Search Suggest

অর্থঋণ আদালত : আইন ও বিচার পদ্ধতি


অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর অধীনে মামলার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে, আর যেসব ক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতির বর্ণনা পাওয়া যায় না সেই ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি প্রয়োগ করা হয়।

মামলার বাদি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই আইনের ৮ নম্বর ধারার অধীনে আরজি দাখিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করবে। আরজির সঙ্গে দালিলিক প্রমাণাদি দাখিল করতে হবে এবং আরজির বক্তব্য ও দালিলিক প্রমাণাদির সমর্থনে একটি হলফনামা আরজির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। আরজিটি যথাযথ হলে অর্থঋণ মামলা হিসেবে নির্ধারিত রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হবে।

উল্লেখ্য, যে ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়, সে ক্ষেত্রে বাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই মামলা দায়েরের পূর্বে ধারা ১২ এর বিধান সাপেক্ষে বন্ধককৃত সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে। বিবাদী মূল ঋণ গ্রহীতা কিংবা ঋণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা এবং তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টরকেও বিবাদী শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। বিবাদী বা বিবাদীদের প্রতি সমন জারি করতে হবে। আইনের ৭ নম্বর ধারায় সরাসরি, বিকল্প পদ্ধতি এবং অতিরিক্ত সমন জারির বিধান বর্ণিত আছে। সমন জারির পর, বিবাদীগণ ৯ ধারা অনুসারে ও ১০ ধারায় বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবে এবং মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। বিবাদী লিখিত জবাবের সঙ্গে দালিলিক প্রমাণাদি এবং সেই সঙ্গে একটি হলফনামা দাখিল করতে হবে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাদী লিখিত জবাব প্রদান না করে তাহলে একতরফাভাবে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

বাদী ১১ ধারা অনুসারে লিখিত জবাবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জবাব দাখিল করতে পারবে, কিন্তু বিবাদীর অতিরিক্ত জবাব দাখিলের কোনো সুযোগ নেই। ১৩(১) ধারা অনুসারে লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত উভয়পক্ষকে মৌখিক শুনানি শেষে কিংবা তাদের অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার্য বিষয় গঠন করবে। আর বিচার্য বিষয় না থাকলে আদালত অবিলম্বে রায় প্রদান করবেন। তবে আদালত মৌখিক যুক্তিতর্ক শুনতে বাধ্য নন। সাক্ষ্য সমাপ্ত হবার দশ দিনের মধ্যে রায় প্রদান করার বিধান রয়েছে আইনের ১৬ ধারায়।

অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এ বিবাদী উপস্থিত হলে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ২২ ধারায়। বিবাদী জবাব দাখিলের পর আদালতের সহায়তায় মধ্যস্থতার বিধান আছে। এছাড়াও ৩৮ ধারাতেও জারির পর্যায়ে মধ্যস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।

অর্থঋণ আদালতের রায়, আদেশ বা ডিক্রি চূড়ান্ত এবং এই রায়, আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। আদালতের আদেশ বা রায়ে ডিক্রিকৃত টাকা ৬০ দিনের মধ্যে যেকোনো একটা সময়সীমা নির্ধারণ করে তার মধ্যে পরিশোধের জন্য বিবাদীকে নির্দেশ প্রদান করবেন। আইনের ১৭ ধারায় মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে যা বিবাদী হাজির হলে ৯০ দিন এবং হাজির না হলে ৩০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে যথাযথ কারণ থাকলে ৯০ দিনের সঙ্গে আরও ৩০ দিন যোগ করা যাবে। সময়ের হিসাব গণনার বিধান রয়েছে ৪৮ ধারায়। একতরফা ডিক্রি প্রদান এবং রদের বিধান বর্ণিত হয়েছে ১৯ ধারায়।

ডিক্রি জারির বিধান বর্ণিত হয়েছে ২৬ থেকে ৩৯ ধারায়। অর্থঋণ মামলার ডিক্রি মূলত টাকা আদায়ের ডিক্রি। তবে এই ডিক্রি জারি সংক্রান্ত নিলাম, গ্রেফতার ও দেওয়ানি আটক ইত্যাদি বিষয়ে কিছু বিধানাবলি সংযোজন করা হয়েছে। ডিক্রি জারি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এবং দেওয়ানি কার্যবিধির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে অর্থঋণ আদালত আইনই প্রাধান্য পাবে। অর্থঋণ আদালতে বিবাদীর বিরুদ্ধে ডিক্রি হয় টাকা আদায়ের জন্য এবং বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রয়ের জন্য।

বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রির ডিক্রি জারি করা যাবে বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রির মাধ্যমে এবং টাকার ডিক্রি জারি করা যায় দায়িককে দেওয়ানি কয়েদে আটক রাখার মাধ্যমে অথবা তার সম্পত্তি ক্রোক ও নিলাম বিক্রির মাধ্যমে বা উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে। জারি মামলায় তৃতীয় পক্ষ দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের বিধান মতে দাবি সম্বলিত আবেদন পেশ করলে ৩২(২) ধারা অনুসারে ডিক্রির অনাদায়ী অংশের ১০% জমা প্রদান করলে ৩২ ধারার বিধান মতে আদালত বিবেচনা করলে এই আবেদন মিস মামলা হিসেবে রেজিস্ট্রিভুক্ত হবে।

৪১ এবং ৪২ ধারায় যথাক্রমে আপিল ও রিভিশনের বিধানাবলি বর্ণিত আছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা যাবে, তবে অর্থঋণ আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না, সে ক্ষেত্রে রিট মামলা দায়ের করা যাবে। আপিল বা রিভিশনের যেকোনো পর্যায়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে আদালতকে অবহিত করতে হবে।

অর্থঋণ আদালতের রায়, আদেশ বা ডিক্রি সকল বিবাদিগণের বিরুদ্ধে যৌথ ও পৃথকভাবে কার্যকর হবে। ডিক্রি জারির মামলা সব বিবাদি-দায়িকের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে পরিচালিত হবে। কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। ডিক্রি জারির মাধ্যমে দাবি আদায় হওয়ার ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে মূল ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করবেন। মূল ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তির পরও যদি দাবি আদায় না করা যায় তাহলে তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা ও তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টরের সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা ও তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টর যদি দাবি পরিশোধ করে তাহলে ডিক্রি তাদের অনুকূলে স্থানান্তরিত হবে এবং তারা মূল ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করতে পারবেন।

Source: Taken from here

  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

إرسال تعليق