Search Suggest

শখের প্রাণীটিকে কেউ নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলে কি করবেন?

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা শশু পাখি পালন করতে ভালবাসেন। পশু পাখিকে নিজের জীবনের একান্ত বন্ধু হিসেবেও কেউ কেউ গণ্য করেন। অনেক সময় অবসর বিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য ভাল একটি সঙ্গি  হতে পারে পশু-পাখি। অনেকেই নিছক শখের বসে কুকুর, বিড়াল, খোরগোষ, ছাগল, গরু, কবুতর, টিয়া, ময়না, কাকাতুয়া, তোতা ইত্যাদি পশু পাখি পালন করে থাকেন। পশু পাখির প্রতি একান্ত ভালবাসা থেকেই এসব ব্যক্তি পশু পাখি পালন করে থাকেন। বিদেশে কুকুরের মতো প্রাণীকে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন: অন্ধকে পথ দেখানো, বৃদ্ধদের সঙ্গী বা পুলিশের কাজে ব্যবহার ইত্যাদি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ভয়, আতঙ্ক, শত্রুতা ও ঘৃণার কারণে পোষ্য পশু পাখির প্রতি অনেকেই নিষ্ঠুর আচরণ করে বসে। জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে অনেকে আবার কুকুরকে ভয় পান এবং এ কারণে রাস্তায় দেখলেই নিষ্ঠুর আচরণ করেন। ধর্মীয়ভাবেও অনেক প্রাণীকে নোংরা মনে করা হয়, সে কারণে অনেকে নিষ্ঠুর আচরণ করে বসেন। শুধু তাই নয় রাস্তাঘাটে বেওয়ারিশ জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতার বাইরেও বিভিন্ন খেলাধুলায় এদের ব্যবহারের মধ্যদিয়েও নিষ্ঠুরতার মুখে ঠেলে দেয়া হয়। এছাড়া আদিযুগ থেকেই দেশে বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে 'পশু লড়াই' আয়োজন করা হয়। যেমন প্রতিবছর সিলেটের ছাতকে বড় ধরনের ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ষাঁড়ের মালিকরা ট্রাক ও পিকআপ-ভ্যান দিয়ে ষাঁড় নিয়ে আসেন ছাতক পৌর শহরে। অর্ধশতাধিক ষাঁড় এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই ষাঁড়দের অহেতুক এক কষ্টের মুখে ছেড়ে দেয়া হয়। ষাঁড়ের লড়াইয়ের মতো করে মোরগ লড়াইও অনুষ্ঠিত হয় অনেক স্থানে।

অনেক ক্ষেত্রে পশু পাখি পালন করতে করতে পশু পাখির প্রতি অসম্ভব মায়া জন্মে যায় পালনকারীর মন মানসে। অনেকেই নিজের সন্তানের মতই পশু পাখিকে লালন পালন করে থাকেন। ফলে কেউ ভয়, আতঙ্ক, শত্রুতা বা ঘৃণার বশে উক্ত পোষ্য প্রাণীটিকে নিষ্ঠরভাবে হত্যা করে বসলে পালনকারী খুবই মর্মাহত হন। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। বিষয়টি অনেকের কাছে তুচ্ছ বা সাধারণ মনে হলেও উক্ত পশু পাখির পালনকারীর নিকট তা মোটেও তুচ্ছ কোন ব্যাপার নয়।যদিও জীব জন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে আমাদের দেশের মান্ধাত্বার আমলের একটি আইন রয়েছে কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ আমাদের দেশে হ্য় না বললেই চলে। অখচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জীবজন্তুর ওপর নিষ্ঠুর আচরণের জন্য শাস্তির উদাহরণ রয়েছে।

কিন্তু অতি আশার একটি খবর হলো বাংলাদেশি আদালত দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গত ১০ই মে, ২০১৮ পশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য উক্ত ব্যক্তির শাস্তির আদেশ দিয়ে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। রাজধানীর রামপুরায় দুই মাসহ ১৪ কুকুর ছানাকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যার দায়ে ঐ ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।জানা যায়, এর আগেও প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। কিন্তু সেসব মামলায় শুধু অর্থদণ্ডের মাধ্যমে পার পেয়ে যান আসামিরা।

কোন আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়া যাবে?
প্রাণরি প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে ১৯২০ সালে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন পাশ করা হয়। যদিও এই আইন অনেক পুরানো এবং এই আইনে জরিমানার পরিমাণ তখনকার প্রেক্ষাপটে নির্ধারণ করা হয়েছিল, এই আইনটি যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সংশোধন করা হয়নি।তবুও কেউ যদি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনকারীকে বিচারের আওতায় আনতে চান, তাহলে তাকে এই আইনেরই আশ্রয় নিতে হবে। এই আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে বা অযথা মারধর করে বা এমন ভাবে বাঁধে, রাখে বা বহন করে যার কারণে উক্ত প্রাণীর অযথা কষ্ঠ বা ভোগান্তি হয় বা কোন ব্যক্তি যদি তার দখলে এমন প্রাণী রাখে বা বিক্রি করে বা প্রকাশ করে যে প্রাণী ক্ষুধা, তৃষ্ণা, জনাকীর্ণতা বা অন্য কোন অপব্যবহারের কারণে উক্ত প্রাণী যন্ত্রণা পায় বা কোন প্রাণীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বিশ্বাস করার কারণ থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তি প্রতিটি অপরাধের জন্য ১০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা তিন মাসের কারাদন্ড অখবা  উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ১৯২০-এর ৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অকারণে শুধু সহিংসতা প্রদর্শনে কোনো প্রাণীকে হত্যা করে তাহলে তিনি ২০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা ছয় মাসের কারাদন্ড অখবা  উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।। 

তবে কোনো গোষ্ঠী ধর্ম বর্ণের রীতি পালনের জন্যে বা কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটলে তা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।

আইনটি মোটেও যুগের চাহিদার সাথে যায় না। ১৯২০ সালের প্রণীত আইনে ১০০ টাকা বা ২০০ টাকা জরিমানা যৌক্তিক থাকলেও বর্তমানে তা যে কত হাস্যকর একটি বিষয় তা পাঠক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন। তবুও অন্যের যষ্টি হিসেবে আইনটি ব্যবহার করা যেতে পারে।


সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!


আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

إرسال تعليق