আইন ব্যবসা আর চকবাজারের ব্যবসা কি এক—হাইকোর্টের প্রশ্ন



আইন ব্যবসা আর চকবাজারের ব্যবসা কি এক—এমন প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষাপটে তিন আইনজীবীর হাজিরাবিষয়ক শুনানিতে আজ বুধবার হাইকোর্ট এই প্রশ্ন রাখেন।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি হয়।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১-এ ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল দেন। একই সঙ্গে নিজেদের ভূমিকার ব্যাখ্যা জানাতে তিন আইনজীবীকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সে অনুসারে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজুল হক, সহসভাপতি মো. আজহারুল ইসলাম ও আইনজীবী ফেরদৌস আলম আজ হাইকোর্টে হাজির হন।

আদালতে তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন?’

তখন ‘হ্যাঁ’সূচক জবাব দেন তিনজনের আইনজীবীরা।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আইন ব্যবসা আর চকবাজারের ব্যবসা কি এক?’

তখন মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘না না, এটা ব্যবসা না।’

আদালত বলেন, বার কাউন্সিলের মিটিংয়ে (২৮ জানুয়ারি) কী হলো?

জবাবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, প্রথমে তাঁরা বার নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। তাঁরা তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন। তারপর ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, কোনো সমস্যা হলো বার কাউন্সিলের একটি কমিটি আছে, সেখানে জানাতে। স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর কাছে যেতে পারেন। আইনজীবী সমিতি থেকে যেন রেজল্যুশন না নেওয়া হয়। এর তাৎক্ষণিক ফল হয়েছে কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতিতে। সেখানে একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল, যার সমাধান হয়েছে। রায়ের মাধ্যমে উভয় পক্ষের (বিচারক ও আইনজীবী) জন্য একটি গাইডলাইন এলে ভালো হবে।

চারটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘আগে এ রকম দেখিনি। আগে কিছু হলে হাইকোর্ট পর্যন্ত আসত না। ঘটনা হলে সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যরা দুই মিনিটের মধ্যে হাতজোড় করে ফেলছ, তখন সব ঠান্ডা।’

লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার পর হাইকোর্ট ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। সেদিন নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে হাজির হতে হবে।

রুলে নীলফামারীর তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, আদালত অবমাননার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর ও অপর আসামিদের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করেন নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১-এর বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মামলায় নিয়োজিত তিন আইনজীবীসহ তাঁদের সহযোগী আইনজীবীরা মারমুখী ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়ান। বিকট শব্দে বিচারকের প্রতি বিভিন্ন উক্তি করেন। হামলা করার প্রয়াস চালান। এসব কথা উল্লেখ করে বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে একটি চিঠি পাঠান। এতে ঘটনা অবহিত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠাতে নির্দেশ দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.