একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীর সর্বত্রই আইন পেশা একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃত। একে ‘রয়েল প্রফেশন’ ও বলা হয়। আমাদের দেশেও একজন সৎ আইনজীবীর পেশাগত মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চে। যদিও এক শ্রেণীর নিন্দুক লোক অতি সম্মানের এই পেশাকে বরাবরই খাটো করে দেখানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে। তাদের জানা উচিত যে সম্মানের নিদর্শন স্বরূপ একমাত্র ‘ এডভোকেট” ও ‘বিচারক’ শব্দের পূর্বে ‘লার্নেড’ বা ‘বিজ্ঞ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অন্য কোন পেশাজীবীর নামের পূর্বে এ উপাধি দেয়া হয় না। পেশায় স্বাধীন, আপন কাজে অনমনীয়, সমাজের বুদ্ধিদীপ্ত, সুশিক্ষিত, নির্ভীক এক সচেতন অংশের নাম ‘আইনজীবী’।
[post_ads]
লর্ড ম্যাকমিলান এর মতে “অন্য কোন পেশা মানবজীবনকে এত স্পর্শ করে না।” একজন আইনজীবী তাঁর অবস্থানের প্রেক্ষিতে আদালতে অফিসার এবং বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত শ্রেণীর অন্তর্গত। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ও তাঁর মক্কেলকে পেশাগত উপদেশ প্রদানের জন্য জন সাধারণের উপর তাঁর প্রভাব অত্যন্ত প্রখর। আর এ প্রভাবের কারণেই ভাল হোক অথবা মন্দ হোক যে কোন কাজেই সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির চেয়ে একজন আইনজীবীর কর্মকান্ড, দৃষ্টান্ত ও আর্দশ সমাজের উপর অনেক বেশী কার্যকর।
আইনজীবীগণ আদালতে বিনীতভাবে সততার সাথে তাঁর মক্কেলের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছঁতে বিচারককে সরাসরি সহায়তা প্রদান করেন বিধায় আইনজীবীগণ আইন আদালতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অসংখ্য মৌলিক আইনগ্রন্থের প্রনেতা মরহুম গাজী শামসুর রহমান বলেন, কোন মানুষ ভ্রমের উর্দ্ধে নয়, সম্ভবত: বিচারকও নয়। বিচারকের ভ্রম ধরিয়ে দিতে পারে শুধু সেই ব্যক্তি যিনি জ্ঞানে, গুণে, মর্যাদায় এবং অবস্থানে বিচারকের সমকক্ষ। সেই ব্যক্তিই আইনজীবী।
[post_ads_2]
যাইহোক আইনজীবীর পেশাগত মান মর্যাদা বা সামাজিক মান মর্যাদা নিয়ে যতই আলোচনা করা হোক না কেন সমাজের হিংসুক শ্রেণীর কিছু মানুষ আইনজীবীদেরকে খাটো করার চেষ্টায় রত আছে। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। আইন আদালত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা না থাকায় তারা খুব সহজেই সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে থাকে।অত্যন্ত আশ্চর্য্য ও দুঃখের বিষয় এই যে একজন মানুষ যখন বিপদে পড়ে আইনজীবীর নিকটে আসেন তখন তার কাছে্ ঐ বিপদটি পৃথিবীর সবথেকে বড় বিপদ বলে মনে হয় এবং তিনি যেকোন উপায়ে ঐ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে চান। একজন আইনজীবী যখন তার পক্ষে লড়াই করে ঐ বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করেন, উদ্ধারের পর ঐ ব্যক্তিই আইনজীবীর বিরুদ্ধে নানান ধরণের অভিযোগ উঠান। এক্ষেত্রে আমি বলব ঐ ব্যক্তি অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেন। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ যেসকল অভিযোগ করে থাকে তা নিচে তুলে ধরা হলো।
ডাকাতির অভিযোগ
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত অভিযোগ হলো যে, আইনজীবীরা তাদের মক্কেলের পকেট ডাকাতি করে থাকেন।অভিযোগটি শুধু মিথ্যা এটাই নয় বরং আইনজীবীদের সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন গুজব সমাজে ছড়ানো হয়ে থাকে।তবে আগেই বলে রাখি প্রত্যেক পেশাতেই কিছু কুলাঙ্গার থাকে কিন্তু এই ধরণের কুলাঙ্গার ব্যক্তিদের কাজ কর্ম দিয়ে ঐ পেশার সকলকে বিচার করা অবুঝ, অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচায় বৈ আর কিছু নয়।
