চেকের মামলায় নোটিশ জারীর পদ্ধতি ও নোটিশ জারী সম্পর্কে অনুমান

১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, চার্জের সময় আসামীপক্ষ প্রায়ই  আসামীর অব্যাহতির আবেদন করে এই অজুহাত উঠান যে আসামীর উপর নোটিশ সঠিকভাবে জারী হয়নি। যেহেতু আসামীর উপর নোটিশ জারী হয়নি কাজেই আসামী মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার হকদার।
একই যুক্তি উথাপন করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আসামীপক্ষ কোয়াশমেন্ট এর জন্য আবেদন করে থাকে। কিন্তু আসামীপক্ষের এমন যুক্তি চার্জের সময়ে অচল। কারণ আসামীর উপর নোটিশ জারী হয়েছে কি হয়নি তা একটি ঘটনাগত বিষয়। ঘটনাগত বিষয় মামলার শুনানীর সময় স্বাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত হবে এটাই আইনের কথা। কাজেই চার্জের সময় ঘটনাগত কোন বিষয় উথাপন করে আসামীর অব্যাহতির প্রার্থনা করা যায় না।এ প্রসঙ্গে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ নাজমুল হক বনাম মাঈনুদ্দিন আহমদ এবং অন্যান্য [ফৌজদারী বিবিধ মামলা নং- ১২৫৭৪/২০০৬, আন রিপোর্টেড] মামলায় েএই অভিমত ব্যক্ত করেন যে-
নোটিশ জারীর বিষয়টি একটি ঘটনাগত প্রশ্ন যেটির উপর বিচারিক আদালত বিচারের সময় পক্ষগণের আনিত বা দাখিলকৃত স্বাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
নোটিশ কয় ভাবে জারী করা যায়
১৮৮১ সনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার  বিধান মোতাবেক তিন ভাবে নোটিশ জারী করা যায়। যেমন- (ক) যে ব্যক্তিকে নোটিশ দিতে হবে তার নিকট ঐ নোটিশ বিলি বা জারী করে; অথবা (খ) উক্ত ব্যক্তি যেখানে নিয়মিতভাবে বসবাস করেন বা সর্বশেষ তিনি যে স্থানে বসবাস করেছেন বা ব্যবসা করেছেন বলে জানা যায় সেই ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সহ রেজিষ্টিকৃত ডাকযোগে নোটিশ প্রেরণের মাধ্যমে; অথবা (গ) বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় বাংলা দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ প্রকাশ করার মাধ্যমে। 
উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতির যেকোন একটি পদ্ধতিতে নোটিশ গ্রহিতার উপর নোটিশ জারী করা যায়। টাকা পরিশোধের জন্য নোটিশ গ্রহিতাকে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হলো মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।এই নোটিশ চেক ডিজঅনারের ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে প্রদান করতে হয়। ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ না দিলে ঐ নোটিশের কার্যকারীতা থাকেনা। এক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালতে তামাদির জন্য আবেদন করা হলেও তা বিবেচনার সুযোগ নেই। টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ দিন সময় পাওয়ার পরও যদি নোটিশ গ্রহিতা টাকা পরিশোধ না করেন তাহলে নোটিশ গ্রহিতার ‍বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণ উদ্ভব হয়। 
কখন থেকে বুঝা যাবে যে নোটিশ জারী হয়েছে
যদিও তিন পদ্ধতিতে নোটিশ প্রেরণ বা জারী করা যায় কিন্তু আদালতের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে চেকদাতা বরাবর নোটিশ প্রেরণ করা।রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে চেকদাতার প্রকৃত ঠিকানায় নোটিশ প্রেরণ করা হলে উহা সঠিকভাবে জারী হয়েছে বলে গণ্য হবে। আবার  ‘প্রাপককে পাওয়া গেল না’ বা ‘প্রাপক গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে’ বা ইংরেজিতে ‘Notice comeback unserved/ Addressee not found/ Not claimed/ Not available/ Unclaimed/ Refused to accept the notice' ইত্যাদি যে কারণেই ফেরত আসুক না কেন জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ২৭ ধারা বিধান মোতাবেক নোটিশ গ্রহিতার উপর নোটিশ জারী হয়েছে বলে গণ্য হবে। জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে যে,  
‘সংসদ কর্তৃক প্রণিত কোন আইন অথবা কোন প্রবিধানে যদি পোস্টের মাধ্যমে কোন দলিল (নোটিশ) জারীর বিষয়ে বলা থাকে তাহলে যদি ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য দৃশ্যমান না হয়, সঠিকভাবে ঠিকানা দিয়ে, ডাক খরচ দিয়ে রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে প্রেরণ করা হলে ঐ নোটিশটি কার্যকর বা জারী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।’ আরও বলা হয়েছে যে, ‘যদি বিপরীত কোন কিছু প্রমাণিত না হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে যেই সময় চিঠিটি গ্রহীতার কাছে ডেলিভারি হওয়ার কথা সেই সময় হতে চিঠিটি কার্যকরী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।’
সুবর্ত কুমার বনাম প্রদীপ [২০০০ সিআরএলযে ৩৬১৪ (উড়িষ্যা)] মামলায় উড়িষ্যা হাইকোর্ট  এই মন্তব্য করেন যে,
 ‘নোটিশ বিনা জারীতে ফেরত আসিয়াছে।কিন্তু পরিস্থিতি হতে এটা বুঝা যায় যে, চেকদাতা নোটিশ জারী এড়াইবার জন্য তার বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছেন। এমতাবস্থায় নোটিশ যথাযথভাবে জারী হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া লইতে  হইবে।’
হারচরণ সিং বনাম শিভাম [(১৯৮১) ২ এস সি সি ৫৩৫] ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে,
 ‘এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, নোটিশ গ্রহিতা নোটিশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাইলে নোটিশ যথাযথভাবে জারী হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া নিতে  হইবে।’
নোটিশের কোন নির্দিষ্ট ফরম নেই। নোটিশে নোটিশ দাতা, গ্রহীতার নাম ঠিকানা, কখন কোথায় ডিজঅনার হয়েছে, চেকের নম্বর, টাকার পরিমাণ, টাকা পরিশোধের জন্য চেকদাতাকে ৩০ দিনের সময় প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলি থাকলেই চলে।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

২টি মন্তব্য

  1. 138 ধারা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

    138 ধারার অধীনে চেক প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত অপরাধের উপাদান সমূহ কি কি?

    উত্তরগুলি পেলে খুবই উপকৃত হব এবং কৃতজ্ঞ থাকব
  2. আস্ সালামু আলাইকুম।

    N.I. Act এ রায়ে বিবাদীকে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতে অর্থাৎ রায়ের পরে বিবাদী বাদীর পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেন। এখন বিবাদীপক্ষের করণীয় কি? চেকে উল্লেখিত টাকার ৫০% জমা দিয়ে কি আপীল করতে হবে? না উভয়পক্ষের আপোষনামা দিয়েই আপীল দায়ের করা যাবে?
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.