Search Suggest

আদালতে হাতেখড়ি (৫ম পর্ব): আদালত হতে যেভাবে সহিমুহুরি নকল উঠাতে হয়


সুপ্রিয় শিক্ষানবিশ আইনজীবী ভাই ও বোনেরা, গত পর্বে আপনারা শিখেছেন কিভাবে আদালতে মামলা দায়ের করতে হয়। আজ আমরা শিখবো আদালত হতে কিভাবে কোন মামলার সার্টিফাইড কপি বা সহি মহুরি নকল উঠাতে হয় যেটা শেখা একজন নবীন বা শিক্ষানবিশ আইনজীবীর জন্য অপরিহার্য্য একটি বিষয়।একটি কথা আগেই বলে জেনে নিন যে, দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার নকল উঠানোর নিয়ম কানুন একই। শুধু স্থান আলাদা আলাদা।
[post_ads]
নকলের পিটিশন ক্রয় ও লেখা
প্রথমেই আপনার কাজ হবে নকলের পিটিশন ক্রয় করা। কিন্তু কোন ধরণের পিটিশন কিনবেন? নকলের পিটিশন তিন ধরণের হয়। ১। আর্জেন্ট (জরুরী ভিত্তিতে নকল উত্তোলনের জন্য), ২। সাধারণ/নরমাল (সাধারণ সময়ের মধ্যে নকল উত্তোলনের জন্য) এবং ৩। সাদা পিটিশন (নকলের ফটোস্ট্যাট কপি নেয়ার জন্য)। আপনার সিনিয়রের নিকট হতে জেনে নিবেন কোন ধরণের পিটিশন ক্রয় করতে হবে। এর পর সঠিকভাবে পিটিশনের নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে। কিভাবে লিখতে হবে সিনিয়রের নিকট থেকে বা অন্য কারও নিকট থেকে জেনে নিতে হবে। তারপর যথাস্থানে সিনিয়রের স্বাক্ষর নেওয়ার পরে বাকি কাজ করতে হবে।

পিটিশন জমা দেওয়া
পিটিশনে লেখা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরে অবশ্যই তার একটি ফটোকপি করে নিবেন চেম্বারে সংরক্ষণের জন্য। নকল খানা কোন কোন স্থানে আছে তা জেনে নিতে হবে। আমি যেহেতু ঢাকা বার এসোসিয়েশনের সদস্য সেহেতু আমি শুধুমাত্র ঢাকা জজ কোর্টের বিষয়টিই উল্লেখ করবো। ঢাকা জজ কোর্টের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অধীন মামলার সহিমুহুরি নকল উঠানোর জন্য সি. এম. এম. কোর্ট ভবনের ৫ তলায় একটি নকল খানা রয়েছে, দেওয়ানী মামলা/দায়রা মামলার সহিমুহুরি নকল উঠানোর জন্য জেলা জজ আদালতের নতুন ৮ তলা ভবনের ২য় তলায় একটি নকল খানা রয়েছে, মহানগর দায়রা মামলা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল মামলার সহিমহুরি নকল  উঠানোর জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের ৩য় তলায় আলাদা আলাদা নকল খানা রয়েছে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার সহি মুহুরি নকল উঠানোর জন্য বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থিত টিনশেড ভবনে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নকল খানা রয়েছে। 

যেই আদালতের মামলার সহিমুহুরি নকল উঠাতে হবে সেই আদালতের জন্য নির্ধারিত নকল খানায় আপনাকে পিটিশনটি নিয়ে যেতে হবে। ধরুণ আপনি সি.এম. এম. কোর্টের কোন মামলার সহিমুহুরি নকল উঠাবেন। তাহলে আপনাকে নকলের পিটিশনটি নিয়ে সি. এম. এম. কোর্টের ৫তলায় অবস্থিত নকল খানায় যেতে হবে। সেখানে নকল জমা দেওয়ার জন্য একটি বক্স আছে। আপনার নকলের পিটিশনটি ভাজ করে ঐ বক্সের ভিতরে ফেলে দিতে হবে।

নকলের মুড়ি সংগ্রহ
নকলের পিটিশনের দুইটি অংশ থাকে। নিচের একটি ছোট্ট অংশ নকলখানার লোকজন কেটে আলাদা করেন।এটাকে আদালত পাড়ায় নকলের মুড়ি বলা হয়।যেদিন আপনি নকলের পিটিশন বক্সের ভিতর ফেলবেন তারপরের দিন নকলখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী নকলের পিটিশন থেকে নকলের মুড়ি আলাদা করে বক্সের পাশেই একটি স্থানে মুড়িটি ঝুলিয়ে রাখে। এবং এন্ট্রি করে নকলের মুল পিটিশনটি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠিয়ে দেন যাতে তারা চাহিত নথিটি নকলখানায় প্রেরণ করেন। আপনাকে পরের দিন নকলখানায় গিয়ে ঐ মুড়িটি সংগ্রহ করতে হবে। আপনার মুড়িটি চেনার জন্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা নকলের পিটিশনের ফটোকপির সাহায্য নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট আদালতে যোগাযোগ
এরপর সংশ্লিষ্ট আদালতে অর্থাৎ মামলাটি যে আদালতে চলমান রয়েছে সেই আদালতের সংশ্লিষ্ট পিয়নের সাথে যোগাযোগ করে নকলের পিটিশন এসেছে কিনা খোজখবর নিতে হবে।আসলে পিয়ন যাতে তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট নথিটি নকলখানায় প্রেরণ করে সে ব্যাপারে তদ্বীর করতে হবে। না আসলে এখনো কেন এলো না সে ব্যাপারে খোজ খবর নেয়ার জন্য নকল খানায় যোগাযোগ করতে হবে।  
[post_ads_2]
নকলখানায় যোগাযোগ এবং নকল সংগ্রহ
আপনার মামলা যে আদালতে আছে সেই আদালতের মামলার সহিমহুরি নকলের দায়িত্বে  কোন কর্মচারী রয়েছে তা জেনে নিতে হবে। এরপর তার সাথে যোগাযোগ করে নকলের জন্য কিছু টাকা অগ্রিম দিতে হবে এবং বাকি টাকা সহি মুহুরি নকল হাতে পাওয়ার পরে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করতে হবে এবং জেনে নিতে হবে কবে সহিমুহুরি নকলটি পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যেদিন যেতে বলবেন সেদিন পূনরায় নকলখানায় গিয়ে বাকি টাকা পরিশোধপূর্বক সহিমহুরি নকলটি সংগ্রহ করতে হবে।

কি সহজ না? যদি একটু জটিল মনেও হয়, মাঠে নামলে এক্কেবারে পানির মত সহজ হয়ে যাবে।আরও নতুন কিছু জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আর কোন কিছু বুঝতে  অসুবিধা হলে নিচে মন্তব্যের ঘরে অবশ্যই জানাবেন।
  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

تعليق واحد

  1. Thanks