Search Suggest

নাবালক সন্তানদের হেফাজত: মা বনাম দাদা-দাদী | কে জিতলো মামলায়?

ক্ষুদ্র সন্তানদের হেফাজত (children's custody) শিশু অভিভাবকত্ব (child guardianship) পরিবার আইন (family law) উচ্চ আদালতের রায় (high court judgment)

 

বাংলাদেশের উচ্চ আদালত সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় নাবালক সন্তানদের হেফাজত নিয়ে মা ও দাদা-নানির মধ্যে চলমান বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে। এই রায়ে শিশুদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আইনগত বিধানগুলি সাবধানে বিবেচনা করা হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের মামলায় গাইডলাইন হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

১. শিশুহীন পরিবারে উত্তাল সময়: অভিযোগ ও উদ্বেগ

ঘটনার সূত্রপাত এক পিতৃহীন পরিবারের মর্মান্তিক পরিস্থিতি থেকে। একজন পিতৃহীন শিশুর দুই সন্তানের হেফাজত নিয়ে তাদের মা ও পিতামাতার (দাদা-দাদি) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। দাদা-দাদিরা উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে, যেখানে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে শিশুদের মায়ের হেফাজতে তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বিপন্ন হতে পারে। এমনকি তারা অভিযোগ করেন যে মা শিশুদের সাথে দেখা করার তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছেন।

২. আইন ও মমতার মিলনস্থল: শিশুদের স্বার্থই প্রধান

মামলাটির শুনানিকালে উচ্চ আদালত শিশুদের কল্যাণকেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেন। আদালত শিশুদের শৈশব, মানসিক অবস্থা, পরিবারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সহকারে তাদের মা ও দাদা-দাদির সাথে সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়াও, অভিভাবকত্ব ও ওয়ার্ডস আইন, ১৮৯০ এর বিধানগুলি সাবধানে বিশ্লেষণ করা হয়।

৩. উচ্চ আদালতের রায়: শিশুর মতামত ও মায়ের হেফাজত

উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয় যে শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করা হলেই শুধু তাদের হেফাজতের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আদালত বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী ও শিশুকল্যাণ বিশেষজ্ঞের মতামত পর্যালোচনা করে এবং শিশুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মতামত গ্রহণ করেন। এই পর্যালোচনা ও সাক্ষাৎকারের ফলে আদালত সিদ্ধান্তে আসেন যে শিশুরা তাদের মায়ের সাথে থাকতেই বেশি নিরাপদ ও সুখী বোধ করে। তাই, আদালত শিশুদের মায়ের হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, দাদা-দাদির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।

৪. দেখা করার অধিকার: সীমিত কিন্তু মানবিক

উচ্চ আদালত দাদা-দাদির দর্শনের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে, এই অধিকার শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটানোর শর্তে সীমিত রাখা হয়। আদালত নির্দেশ দেন যে দাদা-দাদি শিশুদের মায়ের সম্মতি ও অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে তাদের সাথে দেখা করতে পারবেন। এতে একদিকে শিশুদের মায়ের সাথে বন্ধন অটুট থাকবে, অন্যদিকে দাদা-দাদির সাথে তাদের সম্পর্কও বজায় থাকবে।

৫. পারিবারিক আদালতের ভূমিকা: দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান

শিশুদের কল্যাণের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে উচ্চ আদালত এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। আদালত পারিবারিক আদালতকে এই মামলাটির শুনানির জন্য অগ্রাধিকার দিতে এবং যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানায়। এটি ভবিষ্যতে একই ধরনের মামলায় দ্রুত ও ন্যায্য নিষ্পত্তির পথরেখা নির্দেশ করে।

৬. উপসংহার: শিশুদের কল্যাণই সবার আগে

উচ্চ আদালতের এই রায় স্পষ্ট করে যে শিশুদের কল্যাণই হেফাজতের মামলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। আইনগত বিধান, শিশুদের ইচ্ছা ও মানসিক অবস্থা, এবং পারিবারিক পরিবেশকে সাবধানে বিবেচনা করে উচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছে। এই রায় না শুধু এই নির্দিষ্ট মামলাটির সমাধান করেছে, বরং ভবিষ্যতে একই ধরনের মামলায় গাইডলাইন হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি আশা করা যায় যে এই রায় শিশুদের কল্যাণকে সবার আগে রেখে সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাধানের পথ সুগম করবে। [16 SCOB [2022] HCD 128]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন