Search Suggest

জানেন কি স্বামীও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করতে পারেন?

যৌতুক আদান প্রদানের হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবং যৌতুকের কারণে নারীর প্রতি অত্যাচার, অনাচার, নারী খুন, হয়রানী ইত্যাদি ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সনে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করেন। ছোট্ট একটি আইন। কিন্তু এই  আইনের কল্যাণে খুব বেশি পরিমাণে না হলেও যৌতুকের আদান প্রদান কিছুটা কমেছে।


সরকার আইন প্রণয়ন করেন অপরাধ দমনের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা আইনের ব্যবহারের তুলনায় অপব্যবহার করে থাকি বেশি। যৌতুক আইনের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় না। যৌতুক আইন পাশ হওয়ার পর থেকে এই আইনের যতটা না ব্যবহার হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে অপব্যবহার। পুরুষকে শায়েস্তা করার জন্য নারীরা এটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে আজকাল ব্যবহার করছেন। সাধারণত আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে স্ত্রীই এই আইনের অধীন স্বামীদের বিরুদ্ধে  মামলা করে থাকেন। এটা থেকে সাধারণ জনগণ মনে করে থাকেন যে, শুধুমাত্র স্ত্রীই স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করতে পারেন। কিন্তু এই ধারণা ভুল। স্বামীরাও তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করতে পারেন যদি তাদের স্ত্রীরা স্বামীর নিকট যৌতুক চান। তবে যৌতুকের মামলা করার আগে যৌতুকের সঙ্গা সম্পর্কে একটু জানা দরকার।


১৯৮০ সনে যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারায় যৌতুকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ২ ধারা মোতাবেক যৌতুক বলতে বোঝায়-

বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গে পরিপন্থী না হলে, কোন সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত যাহা বিয়ের পণমূল্য হিসেবে বিয়ের আগে বা বিয়ের সময় বা বিয়ে পরবর্তী যেকোন সময়ে বিয়ের এক পক্ষ কর্তৃক আরেক পক্ষকে; অথবা বিয়ের কোন পক্ষের পিতা-মাতা বা অন্যকোন ব্যক্তি র্কতৃক বিয়ের আরেক পক্ষকে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদান করা হয় বা প্রদানে সম্মতি প্রদান করা হয় হন। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিয়ের ক্ষেত্রে যে দেনমোহর স্ত্রীকে প্রদান করা হয় তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না। 

এছাড়া বিয়ের কোন পক্ষ ব্যতীত অন্য কোন  ব্যক্তি বিয়ের যেকোন পক্ষকে যদি বিয়ের সময় কোন উপহার প্রদান করেন তাহলে সেই উপহার যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো উক্ত উপহারের মূল্য ৫০০ টাকা অধিক হতে পারবে না এবং তা বিয়ের পণ্য মূল্য হিসেবে প্রদান করা যাবে না।

যৌতুক নিরোধ আইনে করা একটি মামলা বাতিল চেয়ে আসামির করা আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি আবদুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রায়ে যৌতুকের উপরোক্ত সংজ্ঞার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।এ রায় অনুযায়ী, বিবাহের সময়কার শর্ত ছাড়া বিবাহিত জীবনে যখন তখন টাকা বা সম্পদ দাবি করলেই তা যৌতুক হবে না। কিন্তু তাই বলে ধরে নেওয়া যাবে না যে শর্ত ছাড়া অর্থ-সম্পদ দাবি করে স্বামীরা স্ত্রীদের উপর নির্যাতন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে এমন নির্যাতন হলে নারী নির্যাতন বা পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনে মামলা হতে বাধা নেই। যৌতুক দাবি ভিন্ন অপরাধ, তার সঙ্গে নির্যাতন যোগ হলে ওই অপরাধের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেটা অন্য আইনে বিচার্য। আদালত একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেন।

যৌতুকের শাস্তি কি

যৌতুক আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি যৌতুক গ্রহন বা প্রদান করে বা যৌতুক গ্রহন বা প্রদানে কাউকে প্ররোচিত করেন তাহলে সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন ১ বছর কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

যৌতুক আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিয়ের বর বা কনের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের নিকট থেকে যৌতুক দাবি করেন তাহলে সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন ১ বছর কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

উপরোক্ত আলোচনা হতে এটা স্পষ্ট যে, যৌতুক বিয়ের যেকোন পক্ষই বিয়ের শর্ত হিসেবে গ্রহণ, প্রদান বা দাবি করতে পারেন। যে পক্ষ বা যে ব্যক্তি যৌতুক দাবি করবেন বা গ্রহন বা প্রদান করবেন তার বিরুদ্ধে এই আইনের বিধান মোতাবেক মামলা দায়ের করা যাবে। স্ত্রী যদি বিয়ের পণমূল্য হিসেবে স্বামীর পিতা-মাতা বা অভিভাবকের নিকট যৌতুক দাবি করেন তাহলে স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করতে পারবেন। আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটি যৌতুকের মামলা হয়েছে  যেখানে স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করেছেন এবং আদালত সেই মামলা আমলেও নিয়েছেন। তবে যৌতুকের মামলার প্রধান শর্ত হলো যৌতুকের অপরাধ সংঘটনের তারিখ থেকে ১ মাসের মধ্যে যৌতুকের মামলা না দায়ের করলে আদালত উক্ত মামলা আমলে নিবেন না।
   আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন