ওয়াক্‌ফ কি কেন করবেন কিভাবে করবেন

বর্তমান সময়ে সম্পত্তি না থাকাটা যেমন  সমস্যার তেমনি সম্পত্তি থাকাটাও বেশ ঝামেলার। বিশেষ করে অনেক কষ্ট করে যে সম্পত্তি অর্জন করা হলো মারা যাওয়ার পরে সেই সম্পত্তি সন্তানেরা নষ্ট করে ফেলবে এমন দুঃশিন্তায় অনেকের ঘুম উবে যায় অথবা মারা যাওয়ার পরে কষ্ট করে অর্জিত সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত হবে এমন চিন্তাও অনেকে করে থাকেন।

তাদের চিন্তার কারণও আছে বৈকি। এজন্যই অনেকে নিজের সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করবেন বলে ভেবে থাকেন। শুধু এজন্যই নয় আরও নানাবিধ কারণে ওয়াক্‌ফ করার দরকার হয়। সরকার ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে 'ওয়াক্‌ফ অধ্যাদেশ ১৯৬২' জারী করে। ওয়াক্‌ফ বলতে অধ্যাদেশের ২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন মুসলমান কর্তৃক ধর্মীয়, পবিত্র বা দাতব্য কাজের উদ্দেশ্যে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি স্থায়ীভাবে উৎসর্গ করাকে বোঝায়। তবে কোন অমুসলিম ও একই উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ করতে পারেন। যিনি সম্পত্তি উৎসর্গ করেন তাকে ওয়াকিফ বলা হয়। ওয়াক্‌ফ দুই প্রকারের হয়। ওয়াক্‌ফ লিল্লাহ ও ওয়াক্‌ফ আল আওলাদ।

ওয়াক্‌ফ লিল্লাহ হলো ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে অর্থাৎ পরকালে শান্তির উদ্দেশ্যে পুণ্য অর্জন এবং ইহকালে জনগণের কল্যাণের জন্য যে ওয়াক্‌ফ করা হয়। অপরদিকে ওয়াক্‌ফ আওলাদ হলো কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করে এর আয় হতে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে তার বংশধরদের বা পরিবারের সদস্যদের এমনকি তার নিজের ভরণপোষণ এর ব্যবস্থা করাকে বোঝায়। ওয়াকিফ যদি সম্পূর্ণ সম্পত্তি এরূপ ভরণপোষণ এর লক্ষে তার সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করেন তাহলে ওয়াকিফ বা তার বংশধরগণ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত ঐ সম্পত্তি ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহৃত হবে না। তাদের সকলের মৃত্যুর পর ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির আয় ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহৃত হবে। আর আংশিক ধর্মীয়/দাতব্য এবং আংশিক ভরণপোষণ এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে ওয়াক্‌ফ করলে ওয়াক্‌ফকৃত সম্পত্তির আয় সেভাবেই ব্যয়িত হবে।

যে সকল উদ্দেশ্যে ওয়াক্‌ফ করা যায়
মক্কা শরীফের হাজীদের জন্য 'বোরাত' (বোডিং হাউজ) নির্মাণ, ঈদগাহে মঞ্জরী দান, মাদ্রাসা, খানকা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ, হজ্জ পালনে সাহায্য করা, গরীবদের সাহায্য করা ইত্যাদি কল্যাণকর কাজের জন্য ওয়াক্‌ফ করা যায়। এছাড়া ওয়াকিফ ও তার ভরণপোষণ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করা যায়।

ওয়াক্‌ফ এর উপাদান
(ক).ওয়াক্‌ফ এর উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ করতে হবে, (খ) ওয়াক্‌ফ ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে হতে হবে, (গ) ওয়াক্‌ফ এর উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গ অবশ্যই চিরস্থায়ী হতে হবে, (ঘ) ওয়াকিফ কে উৎসর্গীকৃত সম্পত্তির বৈধ মালিক হতে হবে, (ঙ) ওয়াকিফ কে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে, (চ) ওয়াক্‌ফ শর্ত মুক্ত হতে হবে।

ওয়াক্‌ফ এর বিষয়বস্তু
স্থাবর বা অস্থাবর উভয় ধরণের সম্পত্তিই ওয়াক্‌ফ করা যায়। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কোম্পানীর শেয়ার, সরকারী ঋণপত্র, নগদ অর্থ ইত্যাদি।
সরকার ওয়াক্‌ফকৃত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশের ৭ ধারা অনুসারে ওয়াক্‌ফ প্রশাসক নিয়োগ করে থাকেন। ওয়াক্‌ফ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সদস্য সচিব বা ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় যিনি থাকেন তাকে মুতাওয়াল্লী বলা হয়। ওয়াকিফ নিজেও মুতাওয়াল্লী হতে পারেন বা ওয়াক্‌ফকৃত সম্পত্তির সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক যে কোন স্বাভাবিক ও সুস্থ ব্যক্তি মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত হতে পারেন।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর বিধান মোতাবেক স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ১০০ টাকার অধি হলেই দলিল রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক। তবে অস্থাবর সম্পত্তির ওয়াক্‌ফ মৌখিকভাবেও করা যায়। মোহামেডান ল অনুসারে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ঈদগাহ, কবরস্থান, ইমামবাড়ী, মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য জমি দান করলে তা অবশ্যই ওয়াক্‌ফ করতে হবে।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

১টি মন্তব্য

  1. অমুসলিম মসজিদের মুতাওয়াল্লী হতে পারে কি?
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.