Search Suggest

দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর সময় লাগে কেন?

সমন জারী, বিবাদী কর্তৃক লিখিত জবাব দাখিল, ইস্যু গঠন, উদঘাটন ও পরিদর্শন, তারপর যুক্তিতর্ক শুনানীর জন্য একটা তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন একটা দেওয়ানী মামলা বিশ ত্রিশ এমনকি পঞ্চাশ বছর ধরে চলারও বহু নজির রয়েছে। কিন্তু একটা মামলা কেন এত বছর ধরে চলে সে ব্যাপারে অনেকেই হয়তো জানেন না। আজকে আমরা জানবো কেন একটা দেওয়ানী মামলা বছরের পর বছর ধরে চললেও সহজে নিষ্পত্তি হয় না। 


একটা দেওয়ানী মামলা দায়ের করার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও স্তরের মাধ্যমে সামনে এগোতে থাকে। দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি হতে দেরী হওয়ার কারণ জানতে হলে আগে দেওয়ানী মামলার বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে জানতে হবে।

 সমন জারী
একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ হলো  সমন জারী। এই ধাপটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মামলার সমন যথারীতি জারী না হলে মামলার কার্যক্রম শুরুই হবে না। মামলার যে দীর্ঘসুত্রিতার কথা শোনা যায় সমন জারী না হওয়া তার অন্যতম কারণ। সমন মানে হলো যার বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো তার বা তাদেরকে নোটশের মাধ্যমে ঐ মামলা সম্পর্কে অবগত করা।

বিবাদী কর্তৃক লিখিত জবাব দাখিল
বিবাদীর প্রতি যথারীতি সমন জারী হলে বিবাদী মামলা হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করবেন।

প্রথম শুনানীতেই মামলা নিষ্পত্তি
প্রথম শুনানীর তারিখে আদালত দেখেন যে, মামলার পক্ষদের মধ্যে কোন বিরোধীয় বিষয় নেই তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি করবেন। এক্ষেত্রে মামলা মূলতবি করার কোন সুযোগ নেই।

ইস্যু গঠন
এর পরের ধাপ হলো ইস্যু গঠন। যেসব বিরোধীয় বিষয়ের উপর মামলা নিষ্পত্তি হবে সেসব বিষয় বস্ত নিয়ে ইস্যু গঠন করা হয়।

উদঘাটন ও পরিদর্শন
ইস্যু গঠনের পর বাদী বা বিবাদী আদালতের অনুমতি নিয়ে অপর পক্ষকে লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে একটি পক্ষকে একবারই লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন।

৩০ ধারার তদ্বির
এই পর্যায়ে নির্ধারিত শর্ত  এবং সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে, আদালত যে কোনও সময় নিজ উদ্যোগে বা কোনও পক্ষের আবেদনক্রমে- কোন প্রশ্নাবলী দাখিল বা প্রশ্নাবলীর উত্তর, তথ্য বা ঘটনার গ্রহনযোগ্যতা এবং কোন দলিলের যা স্বাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন দলিল বা অন্যান্য বিষয় উদঘাটন, পরিদর্শন, উপস্থাপন, আটক এবং ফেরত সংক্রান্ত যেকোন আদেশ আদালত যথাপোযুক্ত মনে করলে দিতে পারেন।

এর পরের স্তর হলো চূড়ান্ত শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করা

এর পর  চূড়ান্ত শুনানী হবে
এই পর্যায়ে এসে বিচারক বাদী ও বিবাদীর জবানবন্দী, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ করবেন।

তারপর যুক্তিতর্ক শুনানীর জন্য একটা তারিখ নির্ধারণ করা হবে। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন এবং উক্ত তারিখে রায় ঘোষণা করবেন। এর পরে ডিক্রি প্রদান করবেন।
মোটামুটি একটি দেওয়ানী মামলা ১২ থেকে ১৩ টি স্তরের মাধ্যমে শেষ হয়। একটা স্তর হতে আরেকটা স্তরে যেতে যদি কমপক্ষে ২ মাস সময় লাগে তাহলেও কিন্তু একটা মামলা শেষ হতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগবে। আবারও  বলছি এটা কিন্তু খুব সাধারণ হিসাব বাস্তবিক পক্ষে যা অসম্ভব। এর পর যার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলো তিনি জেলা জজে আপীল করবেন এবং এই আপীল নিষ্পত্তি হতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগবে। এরপর জেলা জজ আদালতে উক্ত আপীলে যে পক্ষ হারবেন সেই পক্ষ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন করবেন যেখানে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগবে। এরপর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে যে পক্ষ হারবেন সে পক্ষ মহামান্য আপীল বিভাগে আপীল করবেন। সেখানেও ধরুন কমপক্ষে ৩ বছরের মত সময় লাগবে। তাহলে দাড়ালো একটা দেওয়ানী মামলা চূড়ান্তভাবে  নিষ্পত্তি হতে কমপক্ষে ১০-১২ বছর লেগেই যায়।

কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। মামলা চলতে চলতে দেখা গেল আদালত এমন একটা আদেশ দিলেন যার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে এক পক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন করলেন। সেখানে ঐ রিভিশন  মামলা টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকলো। আর নিম্ন আদালতে মুল মামলাটির কার্যক্রম বছরের পর বছর স্থগিত থাকলো।

আবার উভয় পক্ষই সময়ের আবেদন করবেন, স্বাক্ষী আনতে দেরি করবেন ইত্যাদি কারণে মামলা নিম্ন আদালতেই কয়েক বছর ঝুলে থাকে।  তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় সমন জারি না হওয়ার কারণে বছরের পর বছর ধরে মামলা ঝুলে থাকে শুরুই হয় না। সার্বিক কারণে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি হতে এত বেশি দেরি হয়। 

  • [accordion]
    • লেখক সম্পর্কে জানুন
      • পোস্টটি লিখেছেন- [ মোঃ আজাদুর রহমান ##pencil##] তিনি লিগ্যাল ভয়েস ব্লগের এডমিন ও সম্পাদক। পেশাগত জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত আছেন।
    • ফ্রি আইনি পরামর্শ পাবেন যেভাবে
      • আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠনের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা শহরে বসবাস করেন তারা কোন আইনি জটিলতায় পড়লে খুব সহজেই একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তারা কোন আইন সমস্যায় পড়লে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসের কারণে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ করা দুরুহ হয়ে পড়ে। ফলে সমস্যা দিন দিন জটিল হতে থাকে। সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই সঠিক পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল করে তোলেন। ফলে সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন পথ তো পানই না উল্টো মানসিক ও শারিরীকভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের কথা মাথায় রেখে লিগ্যাল ভয়েস কর্তৃপক্ষ প্রশ্নোত্তর বিভাগ চালু করেছে। আপনি খুব সহজেই আমাদেরকে আপনার আইনি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। পাবেন আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের সঠিক পথ। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে যুক্ত হতে [ এখানে ক্লিক করুন। ] 
    • আপনিও লিখুন আমাদের ব্লগে!
      • সুপ্রিয় লিখিয়ে পাঠক! আপনি জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবেন যে, আইন সচেতন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। চাইলে আপনিও হতে পারেন এই গৌরবের একজন গর্বিত অংশীদার। আমাদের ব্লগে নিবন্ধন করে আপনিও হতে পারেন আমাদের সম্মানিত লেখক। লিখতে পারেন আইন-আদালত, পরিবেশ, ইসলামী আইন যেমন কোরআন, হাদিসের আইনগত বিষয়, প্রাকৃতিক আইন, বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি, অন্যায়, দূর্নীতি, হয়রানী, ইভটিজিং, বেআইনী ফতোয়া, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিসহ যাবতীয় আইনগত বিষয়াবলী নিয়ে। আমাদের ব্লগের সদস্য হোন আর হারিয়ে যান জ্ঞান বিকাশের এক উন্মুক্ত দুনিয়ায়!
    • আমাদের কথা
      • লিগ্যাল ভয়েস হলো দেশের  সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র আইন সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজের মানুষ সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনভাবে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনগত জটিলতায় পড়ে জীবন নষ্ট করে ফেলছে। অনেক সময় আইন না জানার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটু আইন জানলে হয়তো এসব ভোগান্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা যেত। আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো আইন না জানা কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ কোন অপরাধ করে যদি বলে আমি আইনটি জানতাম না। জানলে এই অপরাধ টি করতাম না। আইনে এই অজুহাতের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কাজেই আইন জানা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্পও নেই। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের বিভিন্ন আইনী জটিলতায় পড়তে হয়। তাই আইন কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। আইন জানা আমাদের জন্য এমন অপরিহার্য্য বিষয় হলেও আইন জানার জন্য আমাদের দেশে ভাল কোন প্ল্যাট ফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বা ল কলেজ গুলোর বিষয় আলাদা। তাই সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় টুকিটাকি আইন কানুন পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে লিগ্যাল ভয়েসের যাত্রা শুরু। আইন সচেতন সোনার বাংলা গঠন করাই লিগ্যাল ভয়েসের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে লিগ্যাল ভয়েস সাধারণ মানুষের আইন শেখার পিপাসা নিবারণ করে থাকে। এ ছাড়া লিগ্যাল ভয়েস যে কোন ধরনের আইনগত সমস্যায় বিনা খরচে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকল পাঠককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন