দেওয়ানী মামলায় সমন জারীর বিভিন্ন পদ্ধতি

দেওয়ানী মামলা দায়ের হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সমন জারী করা। মূলতঃ সমন জারী না হওয়ার কারণে অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। শুরুই হয় না। এজন্য মামলা দ্রুত শেষ করতে হলে অবশ্যই বিবাদীর উপর যথাযথভাবে সমন জারী করতে হবে। দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৫ এ সমন সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। সমন দু’ভাবে জারী করা হয়। আদালতের জারীকারকের (পদাতিকের) মাধ্যমে এবং আদালতের সেরেস্তা কর্তৃক ডাকযোগে। সমনের সাথে মামলার আর্জি, বাদীর ফিরিস্তিযুক্ত কাগজের কপি (আর্জির বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ কাগজপত্র যা আর্জির দাবীকে সমর্থন করে), ওকালতনামা, তলবানা (বিবাদীর নামীয় সমন জারীর ক্ষেত্রে সরকারের দেয়া কোর্ট ফি) দাখিল করতে হয়।



৫ আদেশের ১ নিয়ম মোতাবেক মামলা দায়ের হওয়ার পর পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতের এ সংক্রান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিবাদীর প্রতি সমন ইস্যু করে মামলায় হাজির হয়ে জবাব দেওয়ার জন্য। তিনি যদি এ সময়ের মধ্যে সমন ইস্যু করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি অসদাচারণের দোষে দোষী হবেন। তবে মামলা দায়ের করার দিন যদি বিবাদী হাজির হয়ে বাদীর দাবি মেনে নেন তাহলে সমন ইস্যু করতে হবে না। সমনে জজ বা তাঁর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষর করবেন এবং সমনে আদালতের সীল থাকবে। সমন জারী হলে বিবাদী ব্যক্তিগতভাবে নিজে বা আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হতে পারবেন। তবে আদালত প্রয়োজন মনে করলে বিবাদীকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।

৯ নিয়ম অনুযায়ী বিবাদী বা তার প্রতিনিধি যদি যে আদালতে মামলা দাযের করা হয়েছে সেই আদালতের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে আদালতের যথাযথ অফিসার বা তার অধীনস্ত কোন কর্মচারী দ্বারা বা তালিকাভুক্ত কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বিবাদীর উপর সমন জারী করা যায়। এছাড়া উপরোক্ত উপায়ের অতিরিক্ত হিসেবে আদালতে আবেদন করে বাদী নিজ খরচে ফ্যাক্স বা ইমেইল এর মাধ্যমে বিবাদীর উপর সমন জারী করতে পারেন। আদালতের অফিসার বা কুরিয়ার সার্ভিস সমন প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্য উহা জারী করে আদালতকে অবহিত করবেন। জারী করতে ব্যর্থ হলে অফিসার অসদাচরনের দোষে দোষী হবেন এবং কুরিয়ারের ক্ষেত্রে আদালত তার তালিকা হতে উক্ত কুরিয়ার সার্ভিসকে বাদ দিবেন। ৯এ মোতাবেক বাদী আদালতে আবেদন করলে আদালত বিবাদীর উপর সমন জারী করার জন্য বাদীকে অনুমতি দিতে পারেন। দুইয়ের অধিক বিবাদী হলে প্রত্যেকের উপরই আলাদা আলাদাভাবে সমন জারী করতে হবে।



মামলার সমন বিবাদী সরাসরি গ্রহণ করলে তা সরাসরি জারী হিসেবে গণ্য হবে। আদালতের জারীকারক (পদাতিক) যখন বিবাদীর উপর সমন জারীর জন্য যাবে তখন সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দু’জন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপ গ্রহণ করবেন। সাধারণত সমন বিবাদীর উপর ব্যক্তিগতভাবে জারী হতে হয়। তার অনুপস্তিতে তার পক্ষে তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির উপর সমন জারী হতে হবে। যদি তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রতিনিধি পাওয়া না যায়, তবে তার পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সদস্যের উপর সমন জারী করতে হয়। এক্ষেত্রে ভৃত্য পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন না। (দেওয়ানী কার্যবিধি, আদেশ-৫, বিধি-১২ ও ১৫)।

