Search Suggest

সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগের পর পেনশন: ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

 


সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগের পর পেনশন: ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

একটি মামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে আজ এই বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের ১ম ভাগের ৩০০ নম্বর রুলটি সংবিধানবিরোধী কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন একজন সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ। উনি ১৯ বছর বিচার বিভাগে চাকরি করে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধার জন্য আবেদন করেন। আইন, বিচার ও সংসদীয় मामলা মন্ত্রনালয় তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে। কিন্তু বাংলাদেশের কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের অফিস একটি মেমো জারি করে জানায় যে, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের ১ম ভাগের ৩০০ (ক) নম্বর রুলের কারণে তাঁর চাকরি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ায় তিনি কোনো পেনশন পাবেন না।

রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেন যে, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের ১ম ভাগের ৩০০ (ক) নম্বর রুল, "চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে পেনশন বাজেয়াপ্ত" এই অংশটি সংবিধানবিরোধী। কারণ, নিষ্কলঙ্ক চাকরিজীবনের রেকর্ডধারী একজন কর্মচারীকে কোনো অন্যায় কাজের জন্য অপসারিত করা কর্মচারীর সমান আচরণ করা যাবে না। 'পদত্যাগ' এবং 'অপসারণ' দুটি ভিন্ন ধরণের কর্মচারী একই শাস্তির মধ্যে পড়তে পারবে না, যদিও 'পদত্যাগ' ও 'অপসারণ' এর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তবে, হাইকোর্ট রায় দেন যে, ৩০০ (ক) নম্বর রুলের বাকি অংশ এবং ৩০০ (খ) নম্বর রুল বৈধ। Md Mahboob Murshed Vs. Bangladesh & ors (16 SCOB [2022] HCD 7) 

বাংলাদেশে সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগের পর পেনশন না পাওয়ার নিয়মটি বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়ম অনুসারে, একজন সরকারি কর্মচারী চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে, তার চাকরি বাজেয়াপ্ত বলে বিবেচিত হয় এবং তিনি পেনশনের অধিকারী নন। তবে, যদি তিনি পদত্যাগের পর অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, তাহলে তার আগের চাকরির সময়কাল পেনশনের জন্য গণনাযোগ্য হয়।

এই নিয়মের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, এই নিয়মটি অসাংবিধানিক। কারণ, এটি কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

হাইকোর্ট রিট আবেদনটি মঞ্জুর করে এবং বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের ৩০০(এ) বিধির ওই অংশকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই নিয়মটি কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে, কারণ এটি পদত্যাগকারী কর্মচারীদের পেনশন থেকে বঞ্চিত করে। এছাড়াও, এই নিয়মটি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার, যেমন ন্যায়বিচারের অধিকার এবং সম্পত্তির অধিকার লঙ্ঘন করে।

আদালতের রায়ের ফলে, এখন একজন সরকারি কর্মচারী চাকরি থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি তার পেনশনের অধিকারী হবেন।

সার্ভিস রুলের বৈষম্যমূলক দিক

এই নিয়মের সবচেয়ে বৈষম্যমূলক দিক হল, এটি পদত্যাগকারী কর্মচারীদের পেনশন থেকে বঞ্চিত করে। কিন্তু, যদি একজন পদত্যাগকারী কর্মচারী অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, তাহলে তার আগের চাকরির সময়কাল পেনশনের জন্য গণনাযোগ্য হয়।

এই নিয়মটি কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে, কারণ এটি পদত্যাগকারী কর্মচারীদেরকে তাদের পেনশন থেকে বঞ্চিত করে। যেখানে, অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে যোগদানকারী কর্মচারীদের পেনশনের জন্য তাদের আগের চাকরির সময়কাল গণনাযোগ্য হয়।

সার্ভিস রুলের বৈষম্যমূলক প্রভাব

এই নিয়মের বৈষম্যমূলক প্রভাব রয়েছে। কারণ, এটি কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে। কারণ, একজন কর্মচারী চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে তিনি তার পেনশন থেকে বঞ্চিত হবেন।

এছাড়াও, এই নিয়মটি কর্মচারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। কারণ, একজন কর্মচারী জানেন না যে, তিনি যদি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে তিনি তার পেনশন থেকে বঞ্চিত হবেন কিনা।

আদালতের রায়ের গুরুত্ব

হাইকোর্টের রায়টি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কারণ, এটি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। এছাড়াও, এই রায়টি কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সহায়ক হবে।

আশা করা যায়, সরকার এই রায়ের আলোকে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের সংশ্লিষ্ট বিধিটি সংশোধন করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন