সরকারী চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে কি করবেন জেনে নিন

আমাদের দেশের চাকরিজীবীরা চাকরি পাওয়ার আগে বা পরে কোন সময়ই চাকরির আইন কানুন বা বিধানাবলী সম্পর্কে পড়াশুনা করেন না। এই ব্যাপারটিতে অনাগ্রহ দেখা যায়। ফলে অধিকাংশ চাকরিজীবীই জানেন না চাকরি করাকালীন সময়ে আইন অনুযায়ী তারা কোন কোন কাজ করতে পারেন, কোন কোন কাজ করতে পারেন না, তাদের কি কি অধিকার আছে, কি কি সুযোগ সুবিধা পাবেন, চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ বা অব্যাহতি দেওয়া হলে কি পদক্ষেপ গ্রহণ  করবেন, কিভাবে করবেন এবং কোথায় প্রতিকার পাবেন।
এজন্য চাকরি হতে বরখাস্ত, অপসারিত বা অব্যাহতি পাওয়ার পর কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে সরকারী চাকরিজীবীদের কে সারাজীবন ভুলের খেসারত দিতে হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারী ও কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মচারীগণ চাকরি হতে বরখাস্ত, অপসারিত বা অব্যাহতি পেলে ১৯৮০ সালের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের চাকরির শর্তাবলী সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৮০ সনে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইন প্রণয়ন করা হয়। 
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলী, পদোন্নতি, সরকারি বাসা, বেতন-ভাতা ও পেনশন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির জন্য সারা দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৭টি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় তিনটি এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও বগুড়ায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এই সকল প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এর আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হলে আপীলের বিধান রেখে গঠন করা হয়েছে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনাল যেটি ঢাকায় অবস্থিত।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মে নিয়োজিত কোন ব্যক্তি যদি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন বা অপসারিত হন বা তাকে ডিসচার্জ করা হয় বা তার চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলী, পদন্নোতি, সরকারি বাসা, বেতন- ভাতা বা পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে উক্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারেন।
তবে বিজিবি বা ডিফেন্সে নিয়োজিত কর্মচারীরা এই আইনের সুবিধা পাবেন না।  অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে উক্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন করা যাবে না। প্রথমে উক্ত আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উক্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করতে হবে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করা হলে কর্তৃপক্ষ দুই মাসের মধ্যে উক্ত আপীল টি নিষ্পত্তি করবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বা আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে উক্ত আদেশ বা সিদ্ধান্তের বিরদ্ধে আবেদন করা যাবে।

কতটুকু সময় পাবেন

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করলেই যে কর্তৃপক্ষ উক্ত আপীল টি দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন এমন টি নাও হতে পারে। তবে যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপীলের তারিখ হতে দুই মাসের মধ্যে আপীলটি নিষ্পত্তি না করেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে আপীলটি নামঞ্জুর হয়েছে। এই ক্ষেত্রে দুই মাস পার হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে এবং দুই মাস অতিক্রম হওয়ার পূর্বেই যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উক্ত আপীল নামঞ্জুর করেন তাহলে উক্ত নামঞ্জুর এর তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।

প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালে কখন যাবেন

প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কোন রায় বা সিন্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলে উক্ত রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে উক্ত রায় বা আদেশের তারিখ হতে তিন মাসের মধ্যে আপীল দায়ের করতে হবে। তিন মাস পরে আপীল দায়ের করা যাবে না। তবে যদি আপীল দায়ের না করতে পারার কোন উপযুক্ত কারণ থাকে তাহলে আরো তিন মাস সময় পাওয়া যাবে আপীল দায়ের করার জন্য। এক্ষেত্রে তামাদি মওকুফের জন্য আদালতে একটি আবেদন করতে হবে। আদালত উক্ত আবেদনে সন্তুষ্ট হলেই কেবল আপীলটি নিষ্পত্তির জন্য গ্রহণ করা হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের আদেশ বা রায়ের তারিখ হতে ছয় মাস অতিক্রম হলে কোন অবস্থাতেই আপীল করা যাবে না।  আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তইই চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোন ব্যক্তি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন বা অপসারিত হন বা তাকে ডিসচার্জ করা হয় বা তার চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলী, পদন্নোতি, সরকারি বাসা, বেতন- ভাতা বা পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে কোন ভাল একজন আইনজীবীর শরাণাপন্ন হওয়া। এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হয় এবং মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

৩টি মন্তব্য

  1. আমি নারী নির্যাতন মামলায় আদালত থেকে অব্যহতি পেয়ে আমার সাময়িক বরখাস্ত তোলার জন্য প্রায় ৬মাস হলো আবেদন করেছি কিন্তু অফিস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন আমি কি করতে পারি
  2. যদি কোন সরকারি কর্মচারী শিক্ষানবিশ হয় এবং সে যদি এক বছর,দুই বছর বা তিন বছর কর্মস্থলে উপস্হিত না থাকে।তাহলে কি তার চাকরি থাকবে?নাকি চাকরি চলে যাবে?
  3. আমাকে কর্তৃপক্ষ গতকাল সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করে। এখন আমি কি করতে পারি?
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.