আসামীর দোষ স্বীকারোক্তি যেভাবে রেকর্ড করা হয়

কোন অপরাধ সংগঠনের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা আসামী সংশ্লিষ্ট ঘটনায় তাকে সম্পৃক্ত করে অপরাধ সংগঠন সম্পর্কে বিনা প্ররোচনায় ও নির্ভয়ে ক্ষমতাবান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বেচ্ছায় যে সত্য ঘটনার বর্ননা দেয় তাকে দোষ স্বীকারোক্তি বলা হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মামলার তদন্তের সময় বা বিচার শুরুর পূর্বে তার কাছে হাজিরকৃত আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড করতে পারেন।ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার ২ উপধারা মতে- মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দি যেরূপে রেকর্ড করা হয় ঠিক অনুরূপ বিধান অনুসারে আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড করতে হবে অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। উল্লেখ্য যে, আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড এর ক্ষেত্রে আসামিকে শপথ গ্রহণের আইনগত বিধান নেই। কার্যবিধির ১৬৪ এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, ম্যাজিস্ট্রেটকে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার পূর্বে ভালোভাবে আসামিকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে-
(ক) আসামী স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য নয়। যদি সে স্বীকারোক্তি করে তাহলে সাক্ষ্য হিসেবে সেই স্বীকারোক্তি তার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে এবং যে অপরাধ স্বীকার করবে তার সর্বোচ্চ শাস্তির পরিমাণ তাকে জানাতে হবে।


(খ) সে কারো ভয়ে ভীত হয়ে স্বীকারোক্তি করছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

(গ) আসামী রাজ স্বাক্ষী হওয়ার প্রলোভনে বা কোন কিছু পাওয়ার আশায় বা খালাস পাওয়ার আশায় স্বীকারোক্তি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

(গ) আসামী রাজ স্বাক্ষী হওয়ার প্রলোভনে বা কোন কিছু পাওয়ার আশায় বা খালাস পাওয়ার আশায় স্বীকারোক্তি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

(ঘ) আসামি স্বেচ্ছায় সত্য স্বীকার করছে কিনা এসব বিষয়গুলো ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে বুঝিয়ে দিবেন। উপরোক্ত জিজ্ঞাসার মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট নিশ্চিত হবেন যে আসামি স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করছে। তখন ম্যাজিস্ট্রেট নির্দিষ্ট ফরমে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করবেন।

স্বীকারোক্তি রেকর্ডের পর আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি করছে এবং তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে সে স্বীকার করতে বাধ্য নয়, দোষ স্বীকার করলে তা আসামীর বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং উক্ত স্বীকারোক্তি ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হয়েছে এ মর্মে একটি মেমোরেন্ডাম লিখে ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষর করবেন। আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিবেচনায় রাখতে হবে যে-

(ক) আসামি স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য নয়। এটা তার অধিকার। এ অধিকার ক্ষুন্ন একমাত্র আসামি নিজে করতে পারেন তাও আবার অস্বীকারের মাধ্যমে, স্বেচ্ছায় সত্য স্বীকারের মাধ্যমে বা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংঘটনে আসামির ভূমিকা সম্পর্কিত বিষয়। আসামীর অধিকারে কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।

(খ) এছাড়াও হাইকোর্ট ফরম নম্বর এম ৮৪ এর মার্জিনে হাইকোর্ট রুলসের ২৩ ও ২৪ এ বর্ণিত শর্তসমূহ পালন করতে হবে। স্বীকারোক্তি রেকর্ড এর পূর্বে নিম্নেবর্ণিত রুল সমুহ ম্যাজিস্ট্রেটকে ভালোভাবে পড়তে হবে।

(ক) আদালত চলাকালীন সময়ে স্বীকারোক্তি এজলাসে বা খাসকামরায় রেকর্ড করতে হবে এবং আসামির স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার সময় কোন লোকজন থাকবে না বা আসা-যাওয়া করতে পারবে না।

(খ) প্রশ্ন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিশ্চিত হতে পারবেন যে কবে-কখন-কোথায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং আসামিকে কোথায় পুলিশ প্রথম গ্রেপ্তার করেছে।

(ঘ) আসামির স্বীকারোক্তি করার পূর্বে মন স্থির করার জন্য কমপক্ষে ৩ ঘন্টা সময় দিতে হবে এবং এ সময় কোন পুলিশ অফিসার তার আশেপাশে থাকতে দেয়া যাবে না এবং কারো সাথে কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবেনা। ম্যাজিস্ট্রেট যখন নিশ্চিত হবেন যে আসামি কারো ভয়ে বা প্ররোচনায় আসামির স্বীকারোক্তি করছে না অর্থাৎ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি করছে তখন ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকারোক্তি রেকর্ড করবেন। তবে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি করছে কিনা তা নির্দিষ্ট ফরম এর ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রশ্ন করে উত্তর পাবার পর নিশ্চিত হবেন এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় গনিত শর্তসমূহ পূরণ হয়েছে এই মর্মে সন্তুষ্ঠ হবেন।

(ঙ) স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার পর আসামিকে পড়ে শোনানোর পর নির্দিষ্ট ফরম এর নির্দিষ্ট স্থানে আসামির স্বাক্ষর বা টিপসই নিতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দিষ্ট ফরমে সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে স্বাক্ষর দিতে হবে, আদালতের সীল মোহর দিতে হবে ও নথির সাথে স্বীকারোক্তি শামিল করতে হবে। গ্রেফতারের সময় বা পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় আসামী যদি পুলিশ কর্তৃক মারধর এর শিকার হয় এবং তার শরীরে জখমের কথা বলেন তবে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক আদেশনামা এবং ফরমের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করতে হবে। নতুবা আসামি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোন আসামীকে স্বীকারোক্তির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করা হলে আসামী যদি স্বীকারোক্তি না করে তবে জামিনের আবেদন না থাকলে আসামি জেলহাজতে যাবে। যদি আসামির শরীরে জখমের চিহ্ন থাকে তাহলে জেল সুপারকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে এবং আদেশ নামার কপি জেলসুপার বা ডিআইজি প্রিজনকে দিতে হবে। পরিশেষে বলা যায় যে, স্বীকারোক্তি করার পূর্বে আসামিকে বারবার এই কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে আসামি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য নয়। যদি সে দোষ স্বীকার করে তাহলে সেই দোষ স্বীকার তার বিপক্ষে যাবে অর্থাৎ এই দোষ স্বীকারের ওপর ভিত্তি করেই তার শাস্তি হতে পারে।

আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

১টি মন্তব্য

  1. Dhonnobad
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.