অস্তিত্ব মিলিয়ে দেখতে হবে।
৬। জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার নিকট রক্ষিত মাঠ পর্চা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি মাঠ পর্চার মন্তব্য কলামে কিছু লেখা থাকে যেমন- মন্তব্য কলামে (AD) এভাবে লিখে থাকলে বুঝতে হবে অত্র খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসদিক পর্যায়ে আপত্তি আছে। এরূপ জমি ক্রয়ের আগে জরিপ অফিস বা ক্যাম্পে গিয়ে উক্ত জমির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে।

৭। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরিকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টননামা/ফারায়েজ দেখে নিতে হবে।

৮। বিক্রেতার নিকট থেকে সংগ্রহকৃত ভায়া দলিল, খতিয়ান বা পর্চা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী/স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।

৯। সর্বশেষ নামজারি পর্চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা রশিদ যাচাই করে দেখতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনা সহ জমি ক্রয় করলে, বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার।

১০। বিবেচ্য জমিটি সার্টিফিকেট মোকাদ্দমা ভুক্ত কিনা, কখনো নিলাম হয়েছে কিনা তা তহশিল অফিসে বা উপজেলা ভূমি অফিস হতে জেনে নিতে হবে। সার্টিফিকেট মামলার উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় যোগ্য নয় (সরকারি দাবি আদায় আইন ১৯১৩ এর ধারা ১১)।

১১। বিবেচ্য ভূমি খাস, পরিত্যক্ত, অর্পিত, ভিপি, অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ কৃত কিনা তা তহসিল/উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।

১২। বিবেচ্য ভূমি কোন আদালতে মামলা মোকদ্দমা ভুক্ত কিনা তা জেনে নিতে হবে। মামলাভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।

১৩। বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

১৪। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ তথ্য জেনে নেয়া যেতে পারে।

১৫। প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোনো ব্যাংক বা সংস্থার নিকট দায়বদ্ধ কিনা খোজ নিয়ে দেখতে হবে।

১৬। প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা তাও দেখা প্রয়োজন।

১৭। কোন কোন এলাকায় জমিতে নানা ধরনের বিধি নিষেধ থাকতে পারে। যেমন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার নিম্নোক্ত মৌজা সমূহের ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি জমিতে শিল্প-কারখানা, ইমারতসহ ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প, কৃষি ও মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২২/১১/১৯৯৯ ইং তারিখে ceg (শ-৩) ১৪/৯৪/ ৯৮৮ নং স্মারকে একটি পরিপত্র জারি করে। তাই এসকল বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জমি কেনা উচিত। অতিরিক্ত সতর্কতা ও পরবর্তীতে কোন ঝামেলা হলে আইনি সহায়তা অর্জনের লক্ষ্যে জমি ক্রয়ের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য কমপক্ষে তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিস প্রকাশ করা যেতে পারে।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.