যেহেতু আইনপেশায় আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত কোন ফি নেই।আর নির্ধারিত ফি থাকাটাও সম্ভব নয়। কারণ একেক মামলার গতি প্রকৃতি একেক রকম হয়ে থাকে। কাজেই আইনজীবীরা মামলা-মোকদ্দমার গতি প্রকৃতি নির্ণয় করে ও মক্কেলের আর্থিক সামর্থ্যতার কথা বিবেচনা করে ফি নির্ধারণ করে থাকেন।কোন ব্যক্তি তার মামলা গ্রহণ করার পূর্বেই আইনজীবীর সহিত ফি এর ব্যাপারে চুড়ান্ত কথা বলে নিতে পারেন। ফি যদি ঐ ব্যক্তির সামর্থ্যের বাইরে চলে যায় তাহলে তিনি ঐ আইনজীবীকে বাদ দিয়ে তার পক্ষে অন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন।কোন আইনজীবী কোন ব্যক্তির নিকট থেকে জোর পূর্বক ক্ষমতা নিয়ে মামলা পরিচালনা করেন না। একজন আইনজীবী তার অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রিটি অনুযায়ী যে মামলা কম টাকায় পরিচালনা করতে রাজি হন, ঠিক একই মামলা অন্য আইনজীবী অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রিটি অনুযায়ী অধিক টাকায় পরিচালনা করতে রাজি হতে পারে্ন। সুতরাং একজন মক্কেলের অপশন আছে তিনি কোন আইনজীবীর নিকট যাবেন। কেমন ধরণের আইনজীবী তার মামলা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নিয়োগ দিবেন।
অনেকের অভিযোগ আছে যে আইনজীবী মক্কেলের মামলা আটকে রেখে মক্কেলের নিকট হতে ইচ্ছামত টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন।এই অভিযোগটিও সঠিক নয়। কারণ কোন আইনজীবী কোন মক্কেলের মামলা আটকে রাখতে পারেন না। মামলা চলাকালীন সময়ে যদি কোন ব্যক্তি দেখেন যে তার নিযুক্তিয় আইনজীবী তার নিকট থেকে নির্ধারিত ফি এর তুলনায় বেশি ফি দাবি করছেন বা চুক্তিমত কাজ করছেন না, তাহলে তিনি ঐ আইনজীবীকে বাদ দিয়ে তার কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে নতুন কোন আইনজীবীকে নিয়োগ দিতে পারেন।যদি ঐ আইনজীবী অনাপত্তিপত্র দিতে রাজি না হন তাহলে ঐ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট বারে অভিযোগ করতে পারেন।সুতরাং জোর জবরদস্তি করে মামলা আটকে রেখে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো আইনজীবীরা মক্কেলের নিকট হতে বেশি টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা দীর্ঘায়িত করে থাকেন।আইন আদালত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে থাকেন। একটি মামলা দায়ের হওয়ার পরে আইন অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।এই আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে একজন আইনজীবী উক্ত মামলা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে পারেন না। এমনকি একজন বিচারকের ক্ষেত্রেও তা সম্ভব নয়।প্রত্যেক আইনজীবী তার নিজ নিজ মক্কেলকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্যে আইনি লড়াই করে থাকেন। এক্ষেত্রে বাদীপক্ষের আইনজীবী কোন মামলায় তার নিজ মক্কেলের সুবিধার্থে যেমন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, তদরূপ বিবাদী পক্ষের আইনজীবীও তার মক্কেলের সুবিধার্থে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।প্রত্যেক আইনজীবীই তার মোয়াক্কেলের সুবিধার্থে একটি মামলায় যা যা করণীয় তা করে থাকেন।কোন আইনজীবী ইচ্ছা করলেই কোন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারেন না। কোন মামলার বাদীপক্ষ যদি মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেন, তাহলে বিবাদীপক্ষ উক্ত মামলা দীর্ঘায়িত করার জন্য সকল কৌশল অবলম্বন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে কোন পক্ষকেই দোষ দেওয়া যায় না। এ ছাড়া ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা বা অবহেলার কারণে বছরের পর বছর পার হলেও মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় না। অনেক মামলায় তো বছরের পর বছর পার হয়ে যায় কিন্তু রাষ্ট্র পক্ষ স্বাক্ষীই হাজির করতে পারে না। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরি হয়। এ ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ারের করার কিছুই থাকে না। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোন মামলার তারিখ বা দিন ধার্য্য করার ক্ষমতা একমাত্র সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের এখতিয়ারাধীন।তবে কোন বিশেষ কারণে বাদী ও বিবাদী একমত হলে কোন মামলায় পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তাদের নিজের সুবিধামত তারিখের জন্য বিচারকের নিকট অনুরোধ করতে পারেন।সুতরাং আইনজীবীরা মক্কেলের নিকট হতে বেশি টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা দীর্ঘায়িত করে থাকেন অভিযোগটি সঠিক নয়।
