মামলা মোকদ্দমার স্তর বা ধাপসমূহ না জানার কারণে আদালতে এসে বিচারপ্রার্থীদের বিভিন্ন হয়রানীর শিকার হতে হয়। যে কারণে একটি মামলার বিভিন্ন ধাপসমূহ জানা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য্য একটি বিষয়। মামলা দুই ধরণের হয়। ফৌজদারী মামলা ও দেওয়ানী মামলা। ফৌজদারী মামলা অপেক্ষা দেওয়ানী মামলা অনেকটা জটিল প্রকৃতির। ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলতে ঐ ধরণের মামলাকে বুঝায় যখন মামলার প্রধান প্রশ্ন সম্পত্তি বা পদের অধিকার সংক্রান্ত হয়। অর্থাৎ যেখানে একজন নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে এর লংঘনের ক্ষেত্রে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার উদ্ভব হয়। দেওয়ানী মামলা নিয়ে কোন আইনজীবীর নিকট গেলে আইনজীবী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি করেন বা কোন কোন ধাপ অতিক্রম করে আপনার মামলা শেষ হয় বা কোনটার পরে কোন স্তর তা যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনার জন্য উক্ত মামলা পরিচালনা করা সহজ হবে। মনে করুন আপনি কোন দেওয়ানী মামলা নিয়ে একজন আইনজীবীর নিকট গেলেন। এখন উক্ত মামলা করার ক্ষেত্রে যা যা ঘটবে তা আমরা ধারাবাহিকভাবে জানবো।
১।আইনজীবীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সরবরাহ
২। মামলার আরজি লেখা
১০। চূড়ান্ত শুনানীর তারিখ নির্ধারণ (এস. ডি)
চূড়ান্ত শুনানীর (পি. এইচ) তারিখ হতে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানী শেষ করতে হয় (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ১৮, বিধি-১৯)। চূড়ান্ত শুনানী (পি. এইচ) ও পরবর্তী চূড়ান্ত শুনানী (এফ. পি. এইচ বা পার্ট হার্ড) পর্য্যায়ে বিচারক জবানবন্দী, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনবেন।
১২। রায় ঘোষণা
মামলা শুনানী সমাপ্ত হওয়ার পরে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-২০, বিধি-১১)।
১৩। ডিক্রি প্রদান
রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রদান করতে হবে (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-২০, বিধি -৫)।তাছাড়া মামলার যেকোন পর্যায়ে পক্ষগণ আর্জি, জবাব সংশোধণ, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদর্শন এবং স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতের দরখাস্ত প্রদান করতে পারবেন। মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পক্ষগণ যে কোন সময় আপোষ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্ততায় বা আদালতের বাইরে বসতে পারেন। দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯(ক) ধারা অনুযায়ী আপোষ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এ. ডি. আর নামে পরিচিত।
১।আইনজীবীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সরবরাহ
কোন আইন আইনজীবীর নিকট দেওয়ানী মামলা নিয়ে গেলে আপনাকে উক্ত মামলা/মোকদ্দমার যাবতীয় কাগজপত্রাদি আইনজীবীকে সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আইনজীবী আপনাকে সাহায্য করবেন। কি কি কাগজ পত্রাদি লাগবে তা আইনজীবীই আপনাকে বলে দিবেন। মনে রাখবেন আপনি হলেন মাস্টার অব ফ্যাক্টস বা ঘটনার মাস্টার। অর্থাৎ ঘটনা সম্পর্কে আপনিই সবচেয়ে ভাল জানেন। আইনজীবী আপনার ঘটনার কিছুই জানেন না। এজন্য আপনাকে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে আইনজীবীকে জানাতে হবে। আর আইনজীবী হলেন মাস্টার অব ল বা আইনের মাস্টার। আপনার নিকট থেকে ঘটনা জেনে তিনি আইন অনুযায়ী সেটাকে সাজাবেন। শৈল্পিক রূপ দিবেন।
২। মামলার আরজি লেখা
মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সরবরাহের পর আইনজীবীর দায়িত্ব হলো আপনার মামলা লেখা। আইনজীবী আপনার যে মামলা লিখবেন সেটিকে আরজি বলা হয়। আপনি যে ঘটনার বিষয় আইনজীবীকে জানিয়েছেন তা আইনজীবী ক্রমানুসারে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখবেন। আরজি লেখা হয়ে যাওয়ার পর আইনজীবী উক্ত আরজির সহিত ওকালতনামা, প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি, প্রসেস ফি সহ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদির ফটোকপিসহ আরজি ভালভাবে বেধে নিবেন।এরপর আরজি এবং ওকালতনামায় আপনার স্বাক্ষর নিবেন। এখন মামলা দায়ের বা ফাইলিং এর জন্য প্রস্তুত।
৩। মামলা দায়ের করা
আরজি প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরে আপনার মামলা দায়ের বা ফাইলিং এর জন্য আপনার আইনজীবী যে আদালতে মামলা ফাইলিং হবে সেই আদালতের সংশ্লিষ্ট সেরেস্তাদারের নিকট উক্ত আরজি পেশ করবেন।তারপর দেওয়ানী আদালতের সেরেস্তাদার বা তার অনুপস্থিতিতে সেরেস্তাদার হিসেবে কর্মরত কর্মচারী মামলার আর্জি গ্রহণ করে তা যাচাই বাছাই করে যথাযথ হলে আরজির গায়ে বা তার সাথে যুক্ত অর্ডারশিটে বা স্লিপে মামলার ফাইলিং নম্বর লিখবেন। এছাড়া মামলার ফাইলিং রেজিষ্ট্রারে মামলার পক্ষগণের নাম, কিসের মামলা, মামলার সাল সহ মামলার নম্বর ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করবেন। আপনার মামলা দায়ের করা শেষ হলো। তবে মনে রাখতে হবে সেরেস্তাদার যদি মনে করেন যে আরজি ফেরত বা প্রত্যাখান হওয়া উচিত সেক্ষেত্রে সেরেস্তাদার তা বিচারকের নিকট উল্লেখ করবেন। বিচারক আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণ করবেন (সি. আর. ও, ভলিউম-১, বিধি-৫৫)। কোন কারণে আর্জি সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হলে তা সংশোধনের জন্য পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয় যার সময়সীমা ২১ দিন।
৪। সমন জারী হওয়া
একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ সমন জারী। এই ধাপটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মামলার সমন যথারীতি জারী না হলে মামলার কার্যক্রম শুরুই হবে না। মামলার যে দীর্ঘসুত্রিতার কথা শোনা যায় সমন জারী না হওয়া তার অন্যতম কারণ। এজন্য আইনজীবীর সাথে আলোচনা করে সমন জারী বিষয়ে তদ্বীর গ্রহণ করতে হবে। কিভাবে সমন জারী করতে হয় তা জানতে এখানে ক্লিক করুন!
