Search Suggest

"পার ইনকুরিয়াম" ডক্ট্রিনের প্রয়োগ: আপিল বিভাগের রায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য কী অর্থ বহন করে

পার ইনকুরিয়াম (per incuriam) ভুল রায় সংশোধন উচ্চ আদালত নিম্ন আদালত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী চাকরি বিষয়ক মামলা বাংলাদেশের ন্যায় ব্যবস্থা

 


পার ইনকিউরিয়াম (per incuriam) একটি ল্যাটিন শব্দ যা ইংরেজিতে "through inadvertence" বা "through carelessness" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। আইনি পরিভাষায়, এটি এমন একটি রায় বা সিদ্ধান্তকে বোঝায় যা আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে অগ্রাহ্য করে বা বিবেচনায় নেয় না।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি আদালত একটি রায় দেয় যে একটি নির্দিষ্ট ধরনের চুক্তি অবৈধ। কিন্তু পরবর্তীতে, আইনের একটি নতুন সংশোধনী প্রকাশিত হয় যা সেই ধরনের চুক্তিকে বৈধ করে তোলে। এই ক্ষেত্রে, প্রথম আদালতের রায় পার ইনকিউরিয়াম হবে কারণ এটি নতুন আইনের সংশোধনীকে বিবেচনায় নেয়নি।

পার ইনকিউরিয়াম রায়গুলি সাধারণত অন্য আদালত দ্বারা বাতিল করা হয়। এটি কারণ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে অগ্রাহ্য করে বা বিবেচনায় নেয় না এমন রায় আইনের স্থিতিশীলতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

এখানে আরেকটি উদাহরণ:

ধরুন একটি আদালত একটি রায় দেয় যে একটি নির্দিষ্ট ধরনের বাণিজ্যিক কার্যকলাপ অবৈধ। কিন্তু পরবর্তীতে, আদালত আবিষ্কার করে যে সেই ধরনের বাণিজ্যিক কার্যকলাপটি একটি প্রাচীন আইন দ্বারা অনুমোদিত ছিল। এই ক্ষেত্রে, প্রথম আদালতের রায় পার ইনকিউরিয়াম হবে কারণ এটি প্রাচীন আইনটিকে বিবেচনায় নেয়নি।

এখানে একটি চাকরি সংক্রান্ত মামলার আলোকে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল, রীটের গ্রহণযোগ্যতা, পার ইনকিউরিয়াম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

রিট পিটিশন: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর চাকরি বিষয়ে উচ্চ আদালতের মতামত:

  • একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী তার চাকরি বিষয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন হাইকোর্ট বিভাগে। 
  • হাইকোর্ট তার পক্ষে রুল এবং স্থগিতাদেশ জারি করেন।
  • সরকার হাইকোর্ট এর এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন আপিল বিভাগে, যুক্তি দেখান যে চাকরি বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অবশ্যই প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে প্রতিকার চাইতে হবে।
  • আপিল বিভাগ সরকারের যুক্তি গ্রহণ করেন এবং আগের একটি রায় (৭১ ডিএলআর (এডি) ৩১৯) ভুল বলে উল্লেখ করে সেটি থেকে সরে আসেন। সেই আগের রায়টি বলেছিল যে চাকরি বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের রিট পিটিশন দায়ের করার অধিকার আছে।
  • আপিল বিভাগ হাইকোর্ট এর রুল বাতিল করেন।

প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল বনাম উচ্চ আদালত: চাকরি বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার পথ:

  • এই মামলাটি তুলে ধরে যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চাকরি বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য দুটি পথ রয়েছে: প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল এবং উচ্চ আদালত।
  • আপিল বিভাগের রায়টি নিশ্চিত করে যে চাকরি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে যেতে হবে।
  • যদি ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তে কেউ সন্তুষ্ট না হন, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার অধিকার রয়েছে।
  • এই মামলাটি প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের গুরুত্ব এবং উচ্চ আদালতের নজির স্থাপনের ক্ষমতা তুলে ধরে
  • আপিল বিভাগ তাদের নিজস্ব একটি আগের রায়কে সংশোধন করেছেন "পার ইনকুরিয়াম" ডক্ট্রিনের মাধ্যমে।
  • এই ডক্ট্রিন বলে যে যদি কোনো রায় ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া হয়, তাহলে উচ্চ আদালত সেই রায় থেকে সরে আসতে পারে।
  • এই মামলাটিতে, আপিল বিভাগ মনে করেছেন যে ৭১ ডিএলআর (এডি) ৩১৯ রায়টি ভুল ছিল, কারণ সেখানে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের রিট পিটিশনের অধিকার স্বীকৃত করা হয়েছিল।
  • আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নজির স্থাপন করবে এবং "পার ইনকুরিয়াম" ডক্ট্রিনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সম্পূর্ণ রায় অনুসরণ: ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা:

  • বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
  • এই মামলায়, আপিল বিভাগের রায়টি পুরোপুরি মেনে নিতে হবে এবং হাইকোর্ট এটিকে কোনোভাবেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।
  • ১১১ অনুচ্ছেদ উচ্চ আদালতের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করে এবং ন্যায়িক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

"পার ইনকুরিয়াম" ঘোষণার ক্ষমতা: প্রধান বিচারপতির ভূমিকা:

  • শুধুমাত্র আপিল বিভাগই নিজস্ব রায়কে "পার ইনকুরিয়াম" হিসেবে ঘোষণা করতে পারে, বলা যায় ভুল তথ্যের কারণে দেয়া হয়েছে।
  • এই মামলায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ৭১ ডিএলআর (এডি) ৩১৯ রায়কে "পার ইনকুরিয়াম" ঘোষণা করে।
  • এই সিদ্ধান্ত দেখায় যে প্রধান বিচারপতি ন্যায়িক পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

নিম্ন আদালতের সীমাবদ্ধতা: উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা:

  • নিম্ন আদালতগুলো উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে পারে না, এমনকি যদি তারা মনে করেন যে এটি ভুল হতে পারে।
  • সকল আদালত আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে বাধ্য।
  • এই সীমাবদ্ধতা আপিল বিভাগের কর্তৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে এবং ন্যায়িক স্তরবিন্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরে।
  • এই মামলাটি বাংলাদেশের ন্যায় প্রশাসনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ দেয়।
  • আপিল বিভাগের এই রায়টি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চাকরি বিষয়ে ভবিষ্যতের মামলাগুলোতে প্রভাব ফেলবে।
  • ভুল বা পুরনো নজিরের ভিত্তিতে দেওয়া রায় সংশোধনের জন্য "পার ইনকুরিয়াম" ডক্ট্রিনের ব্যবহার নজির স্থাপন করেছে।
  • এই মামলাটি ন্যায়িক পুনর্বিবেচনার গুরুত্ব তুলে ধরে। যদি ভুল হয়, তাহলে আদালত নিজেদের সিদ্ধান্ত সংশোধন করতে পারে।


উপসংহার

পার ইনকুরিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ডক্ট্রিন যা ভুল বা অসাবধানতার কারণে দেওয়া রায় সংশোধনের জন্য অনুমতি দেয়। এই ডক্ট্রিনটি ন্যায়বিচারের গুরুত্বকে নিশ্চিত করে এবং নিশ্চিত করে যে ভুল তথ্য বা অসাবধানতার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

আমরা দেখতে পেয়েছি যে এই ডক্ট্রিনটি কীভাবে ব্যবহার করা হয় এবং এর কী কী প্রভাব রয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি যে এই ডক্ট্রিনটি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চাকরি বিষয়ে ভবিষ্যতের মামলাগুলোতে প্রভাব ফেলবে।

এই ডক্ট্রিনটি বাংলাদেশের ন্যায় ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ গঠন করবে। এটি নিশ্চিত করবে যে ভুল তথ্য বা অসাবধানতার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।

  • পার ইনকুরিয়াম ডক্ট্রিনটি ন্যায়বিচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি নিশ্চিত করে যে ভুল তথ্য বা অসাবধানতার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
  • পার ইনকুরিয়াম ডক্ট্রিনটি বাংলাদেশের ন্যায় ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। এটি নিশ্চিত করে যে ভুল রায় সংশোধন করা যেতে পারে।
  • পার ইনকুরিয়াম ডক্ট্রিনটি বাংলাদেশের ন্যায় ব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এটি নিশ্চিত করে যে আদালত তাদের সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী।

Source:
18 SCOB [2023] AD 11

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন