মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়ার পর বিচারক যে কারণে কলমের নিব ভাঙেন

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অপরাধীর শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ডের বিধান সব সমাজেই প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন সমাজে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে মৃত্যুদন্ডকে ব্যবহার করা হতো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় মূলতঃ ধর্ষণ, গুপ্তচরবৃত্তি, বিশ্বাসঘাতকতা, সামরিক আইন, সমকামিতা, ব্যভিচার, অজাচার, দূর্ণীতি, স্বধর্ম ত্যাগ ইত্যাদি অপরাধের কারণে। বাংলাদেশে সাধারণত ধর্ষণ করে হত্যা, নরহত্যা, এসিড নিক্ষেপ, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দান, যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আসামী কর্তৃক হত্যার প্রয়াস, নরহত্যার সহিত ডাকাতি সহ  বেশ কিছু অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। আমরা অনেক সময় চলচ্চিত্রে দেখি যে, বিচারক কোন আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পর বিচারক তাঁর কলমের নিব ভেঙে ফেলছেন।

অনেকের মনে তখন প্রশ্ন জাগে বিচারক আসলে তাঁর কলমের নিব ভাঙেন কেন। আসলে  এটি ‍বৃটিশ আমল থেকে চলে আসা একটা কাস্টমস বা রেওয়াজ, যেটি মূলত একটি প্রতীকী বিষয়। এর পিছনে বেশ কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথম ব্যাখ্যা হলো যে কলম একজনের জীবনের আলো নিভে যাওয়ার রায় লিখেছে, সে যেন আর কারো জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিও বেশ চমৎকার। বলা হয়ে থাকে, বিচারককেও তাঁর রায়ের বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়। এতে তিনিও ব্যথিত হন। কিন্তু ওই যে বলা হয় :

দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
যার তরে প্রাণ কোন ব্যথা নাহি পায়,
তার দণ্ডদান প্রবলের অত্যাচার।

তো, সে মন খারাপের অনুভূতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই মৃত্যুদণ্ডদাতা বিচারক নিবটি ভেঙে ফেলেন। এর তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, মন খারাপের অনুভূতি থেকে বা অপরাধবোধ হতে বিচারক তাঁর প্রদত্ত দণ্ড ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু তিনি যেন তা না করতে পারেন, তার জন্যই কলমের এ নিব ভেঙে ফেলা।

চতুর্থ বা সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখ দেয়, কম বা বেশি, যদিও কখনো কখনো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের মতো সর্বোচ্চ শাস্তিরও প্রয়োজন হয়। তার পরও কলমের নিব ভেঙে ফেলার মাধ্যমে বোঝানো হয়, মৃত্যু একটি দুঃখজনক বিষয়।


সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!

আপনি কি আমাদের ব্লগে লিখতে আগ্রহী? তাহলে এখানে নিবন্ধন করুন। আপনার কি কিছু বলার ছিল? তাহলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.