প্রায়ই শোনা যায় পুলিশ অমুক কে গ্রেপ্তার করে দুই দিন তিন দিন আটক রেখেছে। কিন্তু আসলেই কি পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় আটক রাখতে পারে? কোন অপরাধের দরুন পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার বেশি থানায় আটক রাখতে পারে না।
কোন ব্যক্তিকে যে মুহূর্তে গ্রেফতার করা হয় সেই মুহূর্ত থেকেই ২৪ ঘন্টার মেয়াদ শুরু হয়ে যায়। অবশ্য গ্রেপ্তার করবার স্থান হতে আদালতে যাবার সময় টুকু চব্বিশ ঘন্টার গণনা থেকে বাদ দেয়া যায়। তদুপরি ম্যাজিস্ট্রেট নিজ ক্ষমতাবলে পুলিশের হেফাজতে কোন ব্যক্তিকে আটক রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারেন। স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, নিবর্তনমূলক আটক এর ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিধানের কোন প্রয়োগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যদি পুলিশ অফিসার পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেফতার করেন, তাহলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত সময় অপেক্ষা বেশি সময় আটক রাখবেন না এবং কার্যবিধির ১৬১ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ না থাকলে অনুরূপ আটকের সময় গ্রেফতারের স্থান হতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাবার সময়টুকু বাদ দিয়ে ২৪ ঘন্টার বেশী হবেনা। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৩ এর ২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান মোতাবেক যেকোনো আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ যাতে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখায়ই ম্যাজিস্ট্রেটের আইনগত দায়িত্ব।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবার বিধান বর্ণিত আছে। এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যখন আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় এবং ৬১ ধারায় নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা যাবে না বলে যদি প্রতীয়মান হয় এবং তদুপরি এরূপ বিশ্বাস করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যে ক্ষেত্রে অভিযোগ বা খবর দৃঢ় ভিত্তিক হয়, তাহলে থানায় ভারপ্রাপ্ত অফিসার কিংবা তদন্তকারী পুলিশ, সাব ইন্সপেক্টর পদের নিম্নপদস্থ না হন, তাহলে অবিলম্বে অতঃপর নির্ধারিত ডায়রিতে লিখিত ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যের নকল সহ আসামিকে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন। এই ধারার 2 উপধারার বিধান অনুযায়ী আসামিকে যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে তিনি যদি এখতিয়ার সম্পন্ন হন বা না হন, তাহলে তিনি তার বিবেচনায় প্রয়োজনবোধে উক্ত আসামিকে হেফাজতে রাখার জন্য পুলিশ অফিসারকে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারেন। তবে এরূপ পুলিশ হেফাজতে রাখার সময় ১৫ দিনের বেশী হবেনা। ম্যাজিস্ট্রেট এখতিয়ার সসম্পন্ন না হলে এবং তার বিবেচনায় যদি উক্ত আসামিকে আরো আটক রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি আসামিকে একজন এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করবেন। তবে শর্ত রয়েছে যে সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন এমন কোন দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং তৃতীয় শ্রেণীর কোন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পুলিশ হেফাজতে আটক রাখবার জন্য কোন পুলিশ অফিসারকে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারবেন না।
১৬৭ এর ৩ উপধারায় বর্ণিত আছে যে ১৬৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে আটক রাখবার কর্তৃত্ব দানকারী ম্যাজিস্ট্রেট উক্তরূপ আদশের কারণ লিপিবদ্ধ করবেন। কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে যে, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা থানা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অন্যকোন ম্যাজিস্ট্রেট এর উপদেশ দেবার কারণ তার অব্যবহিত উর্দ্ধতন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন। উপরে উল্লেখিত বিধান মোতাবেক কোন পুলিশ অফিসার একজন আটককৃত আসামীকে হাজতবাসে রাখতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে একটি মামলার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান হলো এই যে, কোন পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত সময়ের অধিক সময় কোন অবস্থাতেই আটক রাখতে পারবেন না যদি না কোন ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৭ ধারা অনুযায়ী কোনো বিশেষ আদেশ দান করেন (২৯ ডি এল আর ২৫৬ এস সি)।