আইনজীবীদেরকে বাসা ভাড়া ও ব্যাংক লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে অযাচিত ভয়
অনেক বাসার মালিক আইনজীবীদেরকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। এই ভাড়া না দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় যে অজুহাত দেখানো হয় তাহলো আইনজীবীদেরকে বাসা ভাড়া দিলে তারা বাসার মালিককে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় ফেলতে পারেন।তাছাড়া বাসার মালিক ইচ্ছে করলেই অন্য ভাড়াটিয়াদের মত আইনজীবীদেরকে আইন বহির্ভূতভাবে উচ্ছেদ করতে পারবেন না।এমন ভয় থেকেই মূলতঃ বাসার মালিক আইনজীবীদেরকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। একটু পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হয় যে, বাসার মালিক আইনের তোয়াক্কা না করেই সাধারণ ভাড়াটিয়াদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন, ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে দেন বা ভাড়াটিয়াদেরকে উচ্ছেদ করে থাকেন। এসব নিরীহ ভাড়াটিয়ারা কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না।কিন্তু একজন আইনজীবী মুখ বন্ধ করে এসব অন্যায় মেনে নিতে পারেন না বিধায় প্রতিবাদ করে বসেন। এই আইনানুগ প্রতিবাদে ভীত হয়ে বাসার মালিকরা আইনজীবীদেরকে বাড়ি ভাড়া দিতে চান না।একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, আইনজীবীরা যদি আইন বহির্ভূতভাবে কোন বাসায় থাকতেন বা ভাড়া না দিতেন তাহলে অধিকাংশ আইনজীবীর বিরুদ্ধেই ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের মামলা থাকত। কারণ ঢাকা শহরের অধিকাংশ আইনজীবী ভাড়া করা বাসায় থাকেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বাসার মালিকরা সাধারণ ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধেই উচ্ছেদের মামলা করার জন্য আইনজীবীদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন।কাজেই আইনজীবীদেরকে বাসা ভাড়া দিলে তারা বাসার মালিককে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় ফেলতে পারেন এই অভিযোগটি নিতান্তই অমূলক।
[post_ads]
তেমনিভাবে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলি আইনজীবীদেরকে ঋণ দিতে চান না। কারণ তারা আইনজীবীদেরকে ঋণ দিতে নিরাপদ মনে করেন না ।আইনজীবীদেরকে ঋণ দিলে উক্ত ঋণ তারা কখনোই পরিশোধ করবেন না বা কোনভাবেই উক্ত ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন। কিন্তু অন্যান্য পেশার মানুষদেরকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ মনে করেন। অথচ আশ্চর্য্যের বিষয় হলো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষদেরকে ঋণ দিয়ে সেই ঋণ উদ্ধারেও ব্যর্থ হচ্ছে।ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আদালতে যে হাজার হাজার মামলা রয়েছে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের, তার প্রায় সবগুলিই সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা।
আইনজীবীরা সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্যই পরিণত করতে পারেন
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আরেকটি কমন অভিযোগ হলো যে, আইনজীবীরা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যই পরিণত করতে পারেন। কিন্তু অভিযোগটি শুধুই মানুষের মনগড়া। পুরাতন দিনের বাংলা সিনেমা দেখে দেখে মানুষ আইনজীবীদের সম্পর্কে এমন ধারণা করতে শিখেছে। বাংলা সিনেমাগুলোতে দেখা যায় যে, নায়কের পক্ষে একজন আইনজীবী এবং ভিলেনের পক্ষে একজন আইনজীবী থাকেন। ভিলেনের পক্ষের আইনজীবী ভিলেন খুনি হওয়া সত্বেও বলেন তার মক্কেল নির্দোষ। তিনি খুন করেন নি। এইসব কাহিনী দেখে সাধারণ জনগণ ভেবে বসে যে, আইনজীবীরা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বলেন।একটা বিষয় জানা দরকার যে, মক্কেলকে মাস্টার অব ফ্যাক্টস এবং আইনজীবীকে মাস্টার অব ল বলা হয়।ঘটনাস্থলে বিচারক বা আইনজীবী কেউ উপস্থিত থাকেন না। তাই তাদের পক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে মক্কেল আইনজীবীর নিকট যে ঘটনার বিবরণ দেন আইনজীবী সেই ঘটনাকে শৈল্পিক রূপ দিয়ে নিজের মত করে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করে আদালতে উপস্থাপন করে থাকেন।আইনজীবীর দায়িত্ব হলো তার মক্কেলের কথা নিজের মত করে আদালতে উপস্থাপন করা। এক্ষেত্রে মক্কেল যদি মিথ্যা ঘটনার বর্ণনা দেন তাহলে তা আইনজীবীর জানার কথা নয়। মূলতঃ আইনজীবী যে ঘটনার বর্ণনা আদালতে উপস্থাপন করেন তা আইনজীবীর নিজস্ব কোন কথা নয়। সেই কথাগুলি তার মক্কেলের।আইনজীবী হলেন তার মক্কেলের প্রতিনিধি। প্রতিনিধি হিসেবে তার মক্কেলের কথাগুলি নিজের মুখে আদালতে উপস্থাপন করাই আইনজীবীর কাজ। আইনজীবীর সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আইনজীবী যেহেতু মাস্টার অব ল, সেহেতু তিনি শুধু আাদালতে আইনের ব্যাখা দিবেন। আর আইনগত বিষযে কোন মিথ্যা বলার সুযোগ নেই। যেহেতু এটা একটি দালিলিক বিষয়।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বাদীপক্ষের আইনজীবী যেমন বিজ্ঞ, তেমনি বিচারক এবং আসামী পক্ষের আইনজীবীও বিজ্ঞ।বাদীপক্ষের আইনজীবী মিথ্যা বললে আসামী পক্ষের আইনজীবী মুখ বন্ধ করে সেটা মেনে নিবেন না। বা কোন আইনজীবী মিথ্যা বললেই বিচারক সেটা বিনাবাক্যে মেনে নিবেন এমনটি ভাবা যুক্তিযুক্ত নয়।একটি মামলার নিষ্পত্তি শুধুমাত্র আইনজীবীদের বক্তব্যের উপর নির্ভর করেই করা হয় না। স্বাক্ষ্য প্রমাণসহ অনেক বিষয় এর সাথে জড়িত।যেহেতু মক্কেলের মুখ থেকে শোনা ঘটনাই আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করেন সেহেতু সত্য বা মিথ্যার সংযোগ শুধুমাত্র মক্কেলের সাথেই থাকে।কোন আইনজীবী সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য বলে উপস্থাপন করতে পারেন না।
সমাজে নিন্দুকের অভাব নেই। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি যে, অনেক আইনজীবী আছেন যারা গরীব মোয়াক্কেলের মামলা বিনা ফি তে বা নাম মাত্র ফি তে পরিচালনা করেন এবং তাদেরকে ভাল ফলাফলও পাইয়ে দেন।অনেক মানুষ আছে যারা অর্থের অভাবে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেল খাটছে।অনেক আইনজীবী আছেন যারা এই সব ব্যক্তিদের খুজে খুজে বের করে বিনা ফি তে তাদের মামলা পরিচালনা করে তাদেরকে মুক্ত করছেন। আইনজীবীরাই সমাজের অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে আদালতকে সর্বোচ্চ সহায়তা করছেন। ধর্ষিতাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিচ্ছেন। ঘর হারা কে ঘর ফিরিয়ে দিচ্ছেন।অনেককে অশান্তির নরক থেকে উদ্ধার করে শান্তির সুবাতাসে নিয়ে আসছেন আইনজীবীরাই।অন্যায়ভাবে চাকরী হারানো ব্যক্তিকে চাকরী ফিরিয়ে দিচ্ছেন আইনজীবীরাই।তাছাড়া নিন্দুকদের কাছে জানতে চাই বর্তমানে কোন পেশার মানুষের ভিতরে নৈতিকতা আছে?প্রত্যেক পেশার মানুষই তাদের স্ব স্ব পদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সুযোগ পেলে একজন রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশসহ সকল পেশার মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাধারণ জনগণের পকেট কাটতে দ্বিধা করেন না।কোন একটি নির্দিষ্ট পেশার দুই একজনের সাথে কারো তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকতেই পারে। তাই বলে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ঐ পেশার সকলকে মূল্যায়ন করাটা বড় অন্যায় বলে আমি মনে করি।
- [accordion]
- লেখক সম্পর্কে জানুন
- পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
- ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
- আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ]
- আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
- সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
- আমাদের কথা
- লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।