পুলিশ রিমান্ডের আবেদন কেন এবং কখন মঞ্জুর করা হয়

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে অমুক আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তমুক আসামীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ইত্যাদি। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই আসামিকে আদালতে হাজির করতে হবে। কিন্তু একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করার পর মাত্র ২৪ ঘন্টায় উক্ত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কাজ সম্পূর্ণ হয় না বা তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর নিকট হতে মামলা সম্পর্কিত কোন তথ্য উদ্ধার করতে সমর্থ হন না। তাই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মামলার তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত আসামি কে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন মনে করলে তিনি আসামিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশ্যে হেফাজত নেবার জন্য আদালত সমীপে ফরওয়ার্ডিং এর মধ্যে প্রার্থনা করেন। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা আসামীকে হেফাজতে অর্থাৎ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতির আবেদন কেই পুলিশ রিমান্ড বলে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা কতদিনের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিতে চান তাও স্পষ্ট ভাবে তিনি তার ফরওয়াডিং এ উল্লেখ করেন। পুলিশ ফরওয়ার্ডিং এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সুপারিশ করতে হয়। তবে পুলিশ রিমান্ডের ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার কে অবশ্যই সুপারিশ করতে হবে। কারণ রিমান্ডের প্রয়োজন আছে কিনা তা সিনিয়র পুলিশ অফিসার হিসেবে ওসি সাহেব এবং এসি সাহেব তারা দুজনেই নির্ধারণ করে থাকেন। থানার ওসি এবং এসি সাহেব সুপারিশ না করলে পুলিশ রিমান্ডের প্রার্থনা সাধারনত আদালত নাকচ করে দেন। উল্লেখ্য যে পুলিশ ফরওয়ার্ডিং এ আসামির রিমান্ড প্রার্থনা করুক বা নাই করুক আসামিকে জামিন দেয়ার ব্যাপারে পুলিশ ঘোর বিরোধিতা পূর্ন বক্তব্য পেশ করবেই।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ২ ও ৪ উপধারার বিধান মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, থানা ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোন মামলার আসামিকে আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেফাজতের আদেশ দিতে পারেন। বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পুলিশ রিমান্ডের আদেশ প্রদান করতে পারেন না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় বর্ণিত আছে যে, যখন কোন মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার বিধান অনুসারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করা যাবে না, তখন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাওয়া সুস্পষ্ট তথ্যাদি এবং কেইস ডায়েরি সহ অভিযুক্তকে সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করণ পূর্বক রিমান্ডে নেওয়ার দরখাস্ত দাখিল করতেপারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার বিধান মোতাবেক নথিপত্র পর্যালোচনা করে যুক্তিসঙ্গত মনে করলে ১৬৭ এর ৩ উপধারার বিধান মোতাবেক যুক্তিসমূহ আদেশনামায় উল্লেখপূর্বক আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। তবে এরূপ হেফাজতের মেয়াদ কোনো মামলায় কোনো আসামির ক্ষেত্রে সর্বমোট ১৫ দিনের বেশি হতে পারবে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ এর ৪ উপধারায় বলা হয়েছে যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং থানা ম্যাজিস্ট্রেট ভিন্ন অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার আদেশ দিলে আদেশের কপি উর্ধতন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিতে হবে।

আসামিকে পুলিশ হেফাজতে দেয়ার পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেটকে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হয়-

(ক)  আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করা হয়েছে কিনা।

(খ)  ম্যাজিস্ট্রেটকে নিশ্চিত হতে হবে যে আসামির শরীরে কোনো জখমের চিহ্ন আছে কিনা বা আসামির চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা।

(গ) আসামিকে ইতিপূর্বে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে কিনা এবং রিমান্ড থেকে ফেরত আসার পর তদন্তকারী অফিসার কর্তৃক স্বীকারোক্তি রেকর্ড এর আবেদন ছিল কিনা এবং আসামির স্বীকারোক্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কিনা ।

সংশ্লিষ্ট মামলার এজাহার, আসামিকে আদালতে সোপর্দ করনের অগ্রায়ন পত্র, কেস ডায়েরি ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক  ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীকে পুলিশ রিমান্ডে দেওয়ার জন্য কারণ উল্লেখপূর্বক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আদালত থেকে নেবার এবং আদালতে ফেরত পাঠানোর সময় নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য যে, তদন্তকারী অফিসার কর্তৃক মামলার কেস ডায়েরি আদালতে বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হয়। রাষ্ট্রবাদী মামলায় সাধারনত এজাহারে আসামির নাম থাকে না। সে ক্ষেত্রে সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মামলার ঘটনা উদঘাটনের জন্য আসামির রিমান্ড আবেদন পুলিশ করে থাকে।

এছাড়াও গুরুতর অপরাধ যেমন খুন, জখম, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরি ইত্যাদি মামলার আলামত উদ্ধার, চোরাই মালামাল উদ্ধার, সহযোগীদের গ্রেফতার ইত্যাদি কারণ উল্লেখপূর্বক কোনো মামলার আসামিকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন পুলিশ সংশ্লিষ্ট আদালতে পেশ করে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে যে, পুলিশ আবেদন করলেই ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে দিতে বাধ্য নয়। রিমান্ডে নেবার কারণ অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যুক্তিসঙ্গত বলে গণ্য হতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যুক্তিসঙ্গত না হলে অর্থাৎ কেইস ডায়েরিতে আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে, আসামির সম্পৃক্ততা না থাকলে, আসামির শরীরে যদি জখম থাকে বা আসামীর অসুস্থতার সমর্থনে কোন যুক্তিসঙ্গত আবেদন থাকে, আসামিকে একবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে কিন্তু বিশেষ কিছু উদঘাটন হয়নি এবং আসামী স্বীকারোক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর পুনরায় রিমান্ডের আবেদন কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর হবে। জামিনের আবেদন না থাকলে আসামিকে জেলহাজতে যেতে হবে। আসামিকে রিমান্ডে  নেয়া হলে রিমান্ডের মেয়াদ শেষে রিপোর্টসহ আসামিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে হয়।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.