কোন ব্যক্তিকে যে মুহূর্তে গ্রেফতার করা হয় সেই মুহূর্ত থেকেই ২৪ ঘন্টার মেয়াদ শুরু হয়ে যায়। অবশ্য গ্রেপ্তার করবার স্থান হতে আদালতে যাবার সময় টুকু চব্বিশ ঘন্টার গণনা থেকে বাদ দেয়া যায়। তদুপরি ম্যাজিস্ট্রেট নিজ ক্ষমতাবলে পুলিশের হেফাজতে কোন ব্যক্তিকে আটক রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারেন। স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, নিবর্তনমূলক আটক এর ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিধানের কোন প্রয়োগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যদি পুলিশ অফিসার পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেফতার করেন, তাহলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত সময় অপেক্ষা বেশি সময় আটক রাখবেন না এবং কার্যবিধির ১৬১ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ না থাকলে অনুরূপ আটকের সময় গ্রেফতারের স্থান হতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাবার সময়টুকু বাদ দিয়ে ২৪ ঘন্টার বেশী হবেনা। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৩ এর ২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান মোতাবেক যেকোনো আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ যাতে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখায়ই ম্যাজিস্ট্রেটের আইনগত দায়িত্ব।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবার বিধান বর্ণিত আছে। এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যখন আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় এবং ৬১ ধারায় নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা যাবে না বলে যদি প্রতীয়মান হয় এবং তদুপরি এরূপ বিশ্বাস করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যে ক্ষেত্রে অভিযোগ বা খবর দৃঢ় ভিত্তিক হয়, তাহলে থানায় ভারপ্রাপ্ত অফিসার কিংবা তদন্তকারী পুলিশ, সাব ইন্সপেক্টর পদের নিম্নপদস্থ না হন, তাহলে অবিলম্বে অতঃপর নির্ধারিত ডায়রিতে লিখিত ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যের নকল সহ আসামিকে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন। এই ধারার 2 উপধারার বিধান অনুযায়ী আসামিকে যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে তিনি যদি এখতিয়ার সম্পন্ন হন বা না হন, তাহলে তিনি তার বিবেচনায় প্রয়োজনবোধে উক্ত আসামিকে হেফাজতে রাখার জন্য পুলিশ অফিসারকে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারেন। তবে এরূপ পুলিশ হেফাজতে রাখার সময় ১৫ দিনের বেশী হবেনা। ম্যাজিস্ট্রেট এখতিয়ার সসম্পন্ন না হলে এবং তার বিবেচনায় যদি উক্ত আসামিকে আরো আটক রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি আসামিকে একজন এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করবেন। তবে শর্ত রয়েছে যে সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন এমন কোন দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং তৃতীয় শ্রেণীর কোন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পুলিশ হেফাজতে আটক রাখবার জন্য কোন পুলিশ অফিসারকে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারবেন না।
১৬৭ এর ৩ উপধারায় বর্ণিত আছে যে ১৬৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে আটক রাখবার কর্তৃত্ব দানকারী ম্যাজিস্ট্রেট উক্তরূপ আদশের কারণ লিপিবদ্ধ করবেন। কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে যে, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা থানা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অন্যকোন ম্যাজিস্ট্রেট এর উপদেশ দেবার কারণ তার অব্যবহিত উর্দ্ধতন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন। উপরে উল্লেখিত বিধান মোতাবেক কোন পুলিশ অফিসার একজন আটককৃত আসামীকে হাজতবাসে রাখতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে একটি মামলার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান হলো এই যে, কোন পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত সময়ের অধিক সময় কোন অবস্থাতেই আটক রাখতে পারবেন না যদি না কোন ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৭ ধারা অনুযায়ী কোনো বিশেষ আদেশ দান করেন (২৯ ডি এল আর ২৫৬ এস সি)।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।