ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত বর্জনে নতুন কর্মসূচি




দুই বিচারক ও এক নাজিরকে অন্যত্র সরানোর দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ সহ জেলার সব আদালতে যাওয়া থেকে বিরত আছেন আইনজীবীরা। এত দিন দুটি আদালত বর্জন করলেও আজ থেকে জেলার সব আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবীদের সাধারণ সভা শেষে আইনজীবীরা ঘোষণা দিয়েছেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন এই কর্মসূচি চলবে।

আজ বুধবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতে অবস্থান করে দেখা গেছে, আইনজীবীরা সবাই নিজ নিজ চেম্বারে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা বিচারকাজে অংশ নেননি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিচারপ্রার্থীরা এসে আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতের ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাত খান দাবি করেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকাল ১০টার দিকে আমি আদালতে কাজ করছিলাম। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি দুইজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে এসে আদালতের ভেতরে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে গেছেন। তিনি বিচারকের উদ্দেশে বলেছেন, “তিনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।” আমি তাঁর কথায় কোনো প্রতি–উত্তর দিইনি।’

পেশকারের এ বক্তব্য ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে দাবি করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে আমি আদালত চত্বর ঘুরে এসেছি। তবে ভেতরে যাইনি। সেখানে কাউকে কিছু বলিনি। কেউ যদি হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে থাকেন, তাহলে এটি ডাহা মিথ্যা কথা। আমাদের কর্মসূচি চলবে। সমস্যা নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১–এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক আজ দুপুরে তাঁর খাস কামরায় বসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিজেদের কাজ করতে আসিনি। আমরা এসেছি সংবিধান ও আইনের কাজ করতে। আদালতের এজলাসে উঠতে আমি বাধ্য। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমি আদালত বর্জন করতে পারি না। আইন ও সংবিধান আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে এজলাসে বসার। আজ দুটি মামলার নিষ্পত্তি করেছি। প্রতিদিন আমাকে ৫০-৬০টি মামলার শুনানি করতে হয়। না করতে পারলে মাসের ২২ কার্যদিবসে কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী ভোগান্তি পড়বেন। আমি এখন বিব্রতকর অবস্থায় আছি। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

আজ সকাল থেকে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা চত্বরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। নাসিরনগর উপজেলার গুকর্ণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রাম থেকে এসেছেন মো. আদম আলী নামের এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘অনেক ট্যাহা খরচ কইরা অনেক কষ্ট কইরা আইছিলাম। অহন হুনছি কাম অইব না।’

নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রাম থেকে এসছেন শাহীনুর বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আমার স্বামীরে পুলিশ গত রাইতে ধইরা আনছে। অহন হুনছি আদালত আইব না। আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাইতেছি না। আমি দুই বাচ্চা নিয়া আইছি। কবে আদালতের কাজ অইব, জানি না। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকুম। এর ফর চইলা যামু।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে। আদালত চত্বরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। বিষয়টি পুলিশের নজরদারিতে আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.