বিবাদী বা তার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রতিনিধি বা তার পরিবারের কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ পাওয়া না গেলে বা সমন গ্রহণ না করলে বিবাদীর বাস গৃহের বহির্দ্বারে বা অন্য কোন প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে সমন জারী করতে হবে (দেওয়ানী কার্যবিধি, আদেশ-৫, বিধি -১৭)। এক্ষেত্রেও জারীকারক সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দু’জন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপ গ্রহণ করবেন। 
বিবাদীর সাময়িক অনুপস্থিতিতে তার বাসগৃহের বহির্দ্বারের সামনে সমন লটকিয়ে জারী করা যুক্তিসংগত নয়। যদি ঐ বিবাদীকে তার বাসগৃহে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে পুণরায় তার বাড়ীতে সমন জারী করতে হয় (সি. আর. ও, ভলিউম-১, বিধি-৭৬)। জারীকারক সমন জারী রিটার্ণ ফেরত দিলে নাজির যথাসম্ভব দ্রুত এবং কমপক্ষে মামলার ধার্য্য তারিখের দু’দিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট কোর্টে ফেরত দিবেন (সি. আর. ও, ভলিউম-১, বিধি-১০৫)। অপরদিকে ডাকযোগে প্রেরণের পর ডাকরশিদ (একনলেজমেন্ট ডিউ) থাকলে এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এ. ডি (ডাক সমন) জারী হিসেবে গণ্য হবে। বিবাদী একের অধিক হলে প্রত্যেকের উপর সমন জারী হতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন জেলার বিবাদীদের উপর সমন সংশ্লিষ্ট জেলার নেজারত বিভাগের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে।

তবে আদালত যদি বিশ্বাস করেন যে,  বিবাদী সমন এড়িয়ে চলছে বা কোন কারণে স্বাভাবিক উপায়ে সমন জারী করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে আদালত বিবাদীর সর্বশেষ যেখানে বসবাস করেছেন বা ব্যবসা পরিচালনা করতেন বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য কাজ করতেন এমন বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে এবং আদালতের প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে সমন জারী করার আদেশ দিতে পারেন বা এ উদ্দেশ্যে উপযুক্ত কোন আদেশ দিতে পারেন অথবা বিবাদী কার্যতঃ এবং স্বেচ্ছায় যেখানে বসবাস করেন সেখানে প্রচারিত হয় এমন কোন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমেও সমন জারী করার আদেশ দিতে পারেন (দেওয়ানী কার্যবিধি, আদেশ-৫, বিধি-২০)।

সমন প্রথমে সাধারণ উপায়ে জারী করার ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ উপায়ে জারী করা সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে সমন জারীর ব্যবস্থা করতে হবে। সমন জারী হলো কিনা বা না হলে কেন জারী হলো না সে সম্পর্কে বাদী পক্ষকে খোজ খবর নিতে হয় এবং সমন জারীর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়।

আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

৩টি মন্তব্য

  1. মুল মেকদ্দমায় আমার পিতাকে পক্ষ করেছিল কিন্তু কোন সমন নোটিশ দেয়নি সেই কারনে আমার পিতা মোকদ্দমা বিষয়ে জানতো। মোকদ্দমা চলাকালীন পিতার মৃত্যু হইলে, বাদীপক্ষ দরখাস্ত দ্বারা পিতার নামের পৃবে মুত কথা নোট করান। কিন্তু আমাদের কে মোকদ্দমায় পক্ষ করেন নাই। এখন বাদী বলেন তোমার পিতা সমন পেয়েছে তোমাদের পক্ষ করতে হবে না। আপনার নিকট আইনি পরামশ চাই।
    1. মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কোন মোকদ্দমায় কোন পক্ষ মারা গেলে তার বৈধ প্রতিনিধিদেরকে অবশ্যই পক্ষ করতে হবে। নইলে মামলা চলবে না।
  2. ধন্যবাদ, আপনার মাধ্যমে সমন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.