রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, মার্কেটের সামনেসহ ফুটপাত/ফুটপাতের পাশে নোংরা পরিবেশে অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার বিক্রি বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ থানা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মোট সাতজনকে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জনস্বার্থে দেশের ১০ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন নোটিশটি পাঠান। নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাম্মী আক্তার, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান, মো. হাসান মিলু, আবিদ হোসেন, ইমরান হোসেন, জাহিদ হাসান ফাহাদ, এটিএম রেজাউন, শাহেন শাহ, মো. আরশাদ আলী এবং মো. সুমন হোসেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খাবার গ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু খাবার যদি হয় অনিরাপদ, তাহলে তা হতে পারে মানুষের নানা রোগসহ মৃত্যুর কারণ। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও মার্কেটের সামনেসহ ফুটপাত/ফুটপাতের পাশে নোংরা পরিবেশে নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ।
‘বিশ্বের অনেক দেশেই রাস্তায় খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ রাস্তার খাবার প্রস্তুত ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এসবের কোনো বালাই নেই। দূষিত পানি, ধুলাবালি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকাংশ রাস্তার খাবারকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এসব খাবার খান, তারা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। যে সড়ক ও ফুটপাতে এসব খাবার বিক্রি হয়, সেগুলো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রাস্তার খাবার দোকানের নিবন্ধন বা অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোনো কর্তৃপক্ষের কাছেই রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের কোনো তালিকাও নেই। খাবারের মান তদারকির দায়িত্বে থাকা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও রাস্তার খাবারের ক্ষেত্রে একেবারেই সীমিত। উক্ত বিষয়ে বিগত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘রাস্তার খাবার নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেই’ এবং বিগত ৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাস্তার খাবার’ শিরোনামে দুটি খবর প্রকাশিত হয়।’
‘কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশে জুতাসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রি হয় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে। অন্যদিকে খাবার বিক্রি হয় খোলা অবস্থায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সঙ্গে সঙ্গে ২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনের ২৫, ২৯, ৩৩ ধারার ও ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২৭, ২৯, ও ৩৬ ধারার পরিপন্থি। তাছাড়া জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সংবিধানের ১৮(১) ও ৩২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ থাকলেও আপনারা নোটিশ গ্রহীতারা ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আমার উল্লেখিত মক্কেলরা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী অনুপ্রাণিত হয়ে জনস্বার্থে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে আপনাদের বরাবর এই নোটিশ পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।’
নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুল- কলেজ, মার্কেটের সামনেসহ ফুটপাত/ফুটপাতের পাশে নোংরা পরিবেশে নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার বিক্রি বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।