উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ



ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।  বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে তার দেশ মূল্য দেয় বলে এ নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি এদেশের সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরার কথা জানান তিনি।  

রোববার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণয়ন করা প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।“  রাজধানীতে ইমকে সেন্টারে ‘বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত হাস।  ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২' শীর্ষক আইন করার উদ্যোগ নেওয়ার পর এটির খসড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সবার মতামত নেয়।  তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ২৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার খবর দিয়ে অল্প দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সভায় আইনটি তোলার কথা জানিয়েছিলেন।  

 

একই অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়; ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের তথ্য সুরক্ষায় উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তা করা হবে।  রোববার এ আইনের খসড়া নিয়ে উদ্বেগের জায়গা ব্যাখ্যা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, যদি ডেটা স্থানীয়করণের শর্তকে কঠোরভাবে আরোপের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।  

“একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে এখানকার ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে।”  এটি বাংলাদেশের জন্য ‘খুবই নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলতে পারে মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, “প্রায় ২,০০০ এরও বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে। এবং প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন তারা আর এই সেবাগুলো পাবেন না। ব্যবসাকে আকর্ষণ করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এজন্য অনলাইন উম্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার।” 

 অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে খসড়া আইন হয়েছে, সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন অনলাইন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।  ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণাতেও যুক্তরাষ্ট্র ‘উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে তিনি বলেন, “সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।  “যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইন বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হল এই নিয়ম ও আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমরা উদ্বিগ্ন যে ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এ আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।” 

আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলো সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।  “অনলাইন বক্তৃতা এবং ডেটা সুরক্ষা করা সহজ কাজ নয়। এটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। আর সেই কারণেই আমরা এই আলোচনা করছি।”  তার দেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা জানি যে অসত্য বা গুজব মোকাবেলা করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং ব্যবসার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা কতটা কঠিন।  “ওয়াশিংটন থেকে সিলিকন ভ্যালি পর্যন্ত আমাদের অনেক কিছুই শিখতে হয়েছে এবং আমরা এখনও শিখছি এবং এই ধরনের জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খোলামেলাভাবে আলোচনা ও বিতর্ক করছি।”  ‘উন্নয়ন আর নিরাপত্তার’ সঙ্গে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের’ ভারসাম্য রক্ষার উপর জোর দিয়ে পিটার হাস বলেন, “এবং এই মূল্যবোধগুলো আসলে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও একে অন্যকে শক্তিশালী করে। মানবাধিকারের সুরক্ষা ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার বিষয়টি একটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও টেকসই করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।“  তিনি এসব বিষয় নিয়ে বাণিজ্য সংগঠন ও বাণিজ্যিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার আশা আলোচনার ভিত্তিতে পাওয়া মতামত অন্তর্ভূক্ত করে ডেটা সুরক্ষা আইনের পরবর্তী খসড়ায তৈরি করা হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর তুমো পৌটিয়াইনেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এবং বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে ওরাকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাবা দৌলা বক্তব্য দেন। 

সুত্র: https://www.allbanglanewspapersbd.com/bdnews24/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.