কিছুদিন আগেও উটকো ঝামেলার ভয়ে মানুষ সহজে আদালতের দ্বারস্থ হতো না। তবে ইদানীং আদালত অনেকটাই মানুষের আস্থার জায়গা করে নিয়েছে। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলেই ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির এবং ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কোনো ঝামেলা হলেই দেখা যায় আদালতের দ্বারস্থ হতে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেকেই মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আবার অনেকে কাযির্সদ্ধির জন্য আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন।মিথ্যা স্বাক্ষ্য বা মিথ্যা মামলা করলে আইন অনুযায়ী কি শাস্তির বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক যদি বুঝতে পারেন মামলায় সাক্ষী মিথ্যা কথা বলছে বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, তাহলে তিনি আইনানুসারে মিথ্যা সাক্ষীর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
[post_ads]
সাক্ষ্য গ্রহণের আগে প্রত্যেক সাক্ষীকে শপথ আইনের ৫ ধারা অনুসারে সত্য বলার হলফ পাঠ করতে হয়। এই হলফ করার পর হলফকারী সত্যকে সত্য হিসাবে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে তুলে ধরতে বাধ্য।
যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসে তার জন্য আইনে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। বাংলাদেশে অতি সুপরিচিত আইন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০। এই আইনের সাথে সবাই কম বেশি পরিচিত। এই আইনে মিথ্যা মামলার শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এই আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, “ যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন”।
আমাদের আরেকটি সুপরিচিত আইন হলো যৌতুক নিরোধ আইন। ২০১৮ সালে নতুন করে যৌতুক নিরোধ আইন প্রনয়ন করা হয়েছে। এই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করিবার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এছাড়া মিথ্যা মামলা সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধি এবং দণ্ডবিধিতে শাস্তির বিধান রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামালার শাস্তির বিধান রয়ছে। ২৫০ ধারা অনুযায়ী, “ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামীকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানীমূলক তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন”।
[post_ads_2]
দণ্ডবিধির ২০৯ ধারা মতে, “মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড সহ অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবে”। আবার ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তি বলা হয়েছে, “যদি কোন ব্যক্তি অন্যকোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মোকদ্দমা দায়ের করেন তবে মামলা দায়ের কারী দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে”। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্য দান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে।
দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি কোন বিচার বিভাগীয় মোকদ্দমায় কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করে তাহলে সেই ব্যক্তির যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ড-যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে- এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে এবং অন্য কোন মামলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান কারীর মৃত্যুদন্ডেরও বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুযায়ী, “ যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেন বা উদ্ভাবন করেন যার উপর ভিত্তি করে নির্দোষ কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে, যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া যাবে”।
মিথ্যা মামলা দায়ের ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ তেমনি ধর্মীয় আইনেও এটি মারাত্মক অপরাধ। একটি মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা স্বাক্ষ্য দ্বারা একটি নিষ্পাপ ব্যক্তির জীবনের সাথে সাথে একটি পুরো পরিবারেরও কিন্তু মৃত্যু ঘটে। কাজেই আমাদের সকলের উচিত মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকা।
- [accordion]
- লেখক সম্পর্কে জানুন
- পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত আছেন।
- ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
- আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ]
- আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
- সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
- আমাদের কথা
- লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।