Search Suggest

বিচারক আসামীকে দোষী মনে করে বিচার করলে ন্যায়বিচার পাওয়া কি সম্ভব হবে?

পুরো বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যায়।কোন কোন অভিযুক্তকে আবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারের পর মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে সারা পৃথিবীর নিকট সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে পরিচিত করে দেয়। এ যেন বিচারের আগেই আরেক বিচার। যেটিকে আমরা মিডিয়া ট্রায়াল বলি।একজন অভিযুক্তের কিন্তু তার অভিযোগের বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকতে পারে। কিন্তু মিডিয়া ট্রায়ালে কোন অভিযুক্তের বক্তব্য আমরা কখনো শুনতে পাইনা। মিডিয়াতে একজন অভিযু্ক্তকে উপস্থাপন করে তার যাবতীয় অপরাধের ফিরিস্তি বর্ণনা করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেখানোর চেষ্টা করে থাকে যে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি কত বড় অপরাধী(?)।মামলার উপযুক্ত বিচার শেষে যখন ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে যান তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঐ ব্যক্তিকে পূণরায় মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে এটা বলে না যে, না। এই ব্যক্তি আসলে নির্দোষ। তাকে অন্যায়ভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। সরি। ঐ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেলেও তার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই যায়, তাইনা? সারা পৃথিবীর নিকট সে একজন অপরাধী হয়েই থেকে যায়। আমরা সাধারণ আম জনতা। মিডিয়া দ্বারা আমাদের চিন্তা চেতনা সব সময় প্রভাবিত হয়।মিডিয়াতে কোন খবর বের হলেই আমরা ঢালাও ভাবে সেই খবরটাকে সত্য বলে মনে করি। শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা। চায়ের দোকান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্রই থাকে সরগরম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গ্রেফতার হওয়া বা মামলায় জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিই কি অপরাধী? নির্দোষ ব্যক্তিকে কি মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে না? স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই কি বলে দেওয়া সম্ভব যে কে অপরাধী আর কে নির্দোষ? এটা বলা সম্ভব নয় বলেই তো আইন আদালতের সৃষ্টি।কে প্রকৃত অপরাধী আর কে নির্দোষ বা কার অপরাধ কতটুকু সেটা উপযুক্ত বিচার শেষেই বলা সম্ভব।আপনার সামনে যদি একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তিকে খুন করে তারপরও আপনি বলতে পারেন না যে খুন করা ব্যক্তিটিই আসলে প্রকৃত অপরাধী। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ আমরা অনেক সময় যা দেখি সেটা ঘটে না আবার যেটা ঘটে সেটা দেখতে পাইনা। এটাই বাস্তব।

একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট তাকে হাজির করতে হয়ে।হাজির করার পর তার পক্ষে জামিন চাওয়া হলে বা রিমান্ডের আবেদন করা হলে, ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে জামিন দিতে পারেন বা রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন বা ‍উভয় দরখাস্ত না মঞ্জুর করে উক্ত ব্যক্তিকে জেল হাজতে প্রেরণ করতে পারেন।জেল হাজতে প্রেরণ করা হলে জামিন না পাওয়া পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে জেল হাজতে আটক রাখা হয়। এই হাজতবাসের মেয়াদ হতে পারে একদিন, কয়েকদিন, কয়েক মাস বা কয়েক বছর। যতদিন না ঐ মামলার বিচার শেষ হয় ততদিন পর্যন্তও আটক থাকতে হতে পারে।বর্তমানে সারা দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অনেক অনেক বেশি পরিমাণ ব্যক্তিকে আটক রাখা হচ্ছে যাদের অধিকাংশই হাজতি আসামী বা আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারস।

যদিও কিছু ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামীর অধিকার তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জামিনের জন্য একজন অভিযুক্তকে বিচারকের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্নরুপে বিচারকের উপর ন্যাস্ত। জামিন দেওয়ারে ক্ষেত্রে বা কোন মামলার বিচার করার ক্ষেত্রে একজন বিচারককে জুডিশিয়াল মাইন্ড বা বিচারিক মনোভাব নিয়ে বিচার করতে হয়। শুধুমাত্র আবেগের বশে তিনি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দেখতে হয় সেটা হলো-

    জামিন দেওয়া হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যাবে কিনা; অথবা
    জামিন নিয়ে পূনরায় অপরাধ সংঘটিত করবে কিনা; অথবা
    জামিন নিয়ে বিচারে বা তদন্তে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি করবে কিনা;


