রেজিস্ট্রি ছাড়া বিয়ে যেভাবে প্রমাণ করা যায়

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক না হলেও ইসলাম ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। বাধ্যতামূলক মানে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনে। এই সংক্রান্ত আইন কঠোর। কিন্তু কঠোর করা হয়েছে আমাদের মঙ্গলের জন্যই। কারণ বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। আগে দেখে নেওয়া যাক বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়।

১। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করলে যে সনদ পাওয়া যায় সেটি হলো একটি বৈধ বিয়ের দলিল;

২।  রেজিস্ট্রেশনের ফলে বিয়ের সব তথ্য সরকারের তথ্য ভান্ডারে নথিভুক্ত হয় বলে এর সত্যতা অস্বীকার করা যায় না;

৩। বিবাহে দুই পক্ষই বিশেষ করে নারীরা আইনে প্রদত্ত সকল সুরক্ষাসহ, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে;

৪। স্ত্রীরা স্বামীদের প্রতারণার স্বীকার হলে এই রেজিস্ট্রেশন এর সনদই একমাত্র রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করবে;

৫। স্বামীর মৃত্যু পরবর্তীকালে স্বামীর সম্পত্তির বৈধ অংশ সহ অন্যান্য দাবি আদায়ে এই দলিলটি অত্যাবশ্যকীয়;

৬। এমনকি তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ও বিবাহের রেজিস্ট্রেশন একটি অত্যাবশ্যকীয় দলিল;

৭। স্বামীর অবর্তমানে সন্তানের বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করতে রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন হতে পারে;

৮। বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও কিছু রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভ্রমণে আগ্রহী কোন নারী যদি নিজের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান কালে নিজেকে বিবাহিতা পরিচয় দিলে বিবাহের প্রমাণ হিসেবে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের একটি সনদ প্রয়োজন হতে পারে;

যদিও বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার ফলে নারীরাই বেশি উপকৃত হয়ে থাকেন কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পুরুষরাও অনেক হয়রানীর শিকার হয়ে থাকে, যেমন – বিয়ের উপযুক্ত প্রমাণ না দেখাতে পারলে অনেক সময় ছেলে/পুরুষরা নারী/শিশু অপহরণ সহ নানা রকম হয়রানী/নির্যাতন/মামলার শিকার হয়; এমনকি, এধরনের পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত তাদেরকে পুলিশের বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখে পড়তে দেখা যায়।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এর এত্ত সব উপকারিতা থাকা সত্বেও অনেকেই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন না। আবার অনেকেই (ছেলে বা মেয়ে) পরিস্থিতির শিকার হন। ফলে বিয়েটা রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয় না। আবেগের বশে অনেকেই বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করেন এমনকি সন্তানও জন্ম দেন। কিন্তু বিয়েটা রেজিস্ট্রি করা হয় না।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো- বিয়ের কোন পক্ষই বিয়েটাকে অস্বীকার করতে পারেন না। এমনটা হতেই পারে যে আপনি লুকিয়ে কোন মেয়েকে বা ছেলেকে বিয়ে করলেন। কিন্তু কোন কারণ বশতঃ বিয়েটা রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। এখন ছেলে বা মেয়ে ঐ বিয়েটা অস্বীকার করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিয়েটা প্রমাণ করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে কিন্তু অসম্ভব নয়।  

একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, রেজিস্ট্রেশন বিয়ে বৈধ হওয়ার কোন শর্ত নয়। অর্থাৎ বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না হলে বৈধ হবে না এটা ঠিক নয়। বিয়েটা বৈধ হবে ঠিকই কিন্তু বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করার জন্য ঐ বিয়ের স্বামীকে শাস্তি পেতে হবে। কারণ কাজির নিকট বিয়ের বিষয়ে রিপোর্ট করার দায়িত্ব বর বা স্বামীর। 

যাই হোক, বিয়ের কোন পক্ষ যদি বিয়ে করার পর উক্ত বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি এই সুযোগে বিয়ে অস্বীকার করেন তাহলে অপরপক্ষ বিয়ের সময় ওঠানো ছবি, বিয়ের কাজী, স্বাক্ষী বা তাদের বিয়ে সম্পর্কে জানে এমন কোন লোকের স্বাক্ষ্য বা বিয়ে সম্পর্কিত যেকোন তথ্য বা দলিল আদালতে দাখিল করে উক্ত বিয়ে প্রমাণ করতে পারেন। এখানে দলিল বলতে বোঝানো হয়েছে কোন ছবি, ভিডিও, মেসেজ, চ্যাট, লিখিত অন্য কোন দলিল ইত্যাদি যা ঐ বিয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কোন বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা না হয়ে থাকলে এই সমস্ত দলিল দ্বারা বিয়ে প্রমাণ করা যেতে পারে। এছাড়া কোন সন্তান থাকলে উক্ত দলিলের পাশাপাশি ডি এন এ টেস্টের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.