প্রথমেই আপনাকে একটা বিশ্বাস রাখতে হবে তা হল, নামজারি একটি সহজ প্রক্রিয়া এবং আপনি নিজেই তা সম্পন্ন করতে পারেন। আরো বিশ্বাস রাখতে হবে, কোন প্রকার দালাল/ভূমিদস্যু/মুন্সী বা অন্য কোন মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা ছাড়াই আপনি নিজেই তা করতে পারেন। এতে হয়তো আপনার কিছু সময় ব্যয় হবে কিন্তু আপনার বহু অর্থের অপচয় যেমন বন্ধ হবে তেমনি দালালদের অন্যায় আবদার কিংবা ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগান্তির সম্ভাবনা কমে যাবে।
নানা কারণে নামজারী করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পান, আবার কেউ খরিদসূত্রে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে জমির নামজারি করিয়ে নিতে হয়। নামজারি কীভাবে করতে হয় তা হয়তো অনেকে জানেন না। এ কারণে অনেকে দালাল/ভূমিদস্যু/মুন্সী বা অন্য কোনো মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা নিয়ে নামজারি করিয়ে নেন। এতে আপনার বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। আর আপনি যদি কীভাবে করতে হয় তা জানেন তাহলে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নামজারি করিয়ে নিতে পারবেন।
নানা কারণে নামজারী করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পান, আবার কেউ খরিদসূত্রে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে জমির নামজারি করিয়ে নিতে হয়। নামজারি কীভাবে করতে হয় তা হয়তো অনেকে জানেন না। এ কারণে অনেকে দালাল/ভূমিদস্যু/মুন্সী বা অন্য কোনো মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা নিয়ে নামজারি করিয়ে নেন। এতে আপনার বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। আর আপনি যদি কীভাবে করতে হয় তা জানেন তাহলে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নামজারি করিয়ে নিতে পারবেন।
প্রথমত, নামজারি প্রক্রিয়াটি বুঝতে যদি আপনার সমস্যা হয়, তাহলে এসি ল্যান্ড সদর সার্কেল অফিসে একটি ‘হেল্পডেস্ক’ বা ‘সেবাকেন্দ্র’ খোলা রয়েছে। একজন দায়িত্ববান অফিস সহকারী সার্বক্ষণিক আপনাকে সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত আছেন। আপনার যেকোনো সমস্যায় তিনি সহযোগিতা করবেন।
তারপরও যদি কোনো বিষয়ে আপনার অধিকতর জানার প্রয়োজন থাকে, তাহলে আপনি সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।
এখন চলুন জেনে নিন নামজারি কেন ও কীভাবে করতে হয়।
নামজারি/জমা খারিজ/মিউটেশন যা-ই বলুন না কেন এটার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর পাঠানো ভূমি প্রশাসন বোর্ডের ১৮-৭-১৯৮৪ ইং তারিখের ২০-এ.এস-১৭/৮৪ (১৪০) নং স্মারক অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।
নামজারি করা কখন প্রয়োজন হয়
০১) ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;
উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০-এর ৩২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে নামজারির আদেশ দেবেন। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে, ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা/জমির ভাগ বণ্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম আগের হোল্ডিংয়ের জায়গায় হোল্ডিংভুক্ত করা হয়।
০২) জমি বিক্রি, দান, হেবা, ওয়াকফ, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;
০৩) দেওয়ানি বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রিমূলে মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারির আবেদন করা যায়।
নামজারি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রথমেই জেনে রাখা প্রয়োজন, একটি পূর্ণাঙ্গ নামজারি আবেদনের জন্য আপনার নিচের কাগজপত্রগুলো থাকতে হবে :
০১) মূল আবেদন ফরম (এটি বাধ্যতামূলক)।
০২) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)।
০৩) সর্বশেষ খতিয়ান (যাঁর কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক) [খতিয়ানের একটি ফরম্যাট দেখানো হলো]।
০৪) ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি (বাধ্যতামূলক)।
০৫) ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা মূল ওয়ারিশান সনদ (ম্যাজিস্ট্রেট/প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সংসদ সদস্যের মতো জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সাকশেসন সার্টিফিকেট) প্রদান করতে হবে। [শুধুমাত্র ওয়ারিশদের জন্য বাধ্যতামূলক]।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (বি) ধারা মোতাবেক কোনো রেকর্ডীয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশরা নিজেদের মধ্যে একটি বণ্টননামা সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করবেন। উক্ত রেজিস্টার্ড বণ্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন জানাবেন।
০৬) জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যু করা) (বাধ্যতামূলক)।
০৭) ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সূত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)।
০৮) বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তার পর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)।
৯) চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্য করা ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)।
১০) আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)।
নামজারি আবেদনের পদ্ধতি
১। আবেদন ফরমের সকল তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করবেন। বিএস খতিয়ান নম্বর বা বিএস দাগ নম্বর জানা না থাকলে আপনার সঙ্গে যে খতিয়ানের ওপরে লেখা আছে তা দেখে পূরণ করুন। আবেদন পূরণ হয়ে গেলে নিচে আপনার স্বাক্ষর এবং অবশ্যই আবেদনকারীর প্রকৃত মোবাইল নম্বর (যেখানে পরবর্তীতে আপনার মেসেজ যাবে) তা উল্লেখ করুন। এবার আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি আবেদনপত্রের ওপর সংযুক্ত করুন এবং অন্য সকল কাগজপত্র একত্রে সংযুক্ত করে হেল্পডেস্ক বা সেবাকেন্দ্রে জমা দিন। সেখানে আপনাকে একটি রসিদ দেওয়া হবে এবং পরবর্তী তারিখগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে।
২. ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক)-এর কাছে আপনার আবেদন পাঠানোর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করবেন। এর মধ্যে আপনি/আপনার উপযুক্ত প্রতিনিধিকে আপনার আবেদনে যেসব কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন, তার মূলকপি ভূসকের কাছে প্রদর্শনের জন্য এবং বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য যেতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া থাকলে বর্তমানে কোনো নামজারি করা হয় না।
৩. ভূসক (তহশিলদার) আপনার সকল কাগজপত্র যাচাইয়ের পর তিনি একটি প্রতিবেদনসহ এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠাবেন। এ পর্যায়ে SMS-এর মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে কখন আপনার আবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে পৌঁছেছে। এ পর্যায়ে আপনাকে আবেদন প্রাথমিকভাবে যথার্থ পাওয়া গেলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে নিয়ে শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। শুনানির দিন কোনো আপত্তি না পাওয়া গেলে সর্বশেষে তা এসি ল্যান্ডের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ভূসকের কাছ থেকে এসি ল্যান্ড অফিসে নামজারির নথি আসার পর সর্বোচ্চ ২০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার আবেদন অনুমোদন (যথার্থ থাকলে)/খারিজ (যৌক্তিক কারণে) হবে যা আপনাকে SMS-এর মাধ্যমে জানানো হবে।
৪. আপনার নামজারির আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর খতিয়ান প্রস্তুতের জন্য দুদিন সময় লাগে। কারণ এ পর্যায়ে রেকর্ড হতে অনুমোদিত হিসাব অনুযায়ী জমি কর্তন করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত খতিয়ান স্বাক্ষর করার জন্য উপস্থাপন করা হয়। এই পর্যায়ে আপনাকে এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ) বা সহজ কথায় নামজারি ফি বাবদ ২৪৫ টাকা পরিশোধ করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে হবে।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।
আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।