Search Suggest

আদালতে হাতেখড়ি (১ম পর্ব): বিভিন্ন আদালত পরিচিতি


সবারই স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে একটি সন্মানজনক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে ক্যারিয়ারকে উজ্জল করার। বাংলাদেশে যতগুলো আত্মনির্ভরকেন্দ্রিক ও সম্মানজনক পেশা রয়েছে তার মধ্যে আইন পেশা হলো সবার পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। এই পেশাকে রয়্যাল বা রাজকীয় পেশাও বলা হয়ে থাকে।শতাব্দীর পর শতাব্দী আইন পেশা স্বীকৃত হয়ে আসছে সম্মান ও ঐতিহ্যের পেশা হিসেবে।  এ পেশায় এসে একজন ব্যক্তি যেমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন, তেমনি সমাজে সবার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করারও সুযোগ পেয়ে থাকেন। সমাজ গঠনে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখার জন্য আইনজীবীদেরকে সোস্যাল ডক্টর বা সামাজিক ডাক্তার হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।এই পেশার গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান প্রজন্মের এই পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আইনজীবী হওয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে একজন তরুণ বা তরুণী আইন পড়া শেষে আদালত অঙ্গনে পা রাখে, কঠিন বাস্তবতার চোরাবালিতে সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে।আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় হতাশা আর ধৈর্য্যহারা হয়ে ছিটকে পড়েন এই পেশা থেকে। এর পিছনে ছোট বড় অনেকগুলো কারণ থাকলেও মূলতঃ আদালত পাড়ায় এসে কি করবো, কিভাবে করবো, কোথা থেকে শুরু করবো ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে দ্বিধা দ্বন্বে পড়ে যাওয়াও অন্যতম একটি কারণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজগুলোতে আইনের তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু আদালত পাড়ায় ওকালতি জীবন শুরু করতে এসে সবকিছু নতুন মনে হয়।কারণ এখানে তাত্তিক জ্ঞানের চেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে ব্যবহারিক জ্ঞানের যেটি বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজগুলোতে শেখানো হয় না।তাই বর্তমান প্রজন্ম  আইনজীবী হওয়ার যে মহৎ স্বপ্ন নিয়ে  আদালত পাড়ায় পা রাখে তাদের সেই মহৎ স্বপ্ন  পূরণে নিবিঘ্নে কাজ করে যেতে পারে সে জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র আয়োজন। আমি চেষ্টা করবো এই লেখার মাধ্যমে আদালতের ব্যবহারিক কাজগুলো এমনভাবে শিখিয়ে দেওয়ার যেন সবার মনে হয় যে তারা হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
[post_ads]
আজ আমরা বিভিন্ন আদালতের পরিচিতি সম্পর্কে জানবো যেটি ওকালতি শুরু করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর প্রথম কাজ হবে আদালত অঙ্গনে পা রাখার পর ঐ আদালত সম্পর্কে ভালভাবে অবগত হওয়া। আমি যেটি বুঝাতে চাচ্ছি সেটি হলো কোন আদালতের অবস্থান কোথায়, কোন আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়, কোন আদালতে দেওয়ানী মামলা ও পারিবারিক মামলা দায়ের করতে হয়, কোন আদালতে অর্থঋণ মামলা দায়ের করতে হয় বা কোন আদালতে ১৪৫/১০৭ ইত্যাদি ধারার মামলা দায়ের করতে হয় ইত্যাদি সম্পর্কে একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর অবশ্যই প্রথমে ভালভাবে আয়ত্ব করতে হবে।

আমি যেহেতু ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী, সেহেতু ঢাকা জজ কোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কোর্টের অবস্থান
ঢাকা জজ কোর্টে বর্তমানে মোটামুটি ৭ টি ভবন আছে যেখানে বিচারকার্য্য পরিচালিত হয়ে থাকে। ঢাকা জজ কোর্টের উত্তরপাশের ১০ তলা বিল্ডিংটা হলো মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত। এই কোর্টটি সাধারণত সি.এম.এম কোর্ট নামে পরিচিত। সি.এম.এম অর্থ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।এখানে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে অনেকগুলো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত রয়েছে যেগুলোকে ১, ২, ৩ এভাবে সিরিয়াল করা হয়েছে। মহানগর এলাকার সকল মামলা এই সব আদালতে দায়ের করা হয়।