৫। বিবাদী কর্তৃক লিখিত জবাব দাখিল
বিবাদীর প্রতি যথারীতি সমন জারী হলে বিবাদী মামলার ১ম শুনানীর তারিখ বা তৎপূর্বে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন (দেওয়ানী কার্যবিধি, আদেশ -৮, বিধি-১)। তা না হলে মামলাটি একতরফা শুনানীর জন্য নির্ধারিত হবে। তবে দেওয়ানী কার্যবিধির ৮০ ধারার নোটিশ জারী না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য ৩ মাস সময় পাবে।বিবাদী যদি তার দাবীর সমর্থনে কোন দলিলাদির উপর নির্ভর করে, তবে তা ফিরিস্তি সহকারে ঐ দলিলাদি দাখিল করবেন।
৬। প্রথম শুনানীতেই মামলা নিষ্পত্তি
প্রথম শুনানীর তারিখে আদালত দেখেন যে, মামলার পক্ষদের মধ্যে কোন বিরোধীয় বিষয় নেই তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি করবেন। এক্ষেত্রে মামলা মূলতবি করার কোন সুযোগ নেই।
৭। ইস্যু গঠন
মামলার প্রথম শুনানীর তারিখ বা জবাব দাখিলের মধ্যে যেটি পরে, তা হতে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-১৪, বিধি-১)। যেসব বিরোধীয় বিষয়ের উপর মামলা নিষ্পত্তি হবে সেসব বিষয় বস্ত নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে।
৮। উদঘাটন ও পরিদর্শন
ইস্যু গঠনের ১০ দিনের মধ্যে বাদী বা বিবাদী আদালতের অনুমতি নিয়ে অপর পক্ষকে লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে একটি পক্ষকে একবারই লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-১১, বিধি-৮)।
৯। ৩০ ধারার তদ্বির
এই পর্যায়ে নির্ধারিত শর্ত এবং সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে, আদালত যে কোনও সময় নিজ উদ্যোগে বা কোনও পক্ষের আবেদনক্রমে- কোন প্রশ্নাবলী দাখিল বা প্রশ্নাবলীর উত্তর, তথ্য বা ঘটনার গ্রহনযোগ্যতা এবং কোন দলিলের যা স্বাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন দলিল বা অন্যান্য বিষয় উদঘাটন, পরিদর্শন, উপস্থাপন, আটক এবং ফেরত সংক্রান্ত যেকোন আদেশ আদালত যথাপোযুক্ত মনে করলে দিতে পারেন। েএছাড়া যার স্বাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বা উপরোক্ত দলিলাদি উপস্থাপনের জন্য যার উপস্থিতি প্রয়োজন তার প্রতি আদালত সমন ইস্যু করতে পারেন এবং কোন ঘটনা হলফনামাযোগে প্রমাণের আদেশ দিতে পারেন।১০। চূড়ান্ত শুনানীর তারিখ নির্ধারণ (এস. ডি)
ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চূড়ান্ত শুনানীর দিন ধার্য করতে হয় (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-১৪, বিধি-৮)।
১১। চূড়ান্ত শুনানীচূড়ান্ত শুনানীর (পি. এইচ) তারিখ হতে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানী শেষ করতে হয় (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ১৮, বিধি-১৯)। চূড়ান্ত শুনানী (পি. এইচ) ও পরবর্তী চূড়ান্ত শুনানী (এফ. পি. এইচ বা পার্ট হার্ড) পর্য্যায়ে বিচারক জবানবন্দী, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনবেন।
১২। রায় ঘোষণা
মামলা শুনানী সমাপ্ত হওয়ার পরে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-২০, বিধি-১১)।
১৩। ডিক্রি প্রদান
রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রদান করতে হবে (দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ-২০, বিধি -৫)।তাছাড়া মামলার যেকোন পর্যায়ে পক্ষগণ আর্জি, জবাব সংশোধণ, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদর্শন এবং স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতের দরখাস্ত প্রদান করতে পারবেন। মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পক্ষগণ যে কোন সময় আপোষ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্ততায় বা আদালতের বাইরে বসতে পারেন। দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯(ক) ধারা অনুযায়ী আপোষ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এ. ডি. আর নামে পরিচিত।
রায় ও ডিক্রি হয়ে যাওয়ার পর আপনার উচিত হবে রায় ও ডিক্রির সহি মুহুরি নকল এবং স্বাক্ষ্য দেওয়ার সময় যে মূল কাগজ পত্রাদি আদালতে দাখিল করেছিলেন তা আদালতের অনুমতি স্বাপেক্ষে উঠিয়ে নেওয়া।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।