Search Suggest

অগ্রক্রয়ের মামলা কি, কখন ও কিভাবে করা যায়?

অগ্রক্রয় বা প্রি-এমশন শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, কোন কিছু ক্রয়ের ক্ষেত্রে একজনকে আরেকজনের তুলনায় অগ্রাধীকার দেয়া । মুসলিম আইনে অগ্রক্রয়কে সাফা বলে ।

কোর্ট কাচারিতে বা আমাদের সমাজে অগ্রক্রয়ের তুলনায় প্রি-এমশন শব্দের প্রচলন অনেক বেশি। আজকে আমরা জানবো অগ্রক্রয় কি, কারা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারে এবং অগ্রক্রয় সম্পর্কিত না তথ্য। তো চলুন শুরু করা যাক।  শুরু করার আগে একটি 

অগ্রক্রয় কে যদি আরেকটু সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করি তাহলে দাড়ায়- কোন স্থাবর সম্পত্তি যদি বিক্রি হয় তাহলে ঐ সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যক্তির অধিকার সবার আগে থাকে। আইনের ভাষায় এই অধিকারকে অগ্রক্রয়ের অধিকার বলা হয়।  

যদি একটি উদাহরণ দিয়ে বলি তাহলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। ধরুন, কামাল ও জামাল আপন দুই ভাই। কামাল উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত তার এক খন্ড স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়। এই খন্ড জমি কেনার ক্ষেত্রে জামালের অধিকার সবার আগে। জামাল যদি এই জমি কিনতে চাই তাহলে অন্য কেউ এই সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না। কারণ ক্রয়ের অধিকার তার সবচেয়ে বেশি। এটাই হলো প্রিয়েমশন।

আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের অগ্রক্রয় হয়ে থাকে।
প্রথমত, ‘রাষ্ট্রীয় আধগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (সংশোধনী) ২০০৬ এর ৯৬ ধারা অনুসারে;
দ্বিতীয়ত, ‘অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন এর ২৪ ধারা অনুসারে;
তৃতীয়ত, মুসলিম আইনের বিধানমতে;
[post_ads]
কারা অগ্রক্রয়ের আবেদন করতে পারেনঃ
‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (সংশোধনী ২০০৬) এর ৯৬ ধার অনুযায়ী, উত্তরাধিকার সূত্রে যদি কেউ সহ-শরিক হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি প্রি-অ্যামশন বা অগ্রক্রয় মিস কেইস করতে পারবে। তবে উত্তরাধিকার ছাড়া ক্রয়সূত্রে বা অন্য সহ-শরিকরা এই আইন অনুযায়ী কোন মামলা করতে পারবেন না। ২০০৬ সালের আগে অন্যান্য শরিকরা এই আইনের অধীন মামলা করতে পারতেন। কিন্তু ২০০৬ সালের সংশোধণী আসার পর এখন শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সুত্রে যারা সহ শরীক তারাই কেবল এই আইনে প্রতিকার পাবেন।

কৃষি জমি বিক্রয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত মানতে হবেঃ

নিয়ম হচ্ছে, জমি বিক্রয়ের আগে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৮৯ ধারা অনুযায়ী উত্তরাধিকার সুত্রে সহ-শরিকদের ওপর নোটিস দিতে হয়।এ অনুযায়ী নোটিস পাওয়ার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে হয়।

যদি নোটিশ না দিয়ে কোন জমি গোপনে বিক্রয় করা হয় তাহলে যেদিন বিক্রয়ের বিষয়টি জানা যাবে সেদিন থেকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। তবে বিক্রয় দলিল রেজিষ্ট্রি হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা না করলে ঐ মামলা করার অধিকার আর থাকবে না। তার মানে হলো ঐ দলিল রেজিষ্ট্রি হয়ে যাওয়ার তিন বছর পরে যদি আপনি বিক্রির বিষয়টি জানতে পারেন তাহলে আর মামলা করতে পারবেন না।

এ মামলায় যতজন উত্তরাধিকারসুত্রে সহ-শরিক থাকে এবং ঐ জমির ক্রেতা সবাইকে পক্ষভুক্ত করতে হয়। 
আদালতে মামলা দাখিল করার সময় কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মানে হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় যে বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে, সে পরিমাণ অর্থ। 

