বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যধি। ২০১৭ সনে প্রণীত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে ছেলেদের বিবাহের বয়স ২১ এবং মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ বৎসর করা হলেও বর ও কনে পক্ষের সমোঝতার মাধ্যমে স্থানিয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাল্য বিবাহ হচ্ছে। বাল্য বিবাহ ঠেকানোর জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও এই সব শাস্তির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। বাল্য বিবাহ একটি অপরাধ এবং বাল্য বিবাহের কারণে শিশুর স্বাস্থ্যকে ঝুকির মুখে ফলা হলেও আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহ বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু কেন? গবেষণা করে জানা যায় যে, বাল্য বিবাহের মূল কারণ দারিদ্রতা, পারিবারিক অসচেতনতা, কন্যা শিশুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিপাত, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব।
অল্প বয়সে বিয়ে কণ্যা শিশুর স্বাস্থ্যকে ঝুকির মুখে ফেলেছে। এর কারণে মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুকি প্রচুর পরিমানে বেড়েছে। বাংলাদেশে কিশোর কিশোরিদের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের প্রায় দিগুণ ও শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ গুন।এছাড়া ইউনিসেফ এর হিসাব অনুযায়ী ২০ বছর বা এর বেশি বয়সের নারিদের তুলনায় ১৮ বছরের নিচের প্রসূতিদের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ২৫ গুন এবং মায়েরা ৫০ শতাংশ মৃত সন্তান জন্ম দেয়। তাছাড়া যে সব বাচ্চা জন্ম নেয় তাদের মধ্যে বেশির ভাগই হয় বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধি।তার সাথে মারও দেখা দেয় রক্ত শূন্যতা বা ঘাতক ব্যাধি। মূলত কণ্যা শিশুরা কিশোরী বয়সে সংসার করার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তত নন।ফলে অল্প বয়সে বিয়ের কারণে শিশু কিশোরীরা সোনালি শৈশব, সুখ স্বাচ্ছন্দময় ও সভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। এসব কারনে কন্যাশিশু কিছুটা মানসিক ভারসাম্যও হারায়। এত মৃত্যু, এত ঝুকি থাকা সত্বেও বাল্য বিবাহ রোধ করা না যাওয়ার আরেকটি কারণ থাকতে পারে। তাহলো সামাজিক অবক্ষয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে কন্যা সন্তানের পিতা কন্যাকে বেশিদিন অবিবাহিত অবস্থায় ঘরে রাখাটা নিরাপদ বলে মনে করতে পারেন না। চারিদিকে যেভাবে ধর্ষণ, শ্লীতহানীর জোয়ার বয়ে যাচ্ছে তাতে কন্যা সন্তানের পিতার এমন ভাবনাটা অমূলক বলা যায় না। মূলতঃ এমন ভাবনা চিন্তা থেকেও অনেক বাবা মা তাদের নাবালিকা কন্যা শিশুকে তড়িঘড়ি করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে সমাজের নারীরা বর্তমানে অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। পত্রিকা ও টেলিভিশন খুললেই দেখা যায় অনেক জায়গায় কন্যা শিশুটি নিজেই প্রতিবাদ করার মাধ্যমে বাল্য বিবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আবার সমাজের অনেক হিতৈষী ব্যক্তি আছেন যারা বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে চান। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চান। তবে অনেকেই ভেবে পান না যে কিভাবে কোন বাল্য বিবাহ বন্ধ করবেন। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ৪ ধারায় বাল্য বিবাহ কিভাবে বন্ধ করা যাবে তার বিধান রাখা হয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধির কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ধারা ৫ এর বিধানের সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ন না করে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, কোন ব্যক্তির লিখিত বা মৌখিক আবেদন অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বাল্যবিবাহের সংবাদ প্রাপ্ত হলে তিনি উক্ত বিবাহ বন্ধ করিবেন অথবা বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
এছাড়া বাল্য বিবাহ বন্ধে আদালতকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বাল্য বিবাহ বন্ধে ইচ্ছুক ব্যক্তি আদালতে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ৫ ধারার বিধান মোতাবেক আদালতে বাল্য বিবাহ বন্ধের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালত, স্ব-উদ্যোগে বা কোন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, যদি এই মর্মে নিশ্চিত হন যে, কোন বাল্যবিবাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে অথবা বাল্যবিবাহ অত্যাসন্ন তাহলে আদালত উক্ত বিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবেন।আদালত স্বেচ্ছায় বা অভিযোগকারী ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারবেন। যদি কোন ব্যক্তি আদালত কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেন, তিনি অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ১ (এক) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
বাল্য বিবাহ রোধের জন্যে শুধু দেশের সরকারকেই এগিয়ে আসলে হবে না, বরং দেশের প্রত্যেক পরিবার ও প্রত্যেক মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং এ নির্যাতন রোধে স্বচেষ্ট থাকতে হবে।তাহলইে বাল্য বিবাহ বন্ধ বা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।
বাল্য বিবাহ রোধের জন্যে শুধু দেশের সরকারকেই এগিয়ে আসলে হবে না, বরং দেশের প্রত্যেক পরিবার ও প্রত্যেক মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং এ নির্যাতন রোধে স্বচেষ্ট থাকতে হবে।তাহলইে বাল্য বিবাহ বন্ধ বা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন।
আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।