সি.এম.এম কোর্টের ঠিক সামনে আরেকটি নতুন ১০ তলা ভবণ নির্মিত হয়েছে যেটিকে বলা হয় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। যদিও এখনো এই ভবনে বিচার কার্য পরিচালনা শুরু হয়নি। এখন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাশের টিনশেড ভবনে অস্থায়ীভাবে এজলাস তৈরি করে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাজ  করা হচ্ছে।এখানে একজন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে অনেকগুলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচারকার্য্য পরিচালনা করে থাকেন। এইসব আদালতে মহানগরের বাইরের এলাকার মামলা দায়ের ও বিচার কার্য্য পরিচালনা করা হয়।
[post_ads_2]
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ভবনের সামনে রয়েছে ডিসি বিল্ডিং। ডিসি বিল্ডিং এর উত্তর পাশের তিন তলায় বেশ কয়েকটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। মুলতঃ সি.এম.এম কোর্টে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কিছু এজলাস এখানে করা হয়েছে। এছাড়া ডিসি বিল্ডিংয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ বসেন। এই ভবনে নামজারী বিষয়ক মিস আপীল, মোবাইল কোর্টের মামলা, ১০৭ ধারা ও ১৪৫ ধারার মামলা ইত্যাদি দায়ের ও উহার বিচার কার্য পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

ডিসি বিল্ডিংয়ের পরে রয়েছে জেলা জজ আদালতের ৮তলা বিশিষ্ট নতুন বিল্ডিং। এই বিল্ডিংয়ে ঢাকা জেলার সকল দেওয়ানী, অর্থঋণ ও পারিবারিক মামলা দায়ের ও বিচার করা হয়। এছাড়া ঢাকা মহানগরী এলাকার বাইরের এলাকাধীন সকল ফৌজদারি মামরার (যে মামলার বিচার করার এখতিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নেই) বিচার পরিচালনা করা হয়।এই আদালতের প্রধান হলেন জেলা ও দায়রা জজ।জেলা ও দায়রা জজের অধীনে অনেকগুলো অতিরিক্ত এবং  যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ থাকেন।


জেলা জজের নতুন বিল্ডিংয়ের পর জেলা জজের ৫তলা বিশিষ্ট পুরাতন বিল্ডিং রয়েছে। এই বিল্ডিংয়ে ঢাকা জেলার সকল দেওয়ানী, অর্থঋণ ও পারিবারিক মামলা দায়ের ও বিচার করা হয়।মুলতঃ এই বিল্ডিংটাই আগে জেলা জজ আদালত হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় জেলা জজ নতুন বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা জজ কোর্টের সর্ব দক্ষিণে রয়েছে ৬ তলা বিশিষ্ট মহানগর দায়রা জজ আদালত। এই আদালতের প্রধান হলেন মহানগর দায়রা জজ। মহানগর দায়রা জজের অধীনে অনেকগুলো অতিরিক্ত এবং যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ এবং বিশেষ জজ থাকেন। এই বিল্ডিংয়ে শুধুমাত্র ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা হয়। এই বিল্ডিংয়ে  সাইবার ট্রাইবুন্যাল, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল, পরিবেশ আপীল আদালতসহ অনেকগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল ও বিশেষ জজ আদালত রয়েছে।

ঢাকা আইনজীবী ভবন সংলগ্ন মসজিদের পাশে আরেকটি ভবন রয়েছে যার নাম রেবতি ম্যানশন।এই ভবনটিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল, বিশেষ জজ আদালত ও দেওয়ানী আদালত রয়েছে।

একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ হলো কোন আদালত কোন ভবনে রয়েছে এবং ঐ ভবনে আর কি কি আছে, কোথায় কি কাজ হয় ইত্যাদি সম্পর্কে শুরুতেই জেনে নেয়া। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পোস্টে কজ লিস্ট কত ধরণের ও কিভাবে দেখতে হয়, হাজিরা বা পিটিশন কিভাবে লিখতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন