Search Suggest

মামলা করার পর সেই মামলা প্রত্যাহার করা যায় কিনা


মামলা প্রত্যাহার অর্থ হচ্ছে মামলা উঠিয়ে নেয়া। একটি মামলা থানা বা আদালতে দায়ের করার পর পরবর্তীতে সেই মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া যায়। একটি মামলা কখন ও কিভাবে প্রত্যাহার করা যায় সে সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে বিভিন্ন মামলার শ্রেণী বিন্যাস সম্পর্কে।আজকে আমরা আলোচনা করবো কখন কিভাবে একটি মামলা প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং কখন পারবেন না। 

মামলা সাধারণত দুই ধরণের হয়। একটি হচ্ছে দেওয়ানী মামলা এবং অপরটি হলো ফৌজদারি মামলা। অধিকার আদায়ের জন্য যে সব মামলা করা হয়ে থাকে সেগুলোকে দেওয়ানী মামলা বলা হয় এবং অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যে মামলা করা হয় সেই মামলাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়।

ফৌজদারি মামলা আবার দুই ধরনের হয়ে থাকেন – একটি হচ্ছে complaint register যেটিকে আমরা শর্ট ফর্মে সি. আর. মামলা বলে থাকি এবং আরেকটি হচ্ছে general register যেটিকে আমরা শর্ট ফর্মে জি. আর. মামলা বলে থাকি। জিআর মামলা  থানায় দায়ের করা হয়। আর সিআর মামলা দায়ের করতে হয় ফৌজদারি আদালতে।
[post_ads]
জিআর মামলায় বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর বা (পিপি)। আর সিআর মামলা এবং দেওয়ানী মামলায় যিনি মামলা দায়ের করেন তাকেই ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।

উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতাসহ বিভিন্ন কারণে একটি মামলা প্রত্যাহার করার প্রয়োজন পড়ে। এবার আমরা জানবো কিভাবে একটি মামলা প্রত্যাহার করা যায়।

কোন জি. আর মামলা প্রত্যাহারের প্রয়োজন হলে পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। আর সিআর মামলায় অভিযোগকারী বা বাদী তার নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা মোতাবেক মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন। মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলে মামলার বাদীকে আদালতে হাজির থেকে জবানবন্দি দিতে হয়। তিনি কেন মামলা প্রত্যাহার করতে চান এবং স্বেচ্ছায় নাকি কারো প্ররোচনায় মামলা প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো আদালতকে নিশ্চিত হতে হয়। এরপর আদালত সন্তুষ্ট হয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করলে ঐ মামলার আসামী ক্ষেত্র বিশেষে অব্যাহতি বা খালাস পাবেন।

জিআর মামলা যেহেতু পিপি আবেদন করার মাধ্যমে প্রত্যাহার করিয়ে নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে এজাহারকারী বা ভুক্তভোগী যদি মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক তাদের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তিনি  ক্ষেত্র বিশেষে দায়রা জজ আদালত কিংবা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করে প্রতিকার চাইতে পারেন।
এবার আমরা জানবো একটি দেওয়ানি মামলা কিভাবে প্রত্যাহার করা যায় সে ব্যাপারে।
[post_ads_2]
দেওয়ানি কার্যবিধির Order 23 Rule 1 অনুসারে, দেওয়ানি মামলা হওয়ার পর যে কোনো সময়ে বাদী সব বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। যে ক্ষেত্রে আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মোকদ্দমাটি ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং মামলার বিষয়বস্তুর জন্য কিংবা কোনো দাবির অংশের জন্য নতুনভাবে মোকদ্দমা করার জন্য বাদীকে অনুমতি দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত উপযুক্ত শর্তে বাদীকে তার মোকদ্দমা প্রত্যাহার করার অথবা তার আংশিক দাবি পরিত্যাগ করার অনুমতি দিতে পারবেন এবং ওই মোকদ্দমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বা ওইরকম আংশিক দাবি সম্পর্কে পুনরায় মোকদ্দমা করার অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।

আদালতের উল্লিখিত অনুমতি ছাড়া যে ক্ষেত্রে বাদী মোকদ্দমা প্রত্যাহার করেন বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে বাদী আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোকদ্দমার খরচার জন্য দায়ী হবেন এবং ওই বিষয়বস্তু বা আংশিক দাবি সম্পর্কে নতুনভাবে কোনো মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

তবে একটি মামলায় যদি কয়েকজন বাদী থাকেন এবং তাদের মধ্যে যদি একজন বাদী মামলা প্রত্যাহার করতে চান, তাহলে সকল বাদীর অনুমতি নিতে হবে। সকল বাদীর সম্মতি না থাকলে আদালত একক কোন বাদীকে মোকদ্দমা প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে পারেন না। দেওয়ানী মামলায়ও বাদীকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হয়। এবং জবানবন্দি দিযে বলতে হয় তিনি কি কারণে মামলা প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন এবং তিনি স্বেচ্ছায় মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

إرسال تعليق