এছাড়া বিক্রয় দলিলে যে পরিমাণ অর্থের উল্লেখ আছে, সে পরিমাণ অর্থের ওপর শতকরা ২৫ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণ আদালতে জমা দিতে হবে। বিক্রয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকে অগ্রক্রয় মোকদ্দমা দায়ের করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের জন্য বার্ষিক শতকরা আট টাকা হারে সরল সুদে বিক্রয় দলিলে উল্লেখিত টাকার ওপর যত টাকা আসে, সে পরিমাণ টাকা আদালতে জমা দিতে হবে।
[post_ads_2]
আবেদন এবং উক্ত নির্ধারিত টাকা জমা দেয়ার পর আদালত প্রতিপক্ষকে নোটিশ দেবেন এবং ক্রেতাসহ শরিকদের হাজির হতে বলবেন। এছাড়া ক্রেতার খাজনা এবং অন্যান্য যত টাকা খরচ হয়েছে, তা জানাতে ক্রেতাকে নির্দেশ দেবেন। আদালত এর পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীকে আরও অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমাদানের নির্দেশ দিতে পারেন। 
সব কিছু হয়ে যাওয়ার পর আদালত সন্তুষ্ট হলে এবং শুনানি শেষে আবেদনকারীকে জমি কেনার অধিকার দিতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জমা দেয়া টাকা থেকে ক্রেতাকে তার পাওনা টাকা পরিশোধ করতে আদেশ দেবেন। যার আবেদন মঞ্জুর করা হলো তার বরাবর ৬০ দিনের মধ্যে বিক্রয় দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন। তবে এ রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো কর, ডিউটি বা ফিস দিতে হবে না। ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দিতে ব্যর্থ হলে এর পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আদালত সাফ কবলা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেবেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে আইনে। 

অকৃষি জমির ক্ষেত্রেঃ

যেসব জমি কৃষিজমি নয়, অর্থাৎ বসতভিটা, আবাসিক এলাকা, শিল্পভিত্তিক জমি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহ-শরিকদের অগ্রক্রয়ের অধিকার আছে। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনে ১৯৪৯-এর ২৪ ধারা অনুসারে, ক্রয়সূত্রে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে সহ-শরিকেরাও অকৃষিজমিতে অগ্রক্রয়ের অধিকার ফলাতে পারবে। এখানেও কিছু শর্ত পালন করতে হয়। যেমন জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ২৩ ধারামতে নোটিশ দেয়ার নিয়ম আছে। এ নোটিস পাওয়ার কিংবা জমি বিক্রয়ের খবর জানার পর থেকে চার মাসের মধ্যে অগ্রক্রয় মামলা করতে হবে। এর সঙ্গে বিক্রয় দলিলে উল্লেখিত টাকার সঙ্গে শতকরা ৫ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিতে হবে। 

তবে এমন হতে পারে যে ওই জমিতে ক্রেতা কোনো কাজ  বা দালানকোঠা তৈরি করছে বা করেছে, সে ক্ষেত্রে আদালত এর ওপর ভিত্তি করে একটি ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আদালত সময়সীমা বেঁধে দেবেন। 
পৌর এলাকার ভেতর যে কোনো জমি সব সময় অকৃষিজমি হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারায় মামলা করা যাবে না। 

এছাড়া আমরা যদি মুসলিম আইনের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাব  কোনো জমিতে উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক ছাড়াও অন্য সহ-শরিকরা অগ্রক্রয় মামলা করতে পারবে। মুসলিম আইনে তিন ধরনের লোক এই অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তারা হলেন শফিই শরিক, শফিই খালিত, শফিই জার। প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিকদেরই মামলা করার অধিকার আছে। কিন্তু মুসলিম আইন অনুযায়ী, সব সহ-শরিকই মোকদ্দমা করতে পারবে। একে ‘শুফা’ অধিকারের মামলা বলা হয়। তবে হেবাকৃত সম্পত্তি, উইলকৃত সম্পত্তি, দেবোত্তর বা ওয়াকফকৃত জমি, খাই খালাসি বন্ধকের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে, আপসমূলে ডিক্রিপ্রাপ্ত জমি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় চলে না। তবে সম্পত্তি যদি রক্ত সম্পর্কীয় ছাড়া অন্য কারও বরাবর হেবা করা হয় তাহলে ঐ সম্পত্তির জন্যও অগ্রক্রয়ের মামলা করা যাবে। এছাড়া  যাদের ৬০ বিঘা জমি আছে, তারাও অগ্রক্রয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ৬০ বিঘার কম আছে, কিন্তু ৬০ বিঘা থেকে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু জমির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় প্রয়োগ করা যাবে।

  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে ঢাকা জজ কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

إرسال تعليق