জামিন দিলে অভিযুক্তকে একটি বেলবন্ড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করতে হয় যেখানে একজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও তার নিযুক্তিয় আইনজীবী জামিনদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন যারা পরবর্তীতে আদালতে ঐ অভিযুক্তের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট একটি অর্থ জামিনদার বিজ্ঞ আদালতে দিতে বাধ্য থাকবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি জামিন নিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে সেই দায়ভার সম্পূর্ণরুপে জামিনদারের উপর বর্তায় এবং জামিননামায় উল্লেখিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি জামিন নিয়ে পূনরায় কোন অপরাধ করে তাহলে সেটি হবে একটি স্বতন্ত্র অপরাধ যার জন্য তাকে নতুন মামলায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।জামিন নিয়ে যদি তদন্তে বা বিচারে কোন অভিযুক্ত বাধা সৃষ্টি করে তাহলে তার জামিন বাতিল করে পূনরায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা ইস্যু করতে পারেন। মোট কথা জামিন নিয়ে জামিনের কোন শর্ত ভঙ্গ করলে ঐ অভিযুক্তের জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা ইস্যুর সুযোগ আছে। কিন্তু উপরোক্ত অজুহাতে কোনক্রমেই একজন অভিযুক্তকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস আটক রেখে বিচার করা সমর্থনযোগ্য নয়।আদালতপাড়ার একটি সু্পরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে একজন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ যতক্ষণ পর্যন্ত না উপযুক্ত বিচার শেষে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে বিচার ছাড়াই আটক রেখে তাকে ও তার পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার কি কোন যুক্তি আছে? আর জামিন দেওয়া মানে তো কোন আসামীকে খালাস দেওয়া নয়। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে তো গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো যাবে।              

একজন অভিযুক্ত মানে এমন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়েছে।অভিযুক্ত আর অপরাধী তো এক নয়। অভিযোগ যে কেউ যার তার বিরুদ্ধে আনতে পারে।অভিযোগ আনলেই অভিযুক্ত অপরাধী হয়ে যায় না। অপরাধী সাব্যস্ত করতে হলে স্বাক্ষ্য প্রমাণের দরকার হয়।কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো আর তাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেল হাজতে আটক রাখা হলো। এটা আমার দৃষ্টিতে মৌলিক ও  মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে হয়।

অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের সংবিধানও আমাদের জন্য কিছু মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের নিকট আশ্রয়লাভের অধিকার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার, স্বাধীনভাবে চলারফেরার অধিকার ইত্যাদি। আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ২৮ অনুচ্ছেদ মতে, (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। ৩১ অনুচ্ছেদ মতে আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ৩২ অনুচ্ছেদ মতে আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।৩৬ অনুচ্ছেদ মতে জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।

আমাদের দেশের সংবিধান জনগণের জন্য যে মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দিয়েছে সেই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হলে প্রতিকারের জন্য আদালতে যাওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে আদালতই এই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে থাকে। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক পিস ইয়াবার অভিযোগ আনা হলে তাকে দুই দিন হাজতবাস করতে  হয়। তা নাহলে ঢাকার আদালত উক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেন না। দশ পিচের অভিযোগ থাকলে বিশ দিনের আগে জামিন দেওয়া হয় না। অন্যান্য মাদক দ্রব্যের অভিযোগ দিলেও নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত হাজত বাস না হলে জামিন দেন না বিচারক। এই হাজতবাসের পরিমাণ কয়েকদিন থেকে ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক বছরও হতে পারে। ঐ অভিযুক্তের আইনজীবী অভিযুক্তের স্বপক্ষে যতবড় চারিত্রিক সনদপত্রই দেখান না কেন আদালত জামিন দিবেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তির পূর্বে কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকলেও নয়।তাহলে কি আদালত ধরে নেন যে, মাদক মামলার সকল আসামীই অপরাধী? আর অপরাধী মনে না করলে তাকে আটকে রাখার অধিকার কি আদালতের আদৌ আছে? আমি অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে। কিন্তু  আমি বলতে চাইছি যে, মাদকের মামলায় অভিযুক্ত সব ব্যক্তিই কি প্রকৃতপক্ষে অপরাধী? আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার জন্য মাদক মামলাকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সেকথা গ্রামের মুর্খ একজন মানুষও জানে অথচ বিচারক জানেন না এমনটা কি হয়? যাকে অন্যায়ভাবে ফাসানো হচ্ছে আর যে প্রকৃত অপরাধী সবাইকে একই মাপকাঠিতে বিচার করলে কি ন্যায়বিচার করা হয়? একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে হাজতে দিলে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে সে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার চেয়ে অনেকগুন বেশি যন্ত্রণার ভাগিদার হতে হয় তার পরিবারকে। সামাজিক মান মর্যাদার কথা নাই বা বললাম।


কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রকৃত বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই আটক রাখা হলে সেটা হয় আসলে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং ঐ ব্যক্তি ও তার পরিবার এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয় যেটা কোনভাবেই পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়না। ধরি কোন ব্যক্তির প্রতি কোন ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে আসা হল। এই অভিযোগের বিচার চললো প্রায় তিন বছর ধরে। এই তিন বছর অভিযুক্তকে জেল হাজতে বন্দি রাখা হল। উপযুক্ত বিচার শেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে আনিত ফৌজদারি অপরাধ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি অথবা এমনও হতে পারে ঐ অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখন এই মিথ্যা অভিযোগের জন্য কোন লোককে তিন বছর জেলখানায় বন্দি রেখে যদি বিচার কার্য পরিচালনা করা হয়, আর সে বিচারের ফলাফল হয় অভিযুক্তের বেকসুর খালাস, তাহলে, এই নির্দোষ ব্যক্তির জীবন থেকে যে তিনটি বছর হারিয়ে গেল তার ক্ষতিপূরণ কে দিবে এবং কিভাবে দিবে? বা আদৌ কি দেওয়া সম্ভব?

কোন ব্যক্তি দোষী না নিদোর্ষী তা উপযুক্ত বিচার শেষেই প্রমাণিত হয়। তাই বলে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত কোন অভিযুক্তকে আটক রাখা অমানবিক তো বটেই। আইনেরও পরিপন্থি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার যে দীর্ঘসুত্রিতা তাতে একজন অভিযুক্তকে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত জেল হাজতে অপেক্ষা করতে হলে তার পুরো জীবনটাই বর্বাদ হয়ে যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই ফৌজদারি অপরাধের বিচারের জন্য আদালতকে সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গণচীনের বিচার ব্যবস্থা পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুততর সময়ে সম্পন্ন হয়। সেই দেশের ফৌজদারি আদালতের আইনে বলা হয়েছে, কোন মামলা আদালতে উপস্থাপনের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তার বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। তবে সেই দেশে এক-দেড় মাস নয়, মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুরো বিচার কার্য সম্পন্ন করার নজিরও রয়েছে। একবার কুমিং প্রদেশে এক হংকংবাসী দম্পতিকে হেরোইনসহ পুলিশ গ্রেফতার করে। এই দম্পতি গ্রেফতার হবার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের বিচারকার্য সম্পন্ন করে তাদের মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছিল। তবে দ্রুত বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। বলা হয়,Justice hurried, justice buried। বাংলাদেশের আইনেও অন্যান্য দেশের মত বিচার কার্যক্রম শেষ করার জন্য একটি  নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময় সীমা মানা বা না মানা একজন বিচারকের জন্য ঐচ্ছিক বিষয় অর্থাৎ তিনি মানতেও পারেন আবার না মানলেও কারো করার কিছু নেই। তাইতো রাষ্ট্র বাদী অধিকাংশ মামলায় রাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হলেও ঐ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয় না। মামলা করার পর রাষ্ট্রপক্ষও যেন ঝিমুতে থাকে । সাক্ষী হাজির করে মামলা দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তা মনে করে না। ফলে ঐ মামলার আসামীদের জীবন মামলার দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে বন্দি হয়ে নিষ্পেষিত হতে থাকে যার দায়ভার কেউই নেয় না । বলা হয়- Justice delayed is justice denied.



যেমনটি বললাম মাদক মামলার কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির যদি পূর্বে কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকে অথবা ঐ ব্যক্তির পক্ষে যদি উন্নত চারিত্রিক গুনাবলীর অকাট্য প্রমাণও আদালতে পেশ করা হয় তাহলেও আদালত নিদির্ষ্ট হাজতবাস সম্পন্ন না হলে ঐ ব্যক্তিকে জামিন দিবেন না। আইনের নীতি অনুযায়ী যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ মনে করতে হয় তাহলে নির্দোষ একজন ব্যক্তি একদিন নয় এক ঘন্টার জন্য হলেও হাজতবাস করবে কেন? আদালত কি একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হাজতবাসের আদেশ দিতে পারেন? আর আদালত ঐ অভিযুক্তকে নির্দোষ মনে না করে অপরাধী হিসেবে মনে করলে ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তি কি ঐ আদালতের নিকট আদৌ কোন ন্যায় বিচার পাবে? কারণ বিচার করার পূর্বশর্ত হলো নিরপেক্ষ মন নিয়ে বিচার করা। এক্ষেত্রে কি নিরপেক্ষ মনের অস্তিত্ব পাওয়া গেল?
  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

১টি মন্তব্য

  1. পরীক্ষামূলক মন্তব্য।